ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ ভাদ্র ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অফুরন্ত ভালবাসা


প্রকাশ: ৩১ মে, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


অফুরন্ত ভালবাসা

   

শাহীন আলম : চাকরি আমার প্রশাসন ক্যাডারে, প্রায় সময় বাড়িতে বিভিন্ন কাজে যেতে হয়। কিন্তু এবার গেলাম ঈদের ছুটি কাটাতে। যত বার বাড়িতে যাই শিফার জন্য এক গাদা গোলাপ ও শিউলি ফুল নিয়ে যাই। নাম না জানায় তার ডাক নাম দিলাম 'শিফা'। তার প্রতি আমার ভালবাসা ছিল সবার চেয়ে আলাদা। পাঁচ বছর পূর্বের কথা, তিন মাইল দূরত্বে ছিল খালার বাড়ি। দিনটি ছিল শুক্রবার কোন একটা কাজে খালার বাড়িতে গেলাম। 

বাড়িতে প্রবেশ করার পূর্বে হঠাৎ লাবণ্যময় এক মেয়ে চোখের পলকে পড়ল। কি অপরুপ চেহারা, হরিণের চোখের ন্যায় চোখ, খোলা চুলগুলো বাতাশে উড়তে লাগল, যেন আকাশে রংধনু ভেসে বেড়াচ্ছে। আর তার লাজুক চেহারা একটু দেখে প্রেমে পড়ে গেলাম। তিনি একটা মুচকি হাসি দিয়ে জায়গাটা প্রস্থান করল। যেহেতু খালার পাশে তার বাড়ি  তাই মাঝে মধ্যে তাকে এক পলক দেখার শখ হয়তো। কখন যেন সেই শখটা ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা পরিণত হয়ে গেল।

এইভাবে দিন থেকে মাস শুরু হয়ে এক বছর অতিক্রম হয়ে গেল। এবার নিজের মন অসাধ্যকে সাধনা করতে চাই, তাই প্রপোজ করার মনোভাব পোষণ করলাম। আবার বিকল্প পদ্ধতি পাওয়া আশায় চিন্তিত হয়ে  রাস্তার পাশে গুটি গুটি পা দিচ্ছি এমন সময় চারপাশে অন্ধকার আকাশে মেঘের গর্জন হচ্ছে আর টিপ টিপ বৃষ্টি নামিতেছে, হঠাৎ  পিছন থেকে এক রূপসীর কন্ঠ ভেসে আসছে। 
এই মামা যাবেন? 
কই যাবেন? 
ঝুরিপুর, হ্যাঁ আসুন। 

পিছনে ফিরে তার অপরুপ চেহারাটা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে কখন যে নিজে ভিজে গেলাম। সেইদিন আর প্রপোজ করা হলো না। বাড়িতে যাওয়ার পর মা একটু বকাবকি করল। সপ্তাহে খানেক পর তার সাথে আবার দেখা হলে ঝুরিপুর রাস্তায়।  ঝুরিপুর রাস্তার দুই পাশে ছিল নদী আর বিল। তার সঙ্গে ছিল দুই লাবন্য তনয়া। তখন  নিজে সংকল্প  করলাম, এবার তাকে আমার মনের বাসনা বলতে হবে। তার সামনে যেতে না যেতে দেখা হয়ে গেল খালুর সাথে, আজকেও আর হলো না। পিছন দিক থেকে তাকিয়ে হাঁটছিলাম, হঠাৎ ডুবে উঠলাম নদীর মধ্যে হতে। যাক এবার আর মায়ের বকাবকি শুনি নাই, কারণ মা বাড়িতে ছিল না। তারপর কয়েক সপ্তাহ তার সাথে দেখা হয়নি কারণ তার কলেজ নাকি বন্ধ ছিল, কিন্তু আমি প্রতিদিন ছাতা নিয়ে দাড়িয়ে থাকতাম কলা স্টেশনে। কখন সেই আসবে বৃষ্টি হবে তাকে একটু সাহায্য করিব, কিন্তু সেই সুযোগটা এইভাবে আসবে কে জানে। সেইদিন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে সবাই এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছে এমন সময় পূর্ব দিক থেকে তারা দুইজন এক ছাতা নিচ দিয়ে আসতে আসতে স্টেশন এসে দাঁড়াল। যে মেয়েটির ছাতা আছে সে শিফাকে রেখে উত্তর দিকে চলে গেল। স্টেশনে আশে পাশে বাস ছাড়া তিন চাকার যানবাহন দেখা যাচ্ছে না। 

তবুও সেই একটু উঁকি দিয়ে এদিক ওদিক থাকাল, গাড়ি না দেখে একপাশে দাড়িয়ে কি যেন ভাবছে। আশে পাশে তেমন লোকজনের ভিড় নাই, আমি সাহস করে তার দিকে এগিয়ে গেলাম। সেই আমাকে দেখার পর একটু লজ্জা পেল মনে হয়, তবুও বললাম আসুন আমিও ঝুরিপুর দিকে যাবো। মন চাইলে আসতে পারেন, দেখি একটা হাসি দিয়ে ছাতা নিচে আসল। এবার দুইজন চুপচাপ করে হাঁটতে লাগলাম, হঠাৎ সেইদিক থেকে বললো কেমন আছেন? কিন্তু আমার মুখ দিয়ে শব্দ বাহির হচ্ছে না। কেন জানিনা এমন হলো তবুও কিছুটা বললাম। কিন্তু নামটা জিজ্ঞেস করার সাহস আর হলো না। মুখ দিয়ে ভালবাসা কথাটি দুরের কথা বরং তার সামনে 'ভাল' শব্দটিও আর আসবে না। তার সামনে গেলে আমি শব্দ চয়ন হারিয়ে ফেলি, কেন এমন হয়। তাই মনোবল স্থির করলাম এবার শিফাকে একটা চিরকুট লিখবো। কলম ও ডাইরিটা নিয়ে বসে পড়লাম টেবিলে, কয়েক লাইন লিখতে না লিখতে মোবাইলে একটা মেসেজ আসল। খুলে দেখলাম,ঝুরিপুরে ট্রাক সংঘর্ষে ২জন নিহত। দৌড়ে খালার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। গিয়ে দেখি শিফার বাড়িতে সবাই কান্না করছে, মনে মনে ভাবলাম হয়তো বৃদ্ধ লোকটি মারা গেছে। হঠাৎ খালাত বোন বলছে ঐ বাড়ির মেয়েটা কলেজ থেকে আসার সময় দূর্ঘটনায় মারা যাই।  

হঠাৎ মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়ল, এইটা কি হয়ে গেল। সেইদিন আবেগে চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। আজ চার বছর অতিক্রম হয়ে গেল তবুও অনেক ভালবাসি। সেই গোলাপ ও শিউলি ফুল নিয়ে তার কবরের পাশে দাড়িয়ে কথাগুলো ভাবছিলাম, এমন সময় চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা অশ্রু পড়ল। হঠাৎ মনে হলো কে যেন ডাকছে।  তারপর খালি পায়ে অজানা পথে হাঁটতে শুরু করলাম, ভুলে জুতা গুলো শিফা কবরের পাশে রেখে আসলাম।

কাল্পনিক কাহিনী 
লেখক: শাহীন আলম 
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়


   আরও সংবাদ