ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ ভাদ্র ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

যে কারণে বাবাকে খুন করেছিল তিন বোন


প্রকাশ: ২১ অগাস্ট, ২০১৯ ১৪:০০ অপরাহ্ন


যে কারণে বাবাকে খুন করেছিল তিন বোন

   

৫৭ বছর বয়সী মিখাইল খাচাতুরান ঘুমিয়ে ছিলেন নিজ বাড়িতে। ওই সময় তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে তারই তিন মেয়ে। ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই রাশিয়ার মস্কোর একটি ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে।

হত্যাকাণ্ডটি ওই সময় রাশিয়ার পাশাপাশি গোটা বিশ্বে আলোড়ন তোলে। অনেকেরই ধারণা ছিল না, ঠিক কি কারণে তিন বোন মিলে বাবাকে খুন করেছিলেন। শুরু হয় তদন্ত।ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে খুনের আসল কারণ।

হত্যাকাণ্ডের সময় তিন মেয়ে ক্রিস্টিনা, অ্যাঞ্জেলিনা এবং মারিয়ার বয়স ছিল যথাক্রমে ১৯, ১৮ ও ১৭ বছর। তিন বোন পুলিশকে জানায়, ঘটনার দিন তাদের বাবা তিন বোনকে একে একে তার ঘরে ডেকে নেন। এরপর ঘর পরিষ্কার না করার জন্য প্রচণ্ড বকাঝাকা করেন এবং তাদের মুখে পেপার গ্যাস স্প্রে করেন।

এই ঘটনার কিছুক্ষণ পর তিন বোন ঘুমন্ত বাবার ওপর ছুরি, হাতুড়ি এবং পেপার স্প্রে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনজন মিলে বাবার মাথা, ঘাড় ও বুকে কমপক্ষে ৩০টি আঘাত করে তাকে হত্যা করে। এরপরই তারা পুলিশকে খবর দেয়।

শুধুমাত্র বকাঝকা করার জন্য বাবাকে এত হিংস্র ভাবে কেউ হত্যা করতে পারে এটা মানতে পারছিলেন না তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এরপরই তারা তদন্তে নামেন। তদন্তে তারা পারিবারিক সহিংসতার দীর্ঘ ইতিহাস জানতে পারেন। তাদের তদন্তে ওঠে আসে টানা তিন বছর ধরে মেয়েদের বাবা কিভাবে তাদেরকে মারধোর করতেন, কয়েদিদের মতো আটকে রাখতেন এবং নিয়মিত তাদের ওপর যৌন অত্যাচার চালাতেন।

হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ জানার পর রাশিয়ার বেশিরভাগ মানুষই ওই তিন বোনের পক্ষ নেন। মামলাটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে রাশিয়ায়। মানবাধিকার কর্মীরা সোচ্চার হয়ে ওঠেন। তারা বলেন, তিন বোন অপরাধী নয়, তারা ঘটনার শিকার মাত্র। অত্যাচারী বাবার যৌন নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতেই তারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের মুক্তির জন্য ওই সময় অনলাইনে ৩ লাখের বেশি মানুষ স্বাক্ষর করে।

আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডটির মামলা খুব ধীরগতিতে চলছে। হত্যাকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত তিন বোনকে কারাগারে থাকতে হয় না। কিন্তু তারা কড়া নজরদাড়িতে থাকেন। তারা কোনও সাংবাদিক বা অন্য কারও সঙ্গে কথা বলতে পারেন না। মনোবিজ্ঞানীদের তত্ত্বাবধানে তিন বোনের চিকিৎসাও চলছে।

মামলাটি নিয়ে এখনও তর্ক-বিতর্ক চলছেই। আসামী পক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, তিন বোন দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এ কারণে তাদের মুক্তি দেওয়া হোক। তারা আশা করছেন, আত্মরক্ষা আইনে তিনবোন শিগগিরই মুক্তি পাবে।

সূত্র: বিবিসি


   আরও সংবাদ