ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ ভাদ্র ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ভিন্ন পরিবেশে শুরু হচ্ছে এবারের বাজেট অধিবেশন


প্রকাশ: ৯ জুন, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


ভিন্ন পরিবেশে শুরু হচ্ছে এবারের বাজেট অধিবেশন

   

স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেই বিধিনিষেধ মেনে এক ভিন্ন পরিবেশে শুরু হয়েছে এবারের বাজেট অধিবেশন।

আজ বুধবার (১০ জুন) বিকাল ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী'র সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের ৮ম অধিবেশন শুরু হয়।

এবারের অধিবেশনে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় বিশেষ ভাবে জোর দেয়া হয়েছে। এজন্য দর্শনার্থী এবং গণমাধ্যমকর্মীদের সংসদ ভবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং বয়স্ক সংসদ সদস্যদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিকালে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল।

করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনা করে বাজেট উত্থাপনের দিন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানোর রীতি থাকলেও এবার তা করা হচ্ছে না। এবারের বাজেট অধিবেশনে গণমাধ্যমকর্মীদের সংসদে না গিয়ে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে বাজেট অধিবেশনের সংবাদ সংগ্রহ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

বাজেট অধিবেশনে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সংসদ সচিবালয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-শারীরিকভাবে অসুস্থ ও বয়স্ক সংসদ সদস্যদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

রোস্টারভিত্তিক সংসদ সদস্যদের অধিবেশনে যোগ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

সংসদের অত্যাবশ্যকীয় প্রায় ৪০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়েছে। 

তাদের মধ্যে ৪৩ জন সংক্রমিত বলে শনাক্ত হয়েছেন। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। 

আর অন্যদের সংসদ অধিবেশন চলাকালে নিজেদের বাসায় কিংবা সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে সংসদ সদস্যরা গড়ে তিন দিন করে অধিবেশনে যোগ দেয়ার সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে একদিন তারা বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেবেন। কোনো কোনো সংসদ সদস্য তিন দিন অধিবেশনে যোগ দেয়ার সুযোগ পেলেও বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। 

অবশ্য বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা, মন্ত্রিসভার অত্যাবশ্যকীয় কয়েকজন সদস্য, সরকারি ও বিরোধী দলের হুইপরা এই শিডিউলের আওতায় বাইরে থাকবেন।

এদিকে বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০-২২ জন সংসদ সদস্যকে বাজেট অধিবেশনে অংশগ্রহণ না করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন নারী সংসদ সদস্যও রয়েছেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে বাজেট অধিবেশনে সংসদ সদস্যরা রোস্টারভিত্তিক যোগ দেবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। এর ভিত্তিতে সংসদের চিফ হুইপ, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও অন্যান্য হুইপ বসে এরই মধ্যে রোস্টার তৈরি করেছেন। রোস্টার অনুযায়ী বেশির ভাগ সংসদ সদস্য তিন দিন করে অধিবেশনে যোগ দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। একজন সদস্য পাচ্ছেন দুদিন অধিবেশনে যোগ দেয়ার সুযোগ। আবার মন্ত্রীসহ আবশ্যকীয় কিছু এমপি তিন দিনের বেশি বৈঠকে আসার সুযোগ পাচ্ছেন। 

এক্ষেত্রে কারো কারো জন্য অধিবেশনের সবগুলো কার্যদিবসে অংশগ্রহণের সুযোগ উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। বাজেট পাসের দিন ৩০ জুন প্রয়োজনীয়তার তাগিদে যতদূর সম্ভব মন্ত্রীদের বেশি উপস্থিতি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, অধিবেশন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কেবল কোরাম পূর্ণ হওয়ার (৬০ জন) ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতিদিনের উপস্থিতি সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ৯০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে সংসদ থেকে এ অধিবেশনের একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়েছে। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী অধিবেশনের মেয়াদ হবে ১২ কার্যদিবস। আগামী ৮ বা ৯ জুলাই অধিবেশন শেষ হবে। অধিবেশনে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পেশ হবে ১১ জুন। আর বাজেট পাস হবে ৩০ জুন। সম্পূরক ও মূল বাজেট নিয়ে ২০-২২ ঘণ্টা আলোচনা হবে বলে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করবেন। বাজেট পেশের পর ১২ ও ১৩ জুন সাপ্তাহিক ছুটিতে অধিবেশনের মুলতবি থাকবে। ১৪ ও ১৫ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা ও সম্পূরক বাজেট পাস করা হতে পারে। এর পরদিন ১৬ জুন প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের সাধারণ বাজেটের ওপর আলোচনা শুরু হবে। ২৯ জুন সোমবার বাজেটের ওপর সমাপনী আলোচনা হবে। 

এদিনই পাস হবে অর্থ বিল। ৩০ জুন মূল বাজেট ও নির্দিষ্টকরণ বিল পাস করা হবে। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, অধিবেশন শুরু ও বাজেট পেশের দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদের বৈঠক শুরু করে একটানা বেলা দেড়টা পর্যন্ত চালানোর কথা রয়েছে।

গত ১৮ এপ্রিল করোনাভাইরাসের মহামারির দুর্যোগপূর্ণ সময়েও সাংবিধানিক নিয়ম রক্ষার্থে জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসে। তবে একাদশ সংসদের সপ্তম অধিবেশনের মেয়াদ ছিল মাত্র দেড় ঘণ্টা। এটি ছিল দেশের সংসদীয় ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত অধিবেশন।


   আরও সংবাদ