ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ ভাদ্র ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চৌগাছায় ছাত্র কালেকশনে বাড়ি বাড়ি শিক্ষকরা ক‌রোনা আত‌ঙ্কে শিক্ষার্থীরা


প্রকাশ: ১১ জুন, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


চৌগাছায় ছাত্র কালেকশনে বাড়ি বাড়ি শিক্ষকরা ক‌রোনা আত‌ঙ্কে শিক্ষার্থীরা

   

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি : চল‌তি সেশ‌নে  এইচএসসিতে এখনও ভর্তি শুরু হয়নি। অথচ করোনার মধ্যেও চলছে চৌগাছার কলেজগুলোর ছাত্র কা‌লেকশ‌নের প্রতিযোগিতা। নিজের কলেজে ভর্তি করানোর জন্য ছয় সাতজন শিক্ষক দল বেঁধে ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে বা‌ড়ি‌তে যাচ্ছেন। যারফ‌লে করোনা নিয়ে ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকগন চরম আতঙ্কের ম‌ধ্যে দিন কাটা‌চ্ছে । তারা দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান।

শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, এ বছর  উপজেলার ৬৭টি স্কুল  ২১ টি মাদ্রাসা থে‌কে মোট তিন হাজার পাঁচশত চুয়াল্লিশ জন ছাত্রছাত্রী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ২৯৫৬ ছাত্র-ছাত্রী পাশ করেছে। আর ১৫৮জন ছাত্র-ছাত্রী এ+ পেয়েছে। 

এ উপজেলায় মোট ১১ টি কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে এক সরকারী, ৪ ডিগ্রী ও অনার্স পর্যায়ের কলেজ আর বাকি ৬টি এইচএসসি পর্যায়ের কলেজ। এসব কলেজে  বিজ্ঞান, বানিজ্য ও মানবিক শাখা মিলে দুই হাজারেরও বেশি আসন রয়েছে।

ভর্তির জন্য এসব কলেজের শিক্ষকরা নিয়মিত দল বেঁধে ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে যাচ্ছেন। তাদের এ ভাবে দল বেঁধে বাড়ি বাড়ি যাওয়ায়  করোনা নিয়ে অভিভাবকরা চরমভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। করোনার কারনে যারা অন্যের বাড়িতে পর্যন্ত যাচ্ছে না তাদের বাড়িতে এভাবে দলে দলে লোকজন আসায় তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। আবার কলেজের শিক্ষক হওয়ায় তারা এ বিষয়ে  কিছু বলতেও পারছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উপজেলার সরকারী কলেজের শিক্ষকরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে জি‌পিএ-৫ ও জি‌পিএ-৪ প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে যাচ্ছেন। তারা বই, উপবৃত্তি, কলেজের ফান্ড থেকে বৃত্তি, প্রাইভেট ফ্রি ও হোস্টেলে থাকা সহ নানা রকম প্রলোভন দেখাচ্ছেন। একই ভাবে প্রলোভন দেখাচ্ছেন অন্যান্য কলেজগুলো।

যার অধিকাংশই পরে আর পুরন করেনা বলে এসব কলেজের সাবেক ছাত্ররা অভিযোগ করেন। এবছর এ উপজেলায় আ‌রো ৪টি নতুন কলেজ এমপিওভুক্ত হয়েছে। 

এসব কলেজের শিক্ষকরা বলেন, সরকারী কলেজসহ প্রতিষ্ঠিত বড় বড় কলেজের শিক্ষকরা ছাত্র ভর্তিতে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। তাদের  চাপে আমাদের কলেজ বাঁচনোর তাগিদে ছাত্র ভর্তিতে বাড়ি বাড়ি যেতে হচ্ছে। তারা ভালো ছাত্র-ছাত্রীর প্রবেশপত্র সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। 

এসব কলেজে শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসএসসির প্রবেশ পত্র ও রেজিষ্ট্রেশন কার্ড নিয়ে আসছেন। আবেদনের সময় এরা নিজেরাই  নিজেদের কলেজ থেকে ভর্তি আবেদন করে দেন। 

ছাত্র ছাত্রীরা আবেদনপত্র পুরন করলে দশটা পর্যন্ত কলেজের নাম দিতে পারে কিন্তু তারা নিজেরা পুরন করার সময় শুধু তাদের কলেজের নামই দিচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে এ শিক্ষার্থীর আর বিকল্প কোন কলেজ হাতে থাকেনা বলে জানা গেছে।

রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আতিয়ার রহমান বলেন, এ বছর গ্রামের স্কুল থেকে এ গ্রেড পেয়ে আমার ছেলে পাশ করেছে। শুনেছি এখনও ভর্তির সময় হয়নি। কিন্তু আমার বাড়িতে কয়েকটি কলেজের চার পাঁচ জন করে শিক্ষক কয়েকবার এসেছেন। আমি তাদের কিছু বলতেও পারছিনে।

উজিরপুর গ্রামের সাকিবুল ইসলাম বলেন, আমি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাশ করেছি। আমি যশোরে ভর্তি হতে চাই। কিন্তু বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকরা এসে আমাকে আর আমার বাবাকে বার বার নানা ভাবে বোঝানোর চেষ্ঠা করছেন। বিষয়টা আমার জন্য চরম বিরক্তিকর।

পাতিবিলা গ্রামের আশাদুল ইসলাম বলেন আমি  এ বছর মাদ্রাসা থেকে পাশ করেছি। আমি মাদ্রাসায় পড়তে চাই কিন্তু বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকরা আমার বাড়িতে এসে আমাদের বার বার বলছে মাদ্রাসা পড়লে কোন চাকরি হবেনা। এ সময় মাদ্রাসা পড়ে কোন লাভ হবেনা তুমি বরং আমাদের কলেজে পড়ো।

জিসিবি অদর্শ কলেজে অধ্যক্ষ আবু জাফর বলেন, প্রতিষ্ঠিত কলেজগুলো যদি ছাত্র ভর্তির জন্য বাড়ি বাড়ি না যেতো তাহলে আমরা করোনার এ সময়ে বেরই হতাম না। কোন কোন যায়গায় বাধ্য হয়ে কলেজের সার্থে আমরা নিজেদের টাকায়  এসএসসির ট্রান্সক্রিপ্টের টাকা ও বই খাতা পর্যন্ত কিনে দিচ্ছি।

চৌগাছা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় কলেজের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ভালো ছাত্র ভর্তি করতে অনেকেই বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। তবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র কালেকশন করা ঠিকনা। তিনি বলেন, ছাত্র কালেকশনের একটা ভালো দিকও আছে। কালেকশন প্রতিযোগীতার কারনে উপজেলার অনেক গরিব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী খুবই অল্প খরচে লেখা পড়ার সুযোগ পাচ্ছে’।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম রফিকুজ্জামান বলেন, এ পরিস্থিতিতে তারা বিষয়টি মোটেও ঠিক করছেননা। সরকার যেখানে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার উপর জোর দিচ্ছেন। সেখানে দলে দলে এভাবে কারো বাড়িতে যাওয়াতো কোন ভাবেই ঠিক হচ্ছে না। আমি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।


   আরও সংবাদ