ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ ভাদ্র ১৪৩১, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫

গাধা কি আসলেই গাধা?


প্রকাশ: ১১ জুন, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


গাধা কি আসলেই গাধা?

   

বিএন নিউজ ডেস্ক : গাধা গৃহপালিত প্রাণী হলেও বর্তমানে অনেকে পোষ্য প্রাণী হিসেবে গাধা পালছেন। এটি খুব আজ্ঞাবহ কিন্তু ঘোড়ার মত যত্ন প্রত্যাশী নয়। ভারবহন নয় ভালো বন্ধু হিসেবে পশুপাখির ফার্মে গাধার চাহিদা বাড়ছে। 

আমাদের সমাজে কেউ কোনো কিছু ভুল করলেই আমরা অনাশয়ে তাকে গাধা বলে ফেলি। কিন্তু গাধা কি আসলেই গাধা! 

চলুন জেনে নেয়া যাক গাধা সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য.....

১. আমাদের সমাজে ভ্রান্ত ধারণা আছে গাধা একটা বোকা প্রাণী । কিন্তু প্রাণিবিজ্ঞানীরা একে বুদ্ধিমান ও স্মার্ট প্রাণী বলেই মনে করেন। মানুষের কণ্ঠের নির্দেশ বোঝে তারা ও পুরনো মনিব ও সঙ্গী সাথীকে ২৫ বছর পরেও চিনতে পারে বলে গাধা এমন রেকর্ডও আছে।

২. এদের ঘ্রাণশক্তি ও শ্রবণ শক্তি প্রবল। দূরের বিপদজনক গন্ধ তারা আগেই বুঝে ফেলে ও সামনে কিছুতেই এগোয় না। পা দিয়ে মাটিতে আঘাত করতে থাকে। এতে অনেক মনিব না বুঝে গাধাকে একগুঁয়ে প্রাণী মনে করেন।

৩. সামনে বড় বাঁধা থাকলে ভারবাহী গাধা আগেই নিজের গতিপথ বদলে নেয়।

৪. সে তার ওজনের দ্বিগুণেরও বেশি ওজন বইতে পারে। তার ভারসাম্য খুবই উন্নত। যত খারাপ পথ হোক সে তার মনিবকে কখনো নীচে ফেলে দেবে না, যা ঘোড়ার নেই 

৫. গাধার প্ৰকৃত ইংরেজি নাম ছিল Ass ও she-ass কিন্তু সেটা গালিতে বা ভালগার শব্দে পরিণত হওয়ায়, পরে dunkey বলে ইংরেজি তে ডাকা শুরু হয়।

৬. গাধাদের নিজস্ব চিন্তা ভাবনা আছে। নিজের ও মনিবের নিরাপত্তা সবার আগে চিন্তা করে সে।

৭. ভেড়া ও ছাগলের পাল পাহারা দেয়ার জন্য একটি গাধা যথেষ্ট। খুব মনোযোগ দিয়ে গাধা পাহারা দেয় ভেড়ার পাল।

৮. নেকড়ে বাঘ ও শেয়াল গাধাকে ভয় করে। তারা কোন ভেড়ার খোঁয়ারে ঢুকে পাহারায় গাধাকে দেখতে পেলে, দ্রুত সরে পড়ে।

৯. গাধা তার সঙ্গীনিকে খুব ভালোবাসে। গলা জড়িয়ে ঘুমায়, শরীর পরিস্কারও করে দেয় সারাক্ষণ।

১০. গাধা সামাজিক প্রাণী। গাধা একা থাকতে পারে না। কমপক্ষে একটি ছাগল বা শিশুর সাহচর্য পেলেও সে উৎফুল্ল থাকে।

১১. গাধা ৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। একই বয়সের ঘোড়ার চেয়ে গাধা শক্তিশালী।

১২. গাধার আদি বাসস্থান মরুভূমি। সেজন্য গরম আবহাওয়া পছন্দ তার। শরীরের চামড়া ঘোড়ার চেয়ে পাতলা ও পশম পানিরোধী নয়। তাই সে বৃষ্টিকে ভয় পায় ও ঠান্ডায় কাঁপে।

১৩. গাধা ও ঘোড়ার হাঁটার ভঙ্গি একই। কিন্তু মরুভূমির প্রাণী হওয়ায়, গাধা ঘোড়ার মতো দৌঁড়তে পারে না, এতে শক্তি বেশি ক্ষয় হবে বলে। 

১৪. তারা কখনো চমকায় না। জোরে আওয়াজ হলে কৌতূহলে দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়। অথচ জোরে আওয়াজ হলে ঘোড়া দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে।

১৫.মরুভূমি তে ঘাস কম থাকায় গাধা ঘাসের ৯৫% শরীরের কাজে লাগায়। তাই এদের গোবরে কোন সারবত্তা থাকে না।

১৬. যারা ঘোড়ায় চড়া শিখতে চান তাদের জন্য গাধা "ভাল শুরু" হতে পারে। সে কখনোই সওয়ারী কে ফেলে দেয় না।

১৭. সংকর প্রাণী উৎপাদনে গাধার জিন চমৎকার মানিয়ে নেয়। পশ্চিমে ছেলে গাধাকে জ্যাক ও গাধিকে জেনি বলা হয়। এর সাথে ঘোটকির সংকর প্রাণী হল মিউল ও জেব্রার সংকর হল জংকি। গাধীর সাথে ঘোড়ার সংকর হলো হিনী। হিনীর চেয়ে মিউল শক্তিশালী হয়। এরা সব অনুর্বর বা বন্ধ্যা হয়।

১৮. মিশরীয় সভ্যতা ও সিল্ক রোড নির্মাণে গাধার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গাধার পিঠে চড়েই পিরামিড ও ফারাওদের প্রাসাদ তৈরির সরঞ্জাম আসতো। তাই মিশরীয়দের দেয়াল চিত্রে গাধার উল্লেখযোগ্য ছবি আছে। প্রাচীন সিল্ক রোডে বেশিরভাগ সিল্ক বহন করতো গাধা।

১৯. সব প্রাণীর দুধের মধ্যে একমাত্র গাধার দুধই নন- এলার্জিক। যেসব শিশুদের পেটে সমস্যা থাকে তাদের জন্য এর দুধই সর্বোত্তম।

২০. চিনে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি গাধা আছে। ব্রিটেনে গাধা আমদানি করতে হলে তার (গাধার) পাসপোর্ট প্রয়োজন হয়।

এবার বুঝলেন তো আমাদের গালির উপাদান গাধা কিন্তু একদম গাধা নয়।


   আরও সংবাদ