ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ ভাদ্র ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

কোভিড-১৯ সংকটে টেকসই সাংস্কৃতিক কর্মপরিকল্পনা' শীর্ষক আইসেস্কো'রে কেএম খালিদ


প্রকাশ: ১৬ জুন, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


কোভিড-১৯ সংকটে টেকসই সাংস্কৃতিক কর্মপরিকল্পনা' শীর্ষক আইসেস্কো'রে কেএম খালিদ

   

স্টাফ রিপোর্টার : করোনা ভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারির প্রেক্ষিতে বিদ্যমান স্বাস্থ্য সংকট এবং সংস্কৃতি খাতে এর প্রভাব মোকাবেলায় 'কোভিড-১৯ সংকটের প্রেক্ষিতে টেকসই সাংস্কৃতিক কর্মপরিকল্পনা' শীর্ষক ওআইসি সদস্যভুক্ত দেশসমূহের সংগঠন 'ইসলামিক বিশ্ব শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা' (আইসিইএসসিও) এর আয়োজনে সদস্যভুক্ত দেশসমূহের সংস্কৃতি মন্ত্রীদের অংশগ্রহণে বিশেষ ভার্চুয়াল কনফারেন্সে যোগদান করেন বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

বুধবার (১৭ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর বেইলি রোডস্থ মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টের নিজ বাসভবন থেকে জনপ্রিয় অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন 'জুম' এর মাধ্যমে এ ভার্চুয়াল কনফারেন্সে যুক্ত হন।

আইসেস্কো নির্ধারিত তিন মিনিটের বক্তব্যের শুরুতে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারিকালীন সংস্কৃতি খাতে এর প্রভাব নিরসনকল্পে সদস্যভুক্ত দেশসমূহের সংস্কৃতি মন্ত্রীদের অংশগ্রহণে সময়োচিত বিশেষ ভার্চুয়াল সম্মেলন আয়োজনের জন্য আইসেস্কো'র উচ্চকিত প্রশংসা করেন এবং আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, নোভেল করোনাভাইরাস সারাবিশ্বের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতির বিভিন্ন সেক্টরে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা সংকট মোকাবেলা ও এর তাৎক্ষণিক প্রভাব নিরসনে ইতোমধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের শতকরা ৩.৭ ভাগের সমতুল্য প্রায় ১২.১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একগুচ্ছ (১৯টি) আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন যেখান থেকে বেশ কিছু সংখ্যক ক্ষতিগ্রস্ত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও প্রান্তিক শিল্পীদের উপকৃত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এসব প্রণোদনা প্যাকেজ ছাড়াও ইতোমধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তহবিল হতে ক্ষতিগ্রস্ত সাংস্কৃতিক সংঘ, প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পীদেরকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং ২ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা (৩.৪৮ লক্ষ মার্কিন ডলার) ব্যয়ে বই ক্রয় করা হয়েছে যা সংস্কৃতি খাতকে জোরদারকরণ ও পুনর্জাগরণে সহায়তা করবে।  

কে এম খালিদ বলেন, এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল সম্পদ আহরণ এবং সুবিন্যস্ত কর্মকাঠামো তৈরি করা যা এ সংকট বিশেষ করে সংস্কৃতি খাতে এর প্রভাব নিরসনে সহায়তা করবে। লাইভ স্ট্রিমিং পারফরম্যান্স এবং ডিজিটাল কালচারাল ট্যুরিজম এর মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলাসমূহ এ সংকটে টিকে থাকবে বলে প্রতিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। 

তিনি বলেন, ডিজিটাল কালচারাল ট্যুরিজমের প্রসারে প্রত্নতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগত স্থাপনা এবং জাদুঘরসমূহে ভার্চুয়াল পরিদর্শন চালুর চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম গুগল আর্ট এণ্ড কালচার ব্যবহার করে এসব স্থাপনা ও জাদুঘরসমূহের থ্রি-ডি ডকুমেন্টেশন তৈরি করা যাবে। 

এসব বাস্তবায়নে প্রথমত আমাদের প্রয়োজন সংস্কৃতি খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ; দ্বিতীয়ত নতুন প্রযুক্তি ও প্রযুক্তিগত চর্চা গ্রহণকে আমাদের স্বাগত জানানো ও সমর্থন করা। তৃতীয়ত ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি ও ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, সংস্কৃতি খাতকে টিকিয়ে রাখতে আমরা বিভিন্ন সাহিত্য ও শৈল্পিক সৃজনশীলতা ভিত্তিক কিছু প্রকল্প নেয়ার চিন্তাভাবনা করছি, সম্ভাব্য অংশীজনদের নিয়ে ডিজিটাল নেটওয়ার্কিং তৈরি এবং সামর্থ্য বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। 

ইউনেস্কো ও আইসেস্কো এক্ষেত্রে সামনে এগিয়ে এসে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করতে পারে। আমাদের প্রচেষ্টাকে একীভূতকরণের জন্য আমাদের উচিত আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংলাপের সূচনা করা। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ সংকট মোকাবেলা করার মাধ্যমে আমাদের সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল খাতকে পুনরুদ্ধারের এখনই উপযুক্ত সময়। 

সবশেষে প্রতিমন্ত্রী সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯)-এ মৃত্যুবরণকারীদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ মারাত্মক সংকট কাটিয়ে ওঠে কোভিড-১৯ মুক্ত বিশ্বে মিলিত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

উল্লেখ্য, গ্রিনিচ মান সময় আজ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা (বাংলাদেশ সময় আজ বিকাল ৩টা হতে সন্ধ্যা ৬টা) পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে  আইসেস্কো'র সদস্যভুক্ত ৫৪টি দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রীগণ অংশগ্রহণ করেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংস্কৃতি ও জ্ঞান উন্নয়ন মন্ত্রী মিসেস নাওরা আল কাবি এর সভাপতিত্বে তিন ঘন্টার এ বিশেষ ভার্চুয়াল কনফারেন্স পরিচালনা করেন আইসেস্কো এর মহাপরিচালক ড. সেলিম এম আলমালিক। কনফারেন্সের উদ্বোধনী অধিবেশনে আরো বক্তব্য রাখেন ওআইসি'র সেক্রেটারি জেনারেল ড. ইউসুফ বিন আহমদ আল ওথাইমিন United Nations Alliance of Civilizations (UNAOC) এর ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধি মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল মোরাটিনোস এবং ইউনেস্কো'র সংস্কৃতি বিষয়ক সহকারী মহাপরিচালক আর্নেস্টো অটোনে রেমিরেজ। 


   আরও সংবাদ