ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

করোনায় আক্রান্ত কয়েকটি দিন : মাইদুল ইসলাম


প্রকাশ: ১৮ জুন, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


করোনায় আক্রান্ত কয়েকটি দিন : মাইদুল ইসলাম

   

বিএন নিউজ ডেস্ক : করোনা ভাইরাসের প্রকপে কাপছে গোটা দুনিয়া। করোনা দেখিয়েছে মানুষ কতটা অসহায়। তার শক্তির কাছে লন্ড ভন্ড সবকিছু। সে ছাড়ছে না যুবা থেকে বয়স্ক কিংবা নারী থেকে শিশু কাউকে। যদিও এখন আশার বাণী শোনাচ্ছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। 

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়ার তথ্য অফিসার মাইদুল ইসলাম প্রধানের করোনা জয়ের গল্প-

পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো---
করোনা পরীক্ষা করার আগে আমার শরীরে অনেক জ্বর ছিল। আগের দুইরাত ঘুমাইনি। ৩১ মে পরীক্ষা করলাম, পরদিন করোনা পজিটিভ এলো। জ্বর অনেক ছিল। কেন যেন মনে হচ্ছিলো আমাকে হাসপাতালে যেতে হবে, ভর্তি হতে হবে।সে দিনই দিবাগত রাত দুইটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হলাম।


রাত কাটলো না ঘুমিয়েই। আত্মীয়-স্বজন কাউকে বলি নাই যে, আমি হাসপাতালে ভর্তি। ভেবেছিলাম সবাইকে কষ্ট দেবার কাজ কি। এমনিতেই ভালো হয়ে যাবো।

পরদিন দুপুর ১২ টার দিকে আমার প্রতি করোনার প্রথম আঘাত শুরু হলো। 
ছিলাম ওয়াশরুমে। হঠাৎ কিছুটা ঘাম শুরু হলো। মুহুর্তে মনে হচ্ছিলো আমি ওয়াশরুম থেকে বিছানা পর্যন্ত হয়তো আর মুভ করতে পারবো না। দ্রুত আমি উঠে দাঁড়ালাম। বিছানার কাছে গিয়ে বিছানায় পড়ে গেলাম। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। জেগে দেখি মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো আছে। পাশে একজন নার্স দাঁড়িয়ে। 

নার্স বললো ভয় নাই, আপনার সাথে কেউ আসেনি?  আমি বললাম, কেউ জানে না আমি এখানে। উনি বললেন, বাড়িতে ফোন করে লোকজন নিয়ে আসুন।আপনার পাশে সার্বক্ষণিক লোক থাকা লাগবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম সিরিয়াস কিছু কি হয়েছে আমার?  বললো অক্সিজেন লাগানো দেখছেন না। প্রতি ঘন্টায় যাচ্ছে ৪-৫ কেজি অক্সিজেন। 

বলা ভালো, আমার অক্সিজেন সাচুয়েশন এত কমে গিয়েছিল যে, তখন এই অক্সিজেন না হলে মারা যেতে মাত্র ৫ মিনিট সময় লাগতো। এরপর টানা ৪ দিন অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। খুললেই সাচুয়েশন একেবারে নিচে নেমে লো হয়ে আসে। সে যে কি কষ্টের একটা সময়, কাউকে বোঝানো যাবে না। শুধু মুখটা খুলে দ্রুত একটা ডিমের কিছু অংশ জোর করে খেয়ে নিতাম। 

সামান্য পানি খেতে মুখ খুললেও সাচুয়েশন নিচে নেমে যেত অনেক। কি একটা বিভিষীকাময় সময়গুলো। মনে হচ্ছিলো কঠিন সময়গুলো আর ফুরাবে না।শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি বুকে ব্যাথা যখন শুরু হলো তখন একবার ভাবলাম, এ যাত্রা আর ফেরা হবে না।

করোনার কাছে কত শক্তিশালী মানুষ বিদায় নিচ্ছে, আমিও তাদের একজন।কবরটা এলাকায় যাতে দেয় একবার এটা বলার কথা ভাবলাম। টানা ৫ দিন কোন উন্নতি নাই। আমি হাল ছেড়েই দিয়েছিলাম। 

ষষ্ঠ দিনে গিয়ে হঠাৎ আমার পালস অক্সিমিটারটা দেখলাম আমার পক্ষে কথা বলা শুরু করে দিল। মাস্ক পড়লে তখন ৯৭/৯৮ আর মাস্ক খুললে ৯২ তে গিয়ে আর নিচে নামছে না। আমি কি যে খুশি হলাম দেখে। ডাক্তারকে বললাম দেখেন ৯২ এর নিচে নামছে না। ডাক্তার বললো ৯২ কে ৯৬ এ নিতে হবে। কিছু ব্যায়াম দিল।সেগুলো ঠিকঠাক করে ৯৪/৯৫ নিয়ে গেলাম দ্রুতই।

সাচুয়েশন প্রবলেম যেদিন কমলো ঠিক সেদিন থেকেই শুরু হলো বমি ও লুজ মোশনের মতো বাজে অসুখ। ভয়াবহ ব্যাপার শুরু হলো। কিছুই খেতে পারি না, সাথে সাথেই বমি। এ এক অন্যরকম লড়াই শুরু হলো। একে তো কোন কিছুই খেতে পারি না। রুচি বলতে কিছুই নেই, তার উপর এত এত কঠিন সব সমস্যা।

ডাক্তাররা কিছু খুলেও বলে না। মুখের ভাবভঙ্গি দেখে ভেবে নেই কি হতে যাচ্ছে।যাইহোক, এরপর ইনজেকশন, এন্টিবায়োটিক সব বৃদ্ধি পেতে শুরু হলো। ধীরে ধীরে করোনাও তার শক্তি হারাতে থাকলো। এক সময় করোনা আমাকে রেহাই দিয়েই দিলো।

এক এক করে ১৩ দিন পর প্রথম টেস্টে নেগেটিভ এলো। বুঝলাম করোনা আর দেহে নাই। মনে তখন অনেক সাহস চলে এলো। বাড়ি চলে এলাম।

কিছু ওষুধ এখনো খাচ্ছি। শরীর অনেক দুর্বল। লিখতে হাত কাপছে। 
আশা করছি, আল্লাহপাকের অশেষ কৃপায় খুব দ্রুতই পুরোপুরি ভালো হয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। "আমিন"

সিনিয়ার তথ্য অফিসার মাইদুল ইসলাম প্রধানের ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত।


   আরও সংবাদ