ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জঙ্গিদের টার্গেট পুলিশ, হাতুড়ি দিয়ে হলেও হামলার পরিকল্পনা : শফিকুল


প্রকাশ: ৩০ জুন, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


জঙ্গিদের টার্গেট পুলিশ, হাতুড়ি দিয়ে হলেও হামলার পরিকল্পনা : শফিকুল

   

স্টাফ রিপোর্টার : বর্তমান করোনার পরিস্থিতিতে জঙ্গি সংগঠনগুলো লোন-উলফ (একাকি) হামলার জন্য সদস্যদের উদ্বুদ্ব করার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে জঙ্গি সংগঠনগুলো পুলিশ সদস্যদের হামলা করার জন্য নানাবিধি প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।

বুধবার (১ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ডিএমপি কমিশনার।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবে মানুষ ঘরেই বেশি সময় কাটাচ্ছেন। এ সময় মানুষ ধর্মীয় সাইটগুলোতে বেশি ভিজিট করছেন। এটার সুযোগ নিয়ে জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। লোন-উলফ হামলার জন্য তারা সংগঠনের সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছে। তাদের টার্গেট পুলিশের সদস্যরা। তারা যেকোনো কিছু দিয়ে হামলার চেষ্টা করছে। একটি হাতুড়ি হলেও সেটি দিয়ে হামলার পরিকল্পনা করছে।

তিনি বলেন, আমরা জনমানুষকে আশ্বস্ত করতে চাই, জঙ্গিরা এখন অনলাইনে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। কিন্তু তেমন কোনো মানুষকে জঙ্গিবাদের দিকে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছে অথবা সংঘবদ্ধভাবে দেশে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করার সাংগঠনিক ব্যবস্থার প্রয়োজন সেখানে কোনো সংগঠন গড়ে তুলতে পেরেছে, এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।

আল্লার রহমতে এখন পর্যন্ত আমরা জঙ্গিবাদকে প্রতিহত করতে পেরেছি উল্লেখ তিনি বলেন, আশা করা যায় যে তারা ছোটখাটো কিছু সক্ষমতা তাদের থাকতে পারে কিন্তু বড় ধরনের কিছু করার ঘটনা সক্ষমতা তাদের নেই।

শফিকুল বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় যে জঙ্গি হামলার মুখোমুখি হয়েছিলাম সেটি ছিল হলি আর্টিজান হামলা। আজ ঘটনার চার বছরপূর্তি হলো। আমরা এখানে যে দুইজন সহকর্মীকে হারিয়েছিলাম তাদের প্রতি শ্রদ্ধা। যেসব দেশি-বিদেশি নাগরিক, নিরীহ মানুষ এই নৃশংসতার বলি হয়েছিলেন তাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা ও মাগফেরাত কামনা করছি।

যারা এ ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন এবং অংশগ্রহণ করেছিল, তারা সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়েছেন। পুরো ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন পরবর্তীতে আমরা তাদের সবার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছি, সবার সাজা হয়েছে। তবে সাতজন সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি আপিল করেছে, আপিলের শুনানি এখনো শুরু হয়নি, এই প্রক্রিয়াটি হয়তো করোনার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তা শুরু হবে।

তিনি বলেন, হলি আর্টিজান হামলার পর থেকে একের পর এক আমরা জঙ্গি আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়েছি। জঙ্গিদের যে সক্ষমতা ছিল, সেটি এখন একেবারে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন তারা যেসব ইম্প্রভাইজ বা বোমা বানায়, তাদের বড় এক্সপার্ট যারা ছিল তাদের সবাই আমাদের হাতে ধরা পড়েছে। তারা জেলে আছে। অনেকে বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছে। তাই এখন সে ধরনের সক্ষমতা জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেই।

হলি আর্টিজান হামলার এ ঘটনার পরে বাংলাদেশ পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন ঢেলে সাজানো হয়েছে, একইভাবে জঙ্গিবাদে যারা জড়িত তাদের সক্ষমতা, ক্ষমতা সম্পর্কেও আমাদের একটা সুস্পষ্ট ধারণা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। এছাড়াও ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন।

এরপর চীন, জাপান ও আমেরিকার এম্বাসেডররা এসে হলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস হামলার ঘটনায় নিহতদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের এ দিনে পাঁচ অস্ত্রধারী জঙ্গি রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা করে। সেখানে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি ব্যক্তিদের জিম্মি করে। পরে তাদের মধ্যে ২০ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে জঙ্গি সদস্যরা। এদের মধ্যে ৩ জন বাংলাদেশি, ৭ জন জাপানি, ৯ জন ইতালিয়ান এবং একজন ভারতীয় নাগরিক ছিলেন।


   আরও সংবাদ