প্রকাশ: ৩ জুলাই, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন
খান সাহেব : যশোরের চৌগাছা উপজেলার প্রতিটি গ্রামে অধিকাংশ বাড়িতে গরু লালন-পালন করা হয়ে থাকে। ধার দেনা করে গৃহস্থরা গরুর খাবার কিনে থাকেন। অনেকে আবার বিভিন্ন এনজিও থেকে টাকা ঋণ নিয়েও গরু কেনেন।
কেরবানি ঈদে সেই গরু বিক্রি করে ঋণ শোধ করেন। কিন্তু এবছর করোনা ভাইরাসে কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। স্বপ্ন ভেঙে যেতে বসেছে চৌগাছার হাজারো কৃষক পরিবারের।
চৌগাছা উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের হিসাব মতে উপজেলায় ৬ হাজার ৫’শ টি পারিবারিক ও বাণিজ্যিক খামার রয়েছে। এসব খামারে কোরবানি উপলক্ষে দেশীয় পদ্ধতিতে প্রায় ৭ হাজার গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এ বছর এখন পর্যন্ত কোন গরু ব্যবসায়ীরা এলাকায় না আসায় হতাশ হয়ে পড়েছেন গরু পালনকারী কৃষকেরা।
উপজেলার মশিউরনগর গ্রামের গরুর ফার্মের মালিক আলাউদ্দীনের খামারে ৪৬টি গরু রয়েছে। যার ক্রয় মূল্য প্রায় ৫৬ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, প্রতিটি গরু কমপক্ষে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারলে তার আসল বাচবে।
তিনি আরো জানান, করোনার কারনে ব্যাপারীরা আসছেন না। কেউ এলেও গরুর দাম বলছেন অর্ধেক। এমন চলতে থাকলে রাস্তায় বসা ছাড়া আর উপায় থাকবে না।
কোরবানির সময়ে গরুগুলো বিক্রি করতে না পারলে তার খামারে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা লোকসান হবে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় গরু ব্যবসায়ি সিংহঝুলি গ্রামের জিল্লুর রহমান ও আসাদুজ্জামান জানান, তারা প্রতি বছর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে গরু ক্রয় করে ঢাকা, সিলেট, চট্রগামের পাইকারি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতেন। এবছর এখনো কোনো পাইকারি ক্রেতা তাদের সাথে যোগাযোগ করেনি।
একই গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম জানান তিনি গত এক সপ্তাহ আগে গ্রাম থেকে দুটি গরু কিনে চৌগাছা পশু হাটে বেঁচার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন সেই দুটি গরুতে তার প্রায় বিশ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।
সিংহঝুলী গ্রামের পারিবারিক গরু খামারের মালিক রবিউল ও মিজানুর রহমান কাটু জানান, কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য এলাকার অনেকেই গরু মোটাতাজা করেছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো ব্যাপারী আসেনি। তাদের পরিবারে রয়েছে চারটি গরু যে গরুগুলো কমপক্ষে দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা করে বিক্রি করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ব্যাপারী তাদের বাড়িতে আসেনি।
আন্দুলিয়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক হায়দার আলী জানান, স্বামী-স্ত্রী মিলে তারা বাড়িতে তিনটি গরু লালন-পালন করে বড় করেছেন। দুটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আর বাড়ির টাকা মিলে গরু তিনটি কিনেছেন। গরুর খাবার বাকিতে কিনছেন এলাকার একটি আড়ত থেকে। গরু সঠিক সময়ে বিক্রি করতে না পারলে বেকায়দায় পড়তে হবে তাদের।
সব মিলিয়ে করোনা প্রভাবে গরু বিক্রি করতে না পারলে মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে পড়বেন উপজেলার প্রান্তিক গরু চাষীরা।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা প্রভাশ চন্দ্র গোস্বামী বলেন, উপজেলার সকল পারিবারিক বাণিজ্যিক খামারের মালিকদের বলা হয়েছে এবছর করোনা ভাইরাসের কারনে গরু বহন করা ঝুঁকি রয়েছে। সে কারনে স্থানীয় বাজারে গরু বিক্রি করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে।