ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ ভাদ্র ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

৭ মাসে ২৫ হাজার পোশাক শ্রমিক চাকরিচ্যুত, ৮ কারখানা বন্ধ : রুবানা


প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৪:০০ অপরাহ্ন


৭ মাসে ২৫ হাজার পোশাক শ্রমিক চাকরিচ্যুত, ৮ কারখানা বন্ধ : রুবানা

   

স্টাফ রিপোর্টার : চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭ মাসে ২৫ হাজার ৪৫৩ জন পোশাক শ্রমিক চাকরি চুত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এর সভাপতি ড. রুবানা হক। 

তিনি জানান, ব্যবসার অবস্থা খারাপ হওয়ায় এই সময়ের মধ্যে ৮ টি পোশাক কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকপক্ষ। 

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

ভবিষ্যতে এ পরিসংখ্যান আরও বাড়তে পারে বলে আশংকা করেন তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ইতিবাচক দিকগুলোর চাইতে নেতিবাচক দিকগুলোই বেশি তুলে ধরছে। এতে করে আমাদের পোশাক খাতগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়ছে।

রুবানা হক বলেন, বর্তমানে রপ্তানি আয়ের যে পরিসংখ্যানগুলি আপনারা দেখছেন তা ৪ বছরের গড় হিসাবে নেওয়া। আপাত দৃষ্টিতে রপ্তানী আয়ের এই উত্তোরত্তোর বৃদ্ধিতে খাতটি খুব ভালো আছে মনে হলেও আসলে এই প্রবৃদ্ধি খুবই সামান্য। 

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বিশেষ করে গার্ডিয়ানে বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে একের পর এক নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। যার ফলে ক্রেতাদের মধ্যে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমরা যখন আমাদের পণ্যের দাম বাড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি তখন এই প্রতিবেদনগুলো আমাদের জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

এক্ষেত্রে আমাদের দেশীয় সংবাদমাধ্যমগুলোকে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে একটা ভারসাম্য বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি গার্ডিয়ানে প্রকাশিত বাংলাদেশে পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকদের যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে একটা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় আমাদের সংবাদ মাধ্যমগুলোও এটি প্রচার করছে। আমি বলতে চাই এই প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করে নিজেদের নামিয়ে দেওয়া উচিত নয়।

আমরা একটি সুদুরপ্রসারী গন্তব্যের দিকে যাচ্ছি। যার আমাদের নতুন নতুন প্রজেক্ট করতে হবে। জাতীয় নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছাতে হবে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশল। তাই মিডিয়াকে অবশ্যই তৈরি পোশাক খাতকে সমর্থন করতে হবে। কারণ আমাদের অন্য কোনোও খাত নেই যা এত কর্মসংস্থান তৈরি করবে। তাই গার্ডিয়ান, নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো আর্ন্তজাতিক সংবাদমাধমগুলোতে প্রকাশিত সংবাদগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজেদের সফলতার গল্পগুলো বলতে হবে। এতে করে ক্রেতাদের কাছে আমাদের সম্পর্কে ভালো ধারণা তৈরি হবে।

এদিকে পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রতিবেশী প্রতিযোগী দেশের সক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় দেশের কারখানাগুলোর ক্রয় আদেশ কমে যাওয়াই এসব পোশাক  কারখানা বন্ধের অন্যতম কারণ।

এছাড়া কারখানা বন্ধ হওয়ার পেছনে নতুন কাঠামোতে বেতন পরিশোধে বেগ পোহানো, শ্রমিক বিক্ষোভ ও শেয়ার্ড বিল্ডিং ব্যবহারের মতো কারণও রয়েছে। 

তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে পোশাক খাতে ব্যবসার অবস্থা ভালো নেই। ক্রয় আদেশ (অর্ডার) কমে যাচ্ছে। কিছু নতুন প্রতিযোগী দেশও তৈরি হয়েছে। মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামে অর্ডার বাড়ছে। এতে করে আমাদের দেশে অর্ডার কমে যাচ্ছে। এসব কারণেই অনেক কারখানা ব্যবসায় টিকে থাকতে পারছে না। ফলে বাধ্য হয়ে তারা কারখানা বন্ধ করছে।

জানা যায়, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার আগে পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত কোম্পানি ছিল প্রায় ৫ হাজার। ওই দুর্ঘটনার পর ১২শ থেকে ১৩শ কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩ হাজারের কিছু বেশি। শুধু মাত্র চলতি বছরের রমজান মাসের আগেই ২০ থেকে ২৫টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।

পরে এখন পর্যন্ত আরও ১৫ থেকে ২০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আর বর্তমানে কারখানা বন্ধের ক্ষেত্রে নতুন ধারা তৈরি হয়েছে। আগে পুরো কারখানা বন্ধ করলেও এখন দেখা যাচ্ছে ১৫ লাইনের ফ্যাক্টরির ক্ষেত্রে দুই বা তিন লাইন বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে দুই থেকে তিনশ শ্রমিক বেকার হয়ে যাচ্ছে।


   আরও সংবাদ