ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ ভাদ্র ১৪৩১, ৮ শাওয়াল ১৪৪৫

য‌শো‌রে ডেঙ্গু রোগী সংখ্যা বে‌ড়েই চ‌লে‌ছে


প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৪:০০ অপরাহ্ন


য‌শো‌রে ডেঙ্গু রোগী সংখ্যা বে‌ড়েই  চ‌লে‌ছে

   

রহিদুল ইসলাম খান : সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং দিনকে দিন হাসপাতালে নতুন করে রোগী ভর্তি হচ্ছে।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৪ জন ভর্তি হয়েছে। এছাড়া আরও ১৪জন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে, যাদের রক্ত এখনও পরীক্ষা করা হয়নি।

যশোর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২১ জুলাই থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যশোরে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ১২১ জন। এরমধ্যে জুলাই মাসে ছিল মাত্র ১২১জন এবং আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৯৬ জনে।

খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সর্বমোট ৫ হাজার ৯৭৪ (তথ্য : ১৩ সেপ্টেম্বর, বেলা ১১টায় প্রকাশিত; খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর) জন।  যা যশোর জেলা তার এক তৃতীয়াংশেরও বেশি।

যশোর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় যশোরে নতুন করে ৯০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ পর্যন্ত যশোরে মোট ২ হাজার ১২১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।  যারমধ্যে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১ হাজার ৮৭০ জন। যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১০৩ জন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে ১৪৮জন।

হাসপাতালের ডাক্তার আশরাফুন্নাহার অনন্যা জানান, সেপ্টেম্বরে আমরা ভেবেছিলাম রোগীর চাপ কমবে। কিন্তু ক্রমেই তা বাড়ছে। নতুন ক্রাইসিস হচ্ছে, রোগীর রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা খুব ভাল থাকলেও তাদের কারো কারো অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় রোগীকে বেশি করে তরল খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। 

ঢাকার বাইরে কেন যশোরাঞ্চলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এতো বেশি- এ বিষয়ে যশোরের চিকিৎসা ও পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলছেন, মূলত যশোরের তিনটি উপজেলায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা, যোগাযোগের ট্রানজিট পয়েন্ট এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের প্রবণতা অন্যতম কারণ।

ডাক্তারদের মতে, এডিস মশার আরেক প্রজাতি অ্যালবোপিকটাসের (Albopictus) বিস্তার হওয়ায় ডেঙ্গু বেশি ছড়াচ্ছে।

এডিস মশার দুটি প্রজাতি। শহরাঞ্চলে পরিস্কার পানিতে ইজিপ্টাই (Aegypti) এবং গ্রামাঞ্চলের ঝোঁপঝাড়-বনবাদাড়ে অ্যালবোপিকটাসের (Albopictus) প্রজনন ঘটে। এখন যশোরে যেহেতু এডিস মশা রয়েছে, সে কারণে শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গু বিস্তার লাভ করছে।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের ডা. উবাইদুল কাদির উজ্জ্বল জানিয়েছেন, অতিসম্প্রতি এডিস মশার নতুন প্রজাতি অ্যালবোপিকটাসের বিস্তার ঘটেছে। ওই মশার কারণে গ্রামাঞ্চলের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। তাই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে।

তবে, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-যবিপ্রবির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমানের মতে, এডিস মশার বংশবিস্তার হয় মূলত আরবান এলাকায়।

ট্রাকের পেছনের অংশ যেখানে পানি জমতে পারে কিংবা গ্যারেজে থাকা পুরনো টায়ারেও এডিস মশার প্রজনন হয়ে থাকে। সে কারণে লোকালি ইনফেক্টেডও হচ্ছে বেশি। তাছাড়া যশোরে বেটার ট্রিটমেন্ট হওয়ার কারণে অনেক রোগী এ অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে থাকে। এটিও একটি কারণ হতে পারে।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু বলেন, প্রথম দিকে ঢাকা থেকেই আক্রান্ত রোগী আসে বেশি। মশার প্রজননক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত জলাবদ্ধতা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, মশানিধনে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব- ডেঙ্গু রোগী বেশি হওয়ার কারণ। তাছাড়া ভাল চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কারণে যশোরের বাইরে মাগুরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল এবং সাতক্ষীরা থেকেও রোগীরা যশোর জেনারেল হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসে।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায়ের মতে, তিনটি উপজেলায় (অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর) স্থায়ী জলাবদ্ধতা, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং রোগীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সেবা গ্রহণের আগ্রহই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা যশোরে বেশি বলে মনে করছি।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে অতিসম্প্রতি থেমে থেমে বৃষ্টি। এরফলে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত জলাবদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বড়ধরনের বৃষ্টি হলে- সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যেতো। কিন্তু থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা এডিস মশার প্রজননকে এগিয়ে নিয়ে যায় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গুর ট্রেন্ড হাই। কোরবানির ঈদ এবং ঈদ পরবর্তী সময়ে আমরা যশোরে দেখেছি বহিরাগত আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। যাদের বেশিরভাগই এসেছে ঢাকা থেকে। তাদের দ্বারা অন্যরাও ইনফেক্টেড হয়েছে।

যশোরে মারা গেছেন ৭ জন যা গত ২৪ ঘণ্টায় যশোরে মারা গেছেন মেহেরুন নেছা (৪০) নামে একজন গৃহবধূ। তিনি যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রোহিতা ইউনিয়নের সালামতপুর এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী। ১২ সেপ্টেম্বর খুলনা হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনার পথেই তার মৃত্যু হয়।

মেহেরুন নেছাসহ মণিরামপুর উপজেলায় এ পর্যন্ত চারজন নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তারা হচ্ছেন - রাজবাড়ী এলাকার সেকেন্দার আলীর স্ত্রী রেবেকা খাতুন (৫৫), কাশিমনগর এলাকার ইনসান আলীর স্ত্রী জাহানারা বেগম (৪৫) এবং হানুয়ার এলাকার আব্দুল কাদের মোল্যার স্ত্রী জাহিদা বেগম (৩৫)।  

অন্যরা হলেন-নড়াইলের কুড়িগ্রাম এলাকার রোকসানা পারভীন রাণী (৫২), যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ভাঙ্গুড়া গ্রামের শাজাহান আলী বিশ্বাস (৭০) এবং চৌগাছা উপজেলার স্বরুপদহ এলাকার আব্দুল ওয়াদুদ (৪৫)।


   আরও সংবাদ