ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ ভাদ্র ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

করোনার ভ্যাকসিনের ন্যায্য প্রাপ্তি নিশ্চিতে বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন : রাবাব ফাতিমা


প্রকাশ: ২৩ জুলাই, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


করোনার ভ্যাকসিনের ন্যায্য প্রাপ্তি নিশ্চিতে বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন : রাবাব ফাতিমা

   

কূটনৈতিক প্রতিবেদক : কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন যে সকল দেশে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেখানে এর সাশ্রয়ী ও নায্য বন্টন নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। এক্ষেত্রে একটি ন্যায্যতাভিত্তিক নীতিমালা প্রণয়নেরও আহ্বান জানান তিনি। 

বিভিন্ন দেশে কোভিড ভ্যাকসিন তৈরিতে যাঁরা কাজ করছেন তাঁদের অগ্রগতিসমূহকে খুবই উৎসাহব্যঞ্জক আখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে ‘গ্লোবাল পাবলিক গুড’ হিসেবে পরিণত করতে নি:সন্দেহে সুদৃঢ় বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি ও সহযোগিতা প্রয়োজন। 

আজ “কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের গবেষণা, উন্নয়ন, সরবরাহ এবং এর সমতাভিত্তিক বন্টন কাঠামো” শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বক্তব্য প্রদানকালে এসকল কথা বলেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। 

ইভেন্টটি যৌথভাবে আয়োজন করেন যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ ও জাতিসংঘ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড তারিক আহমেদ এবং ইউনাইটেড ন্যাশন্স ফাউন্ডেশন এর প্রেসিডেন্ট ও সিইও রাষ্ট্রদূত এলিজাবেথ কাউসেনস। অনুষ্ঠানটিতে কোভিড-১৯ এর সম্ভাব্য ভ্যাকসিনসমূহের সার্বজনীন প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে ব্রিফ করেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার টিকা, ভ্যাকসিন ও বায়োলজিক্যালস্ এর পরিচালক কেট ও ব্রায়েন এবং গ্যাভী (এধার) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ম্যারি-অ্যাঞ্জে সারাকা-ইয়াও।

রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি আমাদেরকে আবারও জোরালোভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে এই বিশ্বের সকলে এক অপরের সাথে সংযুক্ত। অতএব, বৈশ্বিক এই স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একতাবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তিনি সতর্কতা ব্যক্ত করে বলেন, “আমরা যদি পুন:সংক্রমণ রোধ করতে চাই, তাহলে প্রস্তুতি, প্রতিরোধ ও পুনরুদ্ধার বিষয়ে আমাদেরকে একসাথে এবং কার্যকর বৈশ্বিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে”। এই মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ও ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় এবং দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ভ্যাকসিনের অপরিসীম গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন তিনি। 

প্রফেসর সারাহ গিলবার্টের নেতৃত্বে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারে অক্সফোর্ড জেনার ইনস্টিটিউট টিমের মহতী কাজের ভূয়সী প্রসংশা করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। কোভিড-১৯ এর একটি কার্যকর ও নিরাপদ ভ্যাকসিন তৈরির পদক্ষেপ হিসেবে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনটির তৃতীয় ট্রায়াল সফলকাম হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। 

গতমাসে যুক্তরাজ্য আয়োজিত একটি ভার্চুয়াল ভ্যাকসিন সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির উদাহরণ টেনে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্যাভী, এবং অন্যান্য বেসরকারি অংশীদার গৃহীত ‘এসিটি অ্যাক্সিলেটর অ্যান্ড কোভাক্স ফ্যাসিলিটি (ACT accelerator and COVAX facility) পদক্ষেপটিতে বাংলাদেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ঔষধ শিল্পের কথা তুলে ধরেন স্থায়ী প্রতিনিধি। 

তিনি বলেন, এসকল ঔষধ কোম্পানীগুলো আমাদের দেশের চাহিদা মিটিয়ে ১৪৫টি দেশে ঔষধ রপ্তানি করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুরসহ ওইসিডিভুক্ত দেশসমূহ। 

বাংলাদেশের বর্তমান চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণ ভ্যাকসিন উৎপাদনে এসকল ঔষধ কোম্পানীগুলোর সক্ষমতা ও সামর্থ্যরে কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, যদি মেধাসত্ত্বের অধিকার অবলোপন করা হয় এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি হস্তান্তর করা হয় তবে বাংলাদেশী ঔষধ কোম্পানীগুলো বৈশ্বিক সরবরাহের জন্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে সক্ষম।

বৈশ্বিকভাবে ঝুঁকি ভাগ করে নেওয়ার পদক্ষেপ ‘দ্য এটিসি অ্যাক্সিলারেটর ফর থিরাপিউটিক্স এন্ড কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি (The ACT Accelerator for therapeutics and the COVAX Facility)’সহ কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ও আর্থিক বিনিয়োগ কীভাবে সমতার ভিত্তিতে এগিয়ে নেওয়া যায় সে বিষয়ে দৃষ্টিপাত করেন আলোচকগণ। 

তাঁরা জোর দিয়ে বলেন, এসডিজি অর্জন এবং বিশ্বকে কোভিডপূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে এটিই প্রথম পদক্ষেপ যা অপরিহার্য। উচ্চ এবং নিন্ম ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য বিশ্ববাজারে সমতাভিত্তিক প্রবেশাধিকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্যাভী কাজ শুরু করেছে মর্মে জানান তাঁরা। 

সভায় বলা হয় ২০২১ সালের শেষ অবধি বিশ্বব্যাপী প্রায় ২ বিলিয়ন ভ্যাকসিন ডোজের প্রয়োজন হবে। ব্রিটিশ সরকার বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের সমতাভিত্তিক বন্টন বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের জন্য বন্টন নিশ্চিত করবে মর্মে প্রতিশ্রুতির কথা জানান যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ্ ও জাতিসংঘ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড তারিক আহমেদ।

তিনি আরও বলেন, তাঁর সরকার ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত বিষয়ে ৭৬০ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ করেছে। জাতিসংঘ সদস্য দেশসমূহের স্থায়ী প্রতিনিধি, অন্যান্য কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিবর্গ এবং বেসরকারি ও সিভিল সোসাইটি সংস্থার বিপুল সংখ্যক প্রতিনিধিবর্গ সভাটিতে অংশগ্রহণ করেন।


   আরও সংবাদ