ঢাকা, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ ভাদ্র ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বঙ্গবন্ধু ছিলেন তারুণ্য, উদ্দীপনা ও এক অনিঃশেষ প্রেরণার নাম : প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশ: ২৬ জুলাই, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


বঙ্গবন্ধু ছিলেন তারুণ্য, উদ্দীপনা ও এক অনিঃশেষ প্রেরণার নাম : প্রধানমন্ত্রী

   

স্টাফ রিপোর্টার : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তারুণ্যের প্রতীক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তারুণ্য,  উদ্দীপনা ও এক অনিঃশেষ প্রেরণার নাম। তিনি তারুণ্যের  শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সমৃদ্ধ,আত্ন-নির্ভরশীল ও উন্নত স্বনির্ভর জাতি গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তারুণ্যের প্রতি বঙ্গবন্ধুর এই আত্মবিশ্বাসের প্রতি সম্মান জানিয়ে আয়োজকদের বঙ্গবন্ধু গ্লোবাল ইয়ুথ লিডারশীপ এওয়ার্ড  প্রদানের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

আজ সোমবার (২৭ জুলাই) বিকাল ৪ টায় ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে ঢাকা ওআইসি যুব রাজধানী- ২০২০ আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন। উক্ত উদ্বোধনী  অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে উপস্থিত ছিলেন ওআইসি এর মহাসচিব ইউসুফ বিন আহমেদ আল ওথাইমিন, আজারবাইজানের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী আজাদ রহিমভ, গাম্বিয়ার আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রী ডাউডা এ. জালো, আইসিওয়াইএফ এর প্রেসিডেন্ট তাহা আইয়ান  ও অন্যান্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। 

রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা মায়ানমার হতে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত অসহায় প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদান করেছি। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় এই বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজ মাতৃভূমিতে নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবসনের লক্ষ্যে কাজ করছি।

কোভিড ১৯ প্রসঙ্গে  প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড ১৯ এর কারনে বিশ্ব অর্থনীতির আমূল-পরিবর্তন ঘটছে। অভিবাসনসহ বিশ্ব বানিজ্যের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। এখন সময় এসেছে মানব সমাজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদার করা। সরকার কোভিড ১৯ মোকাবেলায় সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করেছে বলে জানান তিনি। 
 
এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী যুব সমাজকে তাদের নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা ও চেতনার মধ্যে  দিয়ে বৈষম্যহীন সহনশীল ও টেকসই সমাজ ব্যবস্হা বিনির্মানের উদাত্ত  আহবান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে ওআইসি যুব রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় ওআইসিকে ধন্যবাদ জানান।  

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি, মাননীয়  যু্ব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও যুব ও ক্রীড়া সচিব আখতার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।  

স্বাগত বক্তব্যে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে  বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এ বছর ওআইসি যুব রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে আন্তজার্তিক এ স্বীকৃতি জাতি হিসেবে আমাদের গর্বিত করেছে। ঢাকাকে ওআইসি যুব রাজধানীর স্বীকৃতি দেওয়ায় আমি ওআইসি মহাসচিব ও আইসিওয়াইএফ এর প্রেসিডেন্টসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। 

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্বে আমাদের যুবসমাজের অমিত সম্ভাবনা তুলে ধরা হবে। আমরা বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড এর সুবিধা ভোগ করছি। আমাদের মেধাবী ও দক্ষ যুব শক্তি রয়েছে। এছাড়াও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ সরকার যে মানবিক সহায়তা করছে সেটিও বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা গত ১২ এপ্রিল ২০২০ ঢাকা ওআইসি যুব রাজধানী- ২০২০ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা নির্ধারিত কর্মসূচি স্হগিত করতে বাধ্য হই। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে  আমরা ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে নতুন আঙ্গিকে ওআইসি যুব রাজধানী- ২০২০ এর সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করেছি। 

তিনি আরও বলেন, ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ২০২০’ হিসেবে বাংলাদেশের এই অর্জন বাংলাদেশের তরুণ সমাজের জন্য অপরিসীম অনুপ্রেরণার সঞ্চার করেছে। বাংলাদেশের এই স্বীকৃতি বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের একটি উজ্জ্বল ও শক্তিশালী ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল অনুষ্ঠানটি এবার ভার্চুয়াল ভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গণভবন থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি দুই দিন ব্যাপী এ আয়োজনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।   এ সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে  যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বাংলাদেশের  যুব সমাজের একজন প্রতিনিধির হাতে   ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল কি (চাবি) হস্তান্তর করেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে। 

মুসলিম বিশ্বের তরুণদের দৃঢ় ভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করার প্রয়াসে তরুণদের নানামুখী কৃতিত্বে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে ইসলামিক কো-অপারেশন ইয়ুথ ফোরাম (আইসিওয়াইএফ) ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর ওআইসি সদস্যভুক্ত দেশসমূহকে ‘ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল’ এর স্বীকৃতি প্রদান করে আসছে।

বিগত ২০১৯ সাল থেকে শুরু হওয়া তীব্র প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিভিন্নধাপ সফলতার সাথে সম্পন্ন করে ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ গৌরবজনক এই স্বীকৃতি অর্জন করে। ‘
‘ঢাকা-ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ২০২০’-এর প্রতিপাদ্য ‘সমতা ও সমৃদ্ধির জন্য স্থিতিস্থাপকতা’ যা এই সংকটকালীন সময়ের কথা বিবেচনা করে নির্ধারণ করা হয়েছে। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অব্যবহিত পর ২৭ ও ২৮ জুলাই দুইদিনব্যাপী ‘স্থিতিশীল যুব নেতৃত্বের শীর্ষ সম্মেলন’ নামে একটি যুবসম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত সম্মেলনে অংশ নিতে ৭৫ টি দেশের এক হাজার ২০০ জনের বেশি যুবক আবেদন করেন। সংশ্লিষ্ট  কমিটি  এদের মধ্যে থেকে ২৫০ জনকে বাছাই করেছে। এদের মধ্যে ১০০ জন বাংলাদেশি ও ১৫০ জন ওআইসিভুক্ত দেশসহ অন্যান্য দেশের। এবং সংশ্লিষ্ট  কমিটি  এদের মধ্যে থেকে ২৫০ জনকে বাছাই করেছে।  এদের মধ্যে ১০০ জন বাংলাদেশি ও ১৫০ জন ওআইসিভুক্ত দেশসহ অন্যান্য দেশের।  এ বাছাইকালে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী লিঙ্গ সমতার ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে। 

সম্মেলনের অন্যতম অংশ হিসেবে থাকবে কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতিতে যুবসমাজ এবং প্রযুক্তি-এর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়ে দেশ ও বিদেশের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ এর সমন্বয়ে সেশন।

অধিকন্তু, এই যুবসম্মেলনের অন্যতম উদ্দেশ্য হবে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ও অত্যাচারিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিষয়ে বিশ্বব্যাপী যুবসম্প্রদায়কে সচেতন করা এবং মিয়ানমারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মিয়ানমারে সম্মানজনক ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিতকরণে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলা।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প এর ভার্চুয়াল পরিদর্শন এবং দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে প্যানেল আলোচনার মাধ্যমে যুবসম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে ব্যাপকভাবে সচেতন করা হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও আপোষহীন সংগ্রাম এর গৌরবময় ইতিহাস বিশ্বের যুবসম্প্রদায়কে জানানোর তাগিদে ‘বঙ্গবন্ধু গ্লোবাল ইয়ুথ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হবে।

বছরব্যাপী পরিকল্পনাকৃত অন্যান্য অনুষ্ঠানসমূহ হল-কুরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতা; ফিল্ম ফেস্টিভাল; চিত্রকলা প্রদর্শনী; বিতর্ক প্রতিযোগিতা; স্কাউটক্যাম্প; এন্টারপ্রেনারশিপ, স্কিল ও এমপ্লয়মেন্ট ক্যাম্প এবং কুইজ প্রতিযোগিতা। 


   আরও সংবাদ