ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ ভাদ্র ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে গেছেন : হাইকমিশনার


প্রকাশ: ১৭ অগাস্ট, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে গেছেন : হাইকমিশনার

   

কূটনৈতিক প্রতিবেদক : হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুর ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকীর এক বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এ দিবসটি আমরা পালন করছি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দার প্রান্তে। এ দু‘টি ঘটনা বাঙালি জাতির ইতিহাসে উজ্জল মাইল ফলক। 

তিনি ১৯৭২ সালে যুক্তরাজ্যের সাথে বঙ্গবন্ধু প্রগতি, গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও অর্ন্তভূক্তি মূলকযে কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন তার উল্লেখ করে বলেন, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ সেই মূল্যবোধে প্রতিষ্ঠিত গভীর সম্পর্কের পঞ্চাশ বছর ২০২১ সালে উদযাপন করবে।
ব্রিটিশ মিনিস্টার পল স্কালী বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং জাতীয় শোক দিবস পালনে বাংলাদেশের মানুষ ও সমগ্র বাঙালি জাতির প্রতি একাত্বতা প্রকাশ করেন।

বঙ্গবন্ধুর ৪৫ তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে লন্ডন হাইকমিশন আয়োজিত স্মারক অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ মন্ত্রী ও এমপিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নে সামুজিবসহ ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
 
এসময যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীমের সভাপতিত্বে স্মারক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
সম্মানিত অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও ব্রিটিশ মিনিস্টার ফর লন্ডন এবং স্মল বিজনেস, কনজ্যুমার ও লেবার বিষয়ক মন্ত্রীপল স্কালী।
 
এ অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবীণ ও নবীন বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাসহ ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

তিনি প্রধানমন্ত্রী স্যার এডওয়ার্ড হিথের সাথে বঙ্গবন্ধু’র অর্ন্তরঙ্গ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু দল মত নিরপেক্ষ ভাবে যুক্তরাজ্যে লেবার ও কনজারভেটিভ উভয় দলের নেতৃবৃন্দের সাথেই সুন্দর সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।

১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকান্ডের আগে বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য যে সব বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন সে সবের উল্লেখ করে ব্রিটিশমন্ত্রী একই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে যে অসাধারণ উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তারও ভূয়সী প্রশংসা করেন।

লেবারপাটির চেয়ার এঞ্জেলা রেইনা অনুষ্ঠানে লেবার লিডার স্যার কির স্টারমার-এর প্রতিনিধি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বঙ্গবন্ধুকে এশিয়ার মহান নেতা হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি স্যার হ্যারলড উইলসনের সাথে বঙ্গবন্ধুর আন্তরিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকান্ডকে স্যার উইলসন সে সময়ে তাঁর ব্যক্তিগত অপূরনীয় ক্ষতি হিসেবে মন্তব্য করেছিলেন।

রোশনারা আলী বলেন, ১৫ আগস্ট কেবল শোকের নয়, এ দিন আমরা বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি যে আপোষহীন সংগ্রাম ও পরম ত্যাগ করে গেছেন সেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নতুন প্রজন্মকেও সচেতন করতে পারি।

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ও সুপরিকল্পিত উপায়ে তরুণ সমাজের কাছে তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন, যাতে নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ সঠিকভাবে অনুসরণ করতে পারে। তিনি বঙ্গবন্ধুর মূল্যবোধ ও সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

ড. শহীদ হোসেন ভিয়েনা থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর প্রবাসে তাঁর দুই কন্যার নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য যে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল তাঁর স্মৃতি চারণ করেন। ঢাকা থেকে যোগদানকারী নেওয়াজ আহমেদ ১৫ আগস্টের নৃশংসহত্যাকান্ডের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তাঁর মর্মান্তিক স্মৃতির বর্ণনা দেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে হাইকমিশনার ভূমিমন্ত্রী ও মিশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে পবিত্র কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল থেকে পাঠকরে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করা হয়। 

অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার ভূমি মন্ত্রীকে নিয়ে জন্মশতবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করা আন্তর্জাতিক সাময়িকী‘‘অংরধহ অভভধরৎং’’ এর বিশেষ সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করেন।স্মারক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর একটি প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সকালে হাইকমিশন প্রাঙ্গণে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন। 

এরপর বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, লেবার পার্টির চেয়ার মিস্এঞ্জেলা রেইনার, বাংলাদেশ বিষয়ক সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপর চেয়ার এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের ট্রেড এনভয় রুশনারা আলী, জার্মানির বিখ্যাত কার্লশ্রুহ বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর জামাতা আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সহকর্মীও পরমাণু বিজ্ঞানী ড. শহীদ হোসেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ও ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাড়ির প্রতিবেশী নেওয়াজ আহমেদ, প্রথিতযশা সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রবাসী সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় সদস্য সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বিবিসি’র বাংলা বিভাগের প্রধান সাবির মোস্তাফা ২০০৪ সালে বিবিসি’র জরিপে বঙ্গবন্ধুকে “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি” হিসেবে ঘোষণা সম্পর্কে তাঁর অপূর্ব অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণ করেন।

স্মারক অনুষ্ঠানে হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, মিনিস্টার (কনস্যুলার) লুৎফুল হাসান, সামরিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রশীদ, মিনিস্টার (প্রেস) আশিকুন নবী চৌধুরী, মিনিস্টার (পলি্িটক্যাল) এ,এফ,এম, জাহিদুল ইসলাম, কমার্শিয়াল কাউন্সিলার এস, এম, জাকারিয়াহক, কাউন্সিলার (পলিটিক্যাল) দেওয়ান মাহমুদুল হক, কাউন্সিলার ও দূতালয় প্রধান স্বদীপ্ত আলম, সহকারী সামরিক উপদেষ্টা লেঃ কর্ণেল সোহেল আহমেদ, প্রথমসচিব (পাসপোর্ট ও ভিসা) এ,এফ, এম, ফজলে রাব্বী, প্রথম সচিব (পলিটিক্যাল) মাহফুজা সুলতানা, প্রথম সচিব (পলিটিক্যাল) এ,কে,এম, মনিরুল হক ও এ্যাটাসে (কনস্যুলার) এইচ, এম, ফয়সাল আহমেদসহ মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা উপস্থিত ছিলেন।


   আরও সংবাদ