ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ ভাদ্র ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দখল আর দূষ‌ণে খর‌স্রোতা ক‌পোতাক্ষ এখন মৃতপ্রায়!


প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৪:০০ অপরাহ্ন


দখল আর দূষ‌ণে খর‌স্রোতা ক‌পোতাক্ষ এখন মৃতপ্রায়!

   

রহিদুল ইসলাম খান : য‌শো‌রের চৌগাছা উপ‌জেলার মধ্যভাগ দি‌য়ে ব‌য়ে যাওয়া এককা‌লের খর‌স্রোতা ক‌পোতাক্ষ নদ এখন মৃতপ্রায়। দখল, দূষণ আর প‌লি জমার কার‌ণে তার এ অবস্থা হ‌য়ে‌ছে ব‌লে ম‌নে করেন বি‌শেষজ্ঞরা।

জানা যায় উপ‌জেলার উত্তর সীমান্ত লা‌গোয়া তা‌হেরপুর গ্রামে ভৈরব নদী থে‌কে ক‌পোতাক্ষ ন‌দের জন্ম। এরপর দু‌টি নদী পাশাপা‌শি ব‌য়ে এ‌সে মুক্তদহ নামক স্থান থে‌কে ভৈরব পূর্ব‌দিকে মোড় নি‌য়ে মর্যাদ বাও‌ড়ের পাদ‌দে‌শ হ‌য়ে য‌শোর শহ‌রের দি‌কে চ‌লে যায়। আর ক‌পোতাক্ষ নদ চৌগাছা উপ‌জেলার মধ্যভাগ দি‌য়ে ভারতীয় সীমান্ত ঘে‌ঁষে ঝিকরগাছা, ম‌নিরামপুর, কেশবপুর, পাট‌কেলঘাটা, তালা ,ক‌পিলমু‌নি ও পাইকগাছা হ‌য়ে সুন্দরব‌ন গি‌য়ে শিবসা নদীর সা‌থে মি‌শে বঙ্গপোসাগ‌রে গি‌য়ে পড়েছ। 

ক‌পোত অর্থ কবুত‌র আর আঁ‌খি অর্থ চোখ অর্থাৎ ক‌পো‌তের আঁ‌খির মত স্বচ্ছ পা‌নি হওয়ার কার‌ণে এ নদের নামকরন করা হয় ক‌পোতাক্ষ। 

বৃ‌টিশ আম‌লে এ ন‌দের তী‌রে তা‌হেরপুর গ্রা‌মে তারা চি‌নির কল গ‌ড়ে তো‌লে। এখান থে‌কে চি‌নি বহ‌নের জন্য তারা বড় বড় জাহাজ ব্যবহার কর‌তো। জাহাজ নোঙ্গর করার স্থানগু‌লো আ‌জো দৃশ্যমান আ‌ছে। কিন্তু ক‌পোতা‌ক্ষের সেই স্বচ্ছ নির্মল পা‌নি আর জোয়ার ভাটার সেই টান আর নেই। 

নদের নি‌চেই জ‌মে‌ছে প‌লি, উপ‌রে ফেল‌ছে পৌর কতৃপক্ষ শহ‌রের আর্বজনা, পা‌নি‌তে মি‌শি‌য়ে ‌দি‌চ্ছে স্যুয়ারেজ লাই‌নের দু‌ষিত ময়লা পা‌নি, আর সু‌যোগ সন্ধানীরা দখল ক‌রে নি‌চ্ছে নদীর দুই পাড়। এভা‌বেই মৃত্যুর প্রহর গুণছে মধু ক‌বি মাই‌কেল মধুসূদন দ‌ত্তের স্মৃ‌তি বিজ‌ড়িত ক‌পোতাক্ষ নদ। 

ক‌পোতাক্ষ নদ এক সময় চৌগাছা বাসীর গর্ব হ‌লেও আজ যেন সবাই ভুল‌তে ব‌সে‌ছে তার অবদান। এক সময় চৌগাছার ব্যবসা বা‌ণি‌জ্যের মুল‌কেন্দ্র ছিল এই নদ। সকল প্রকার পণ্য আনা নেওয়া হ‌তো এই  ক‌পোতাক্ষ নদ দি‌য়ে। নদীর তী‌রে বসবাসকারী শতশত জে‌লে প‌রিবা‌রের সংসার চল‌তো এই  নদী‌তে  মাছ ধ‌রে। 

এখন নদী তী‌রের সেসব জে‌লে পল্লী‌তে আজ চল‌ছে হাহাকার। নদী‌তে মাছ না থাকার কা‌রণে তারাও বেকার অ‌নে‌কে পেশা বদল ক‌রে অন্য পেশা ধ‌রে‌ছে। 

নদী‌তে আর্বজনা ফেলা ও দূষিত পা‌নি দেওয়ার ব্যাপা‌রে চৌগাছা পৌরসভার মেয়র নুর উ‌দ্দিন আল মামুন হি‌মে‌লের সা‌থে কথা বলার জন্য বৃহস্প‌তিবার তার অ‌ফি‌সে গি‌য়ে তা‌কে পাওয়া যায়‌নি। মোবাইলে ফোন কর‌লেও তি‌নি রি‌সিভ ক‌রেন‌নি।

নদী আ‌ন্দোল‌নের নেতা মাস্টার আব্দুল জ‌লিল ব‌লেন, ক‌পোতাক্ষ‌কে বাঁচা‌তে হ‌লে এখনই  নদীর সীমানা চি‌হিৃত কর‌তে হ‌বে, প‌লি খনন কর‌তে হ‌বে এবং আর্বজনা ফেলা বন্ধ ও দূষিত পা‌নি নদী‌তে দেওয়া বন্ধ কর‌তে হ‌বে। 

সংবাদক‌র্মী আ‌জিজুর রহমান ব‌লেন, কতৃপক্ষ নদের সীমানা চি‌হিৃত ক‌রে। দখলমুক্ত না কর‌লে নদী‌কে বাঁচা‌নো যা‌বে না। এখন থেকেই হারাতে বসেছে চৌগাছা বাসির গর্ব কপোতাক্ষ নদ তার যৌবন।


   আরও সংবাদ