ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ ভাদ্র ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

করোনায় বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব ঘাটতি এক হাজার ৪০৩ কোটি টাকা


প্রকাশ: ২১ অগাস্ট, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


করোনায় বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব ঘাটতি এক হাজার ৪০৩ কোটি টাকা

   

বেনাপোলর থেকে আশানুর রহমান : করোনা ভাইরিসের এই মহামারিতে দেশের সবচেয়ে বড় আর বেশি  রাজস্ব দাতা বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ মেঃ টন পণ্য আমদানি হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৯৫০ মেঃ টন পণ্য। এসময় আমদানি পণ্য থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ হাজার ৬৩৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ বন্দরটি দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয়েছিল ২১ লাখ ৮১হাজার ১২৩ মেঃ টন পণ্য এবং ভারতে রফতানি হয়েছিল ৪ লাখ ১ হাজার ১৭৭ মেঃ টন পণ্য। এসময় আমদানি পণ্য থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয় ৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ কমেছে এক লাখ ৪৩ হাজার ৫৯ মেঃ টন। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ১ হাজার ৪০৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থ বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ বন্দরে আমদানি পণ্য থেকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা।

জানা যায়, দেশে সরকার অনুমোদিত ২৪টি স্থলবন্দরের মধ্যে চলমান ১২টি বন্দরের সবচেয়ে বড় আর বেশি রাজস্ব দাতা বেনাপোল স্থলবন্দর। বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক শহর কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। ভারতের কলকাতা শহর থেকে একটি ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে মাত্র ৫ ঘণ্টায় কাস্টমস ও বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে পৌছাতে পারে বেনাপোল বন্দরে। তেমনি একই সময় বেনাপোল বন্দর থেকে রফতানি পণ্য নিয়ে ট্রাক পৌছায় কলকাতা শহরে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার কারণে এপথে প্রথম থেকে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের আমদানি,রফতানি বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। 

এ বন্দরে বাণিজ্যের সাথে কাস্টমস, বন্দর, সিঅ্যান্ডএফ ও ট্রান্সপোর্টসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। আমদানি পণ্যের মধ্যে শিল্পকারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাক,গার্মেন্টস সামগ্রী,কেমিক্যাল ও খাদ্য দ্রব উল্লেখ্য যোগ্য। রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পাট, পাটজাত দ্রব, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল, জুট, গার্মেন্টস ও মাছ উল্লেখ্য যোগ্য।

বেনাপোল বন্দরের আমদানি রফতানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানির চাহিদা থাকলেও বন্দরের বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন সমস্যার কারণে ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দর দিয়ে আমদানি করছেন। 

বিশেষ করে বন্দরে আমদানি পণ্যের মান পরীক্ষণের ভাল ব্যবস্থা না থাকায় সময় ক্ষেপণে দ্রুত পণ্য খালাস করতে না পেরে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এতে আটকে থাকা পণ্যে ব্যবসায়ীরা যেমন লোকসানে পড়ছেন তেমনি পণ্যের গুণগত মানও নষ্ট হচ্ছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনে সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান,  বাণিজ্যের সিংহভাগই সম্পন্ন হয় দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে। বছরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার আমদানি বাণিজ্য থেকে সরকারের  ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় বন্দরে আমদানি পণ্য রক্ষণাবেক্ষণের ভাল ব্যবস্থা নাই। খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে আমদানি পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। এখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন হলে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় সম্ভব হবে।

সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী জানান, সম্প্রতি শুল্কফাঁকি দিয়ে এ বন্দরে আমদানি বেড়েছে। বৈধ পথে ভারত থেকে আসছে ভায়াগ্রার মত মাদক দ্রবের চালান। গত বছরে ৩ হাজার মেঃ টন ওজনের ভায়াগ্রার দুটি চালান বেনাপোল বন্দরে আটক হলেও এখন পর্যন্ত পাচারকারীরা রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।  এসব কারণে গেল ৪ বছর আমদানি পণ্য থেকে সরকারের কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। 

বেনাপোল কাস্টমসের সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা বলেন, শুল্কভবনে স্বল্প পরিসরে 'বিএসটিআইয়ের একটি শাখা চালু হয়েছে। তবে বিসিএসআইআরসহ অন্য প্রতিষ্ঠানের শাখাও যাতে দ্রুত স্থাপন করা হয় তা লিখিতভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে জানানো হয়েছে।

এছাড়া রাজস্ব আয়ে গতি ফেরাতে কাস্টমস কর্মকর্তারা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে রেলে বাণিজ্য চালু হওয়ায় বাণিজ্যে অনেক গতি ফিরেছে। দিনের দিন পণ্য খালাস হচ্ছে। যারা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য ও মাদক দ্রব  নিয়ে এসেছে তাদের  তালিকা করে এসব ব্যবসায়ীদের  বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যাতে কোন ভাবে শুল্কফাকি দিয়ে পণ্য খালাস না হয় সেদিকে সার্বক্ষণিক নজরদারী রয়েছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল শুক্রবার (২১ আগস্ট) সকালে আমদানি রফতানি পণ্যের পরিসংখ্যানের বিষয়টি  নিশ্চিত করে বলেন, ইতিমধ্যে বন্দরে বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ হয়েছে। এছাড়া নতুন জাইগা গ্রহণ, বন্দরের চারিপাশে সিসি ক্যামেরা ও প্রাচীর নির্মাণসহ বেশ কিছু কাজের পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এসব কাজ দ্রুত শুরু শুরু হবে। উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হলে তখন ব্যবসায়ীদের আর কোন অভিযোগ থাকবে না গতিও ফিরবে বাণিজ্য


   আরও সংবাদ