ঢাকা, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ ভাদ্র ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ঢাবিতে ক্যান্টিন পরিচালককে পেটালেন ভর্তি জালিয়াতকারী


প্রকাশ: ৩ অক্টোবর, ২০১৯ ১৪:০০ অপরাহ্ন


ঢাবিতে ক্যান্টিন পরিচালককে পেটালেন ভর্তি জালিয়াতকারী

   

ঢাবি প্রতিনিধি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি জালিয়াতিতে অভিযুক্ত ইশতিয়াক আহমেদ ইমনের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ক্যান্টিন পরিচালক শাহাবুদ্দিনকে রুমে ডেকে মারধর ও ছাত্রদের ভেতরে রেখে ক্যান্টিনে তালা লাগিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

আজ সকালে উক্ত হলের ৩২২ নম্বর রুমে ডেকে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে শাহাবুদ্দিনকে আহত করে ইমন। পরে আবার ক্যান্টিনে গিয়ে শাহাবুদ্দিনকে না পেয়ে ক্যান্টিনের ফ্যান ভাংচুর করেন ও নাস্তা করা অবস্থায় শিক্ষার্থীদের ভেতরে রেখে ক্যান্টিনে তালা মেরে দেন। 

ইমন ভর্তি জালিয়াতিতে অভিযুক্ত। ২০১৪-১৫ শিক্ষাব র্ষে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তি হলে নির্ধারিত সময়ে ক্লাস পরীক্ষা না দেয়ায় বর্তমানে অনিয়মিত ছাত্র হিসেবে হলে থাকছেন।

সরেজমিন পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, ইসলামিক স্ট্যাডিজ  বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র খালিদ হাসান রবিন ক্যান্টিন থেকে ৩,৪২০ টাকা বাকি খেয়েছেন। এই টাকা চাইলে রবিন শাহাবুদ্দিনকে 'ইমন ভাইয়ের' সাথে দেখা করতে বলেন। সেই দেখা করতে ৩২২ নম্বর রুমে এসে ইমনের স্টাম্পের আঘাতের শিকার হন শাহাবুদ্দিন। এ সময় ইমন অশ্লীল ও অশ্রাব্য গালিগালাজও করেন। 

এ মার খেয়ে শাহাবুদ্দিন কোন কিছু না বলে হলের বাইরে চলে যান। পরে ২য় দফা মারার জন্য এবার ক্যান্টিনে যান ইমন। শাবুদ্দিনকে না পেয়ে লাথি মেরে একটি ফ্যান ভেঙে ৩ টুকরা করে ফেলেন। গালিগালাজের পর ক্যান্টিন থেকে তালা নিয়ে দরজায় তালা লাগিয়ে দেন। এ সময় সকালের নাস্তা করা অবস্থায় শিক্ষার্থীরা ক্যান্টিনের ভেতরে আটকা পরে যান।

‍মারধরের বিষয়ে জানতে চাহিলে  শাহাবুদ্দিন তাঁর ফুলে যাওয়া হাত দেখান। বলেন, 'আমি কিছুই বলিনি। মার খেয়ে চলে আসছি'।

এর আগে চ্যানেল ২৪ এর 'সার্চ লাইট' প্রতিবেদনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় ইমনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণের সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। 

বলা হয়েছে, ডিজিটাল ডিভাইস জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্য করেন। তখন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ লিমন সকাল হওয়ার আগে ইমনকে হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেবার হল ছাড়লেও রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পর থেকে আবার বহাল তবিয়তে হলে থাকছেন। শোভন সভাপতি থেকে পদত্যাগ করলেও শোভনের কয়েকজন অনুসারীর ছত্রছায়ায় থাকায় হল প্রশাসনও তাঁর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।  

এ বিষয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ লিমন বলেন, 'আমি বিষয়টি জেনেছি। শাহাবুদ্দিন ভাইয়ের গায়ে হাত তোলার মতো বিষয়টি একদমই কাম্য নয়। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে কারো এমন কার্যক্রম মেনে নেয়া হবে না। আজকে রাতের মধ্যেই এর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।'

কয়েক মাস আগে খাবার দিতে দেড়ি হওয়ায় হলের 'আরিফের দোকানের' শাটার নামিয়ে দিয়েছিল ইমন। এর আগে বিভিন্ন সময় কক্ষে ডেকে চড় মেরে কয়েকজন ইমিডিয়েট জুনিয়রের কানের পর্দা ফাটিয়ে দিয়েছেন । প্রায়ই রাতে মাদক গ্রহণ করে অসংলগ্ন আচরনসহ গালিগালাজ করে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর ব্লকের কয়েকজন শিক্ষার্থী।

জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশের পর থেকে ইমনের আগের ফোন নম্বর বন্ধ করে দিয়েছেন। নতুন নম্বরও গোপন রাখেন। এ পর্যন্ত তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি। 

হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জিয়া রাহমান বলেন, 'আমি খবর শুনে আবাসিক শিক্ষকদের নিয়ে ক্যান্টিন পরিদর্শন করেছি। ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। আবাসিক শিক্ষক, হল সংসদ, ও ঘটনায় জড়িতদের নিয়ে মিটিং করেছি। পরে অধ্যাপক ড. আফজালের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামী ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে'।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রাব্বানীকেও ঘটনা অবহিত করেছেন প্রাধ্যক্ষ।


   আরও সংবাদ