ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ ভাদ্র ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশা, চিকিৎসক ৫ জন!


প্রকাশ: ১ নভেম্বর, ২০১৯ ১৪:০০ অপরাহ্ন


মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশা, চিকিৎসক ৫ জন!

   

আব্বাস উদ্দীন : চিকিৎসকসহ জনবল সংকটে যশোরের মণিরামপুর ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশায়। পাঁচ লক্ষাধিক অধ্যুষিত এ উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতালটি ৮ বছর আগে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এখনও সেই ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে অত্যান্ত নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। 

এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ৩১ শয্যার জনবলও নেই!  আবাসিক মেডিকেল অফিসার, এ্যানেসথেসিষ্ট, শিশু বিশেষজ্ঞ, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (রেডিও গ্রাফার), প্যাথলজিষ্ট, সহকারি সার্জনসহ গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহ দীর্ঘদিন ধরে শুন্য রয়েছে। স্যাকমো (উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার) দিয়ে কোন প্রকার দায়সারা গোছের চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা। ৩৮ চিকিৎসকের স্থলে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক এ হাসপাতালে কর্মরত থাকায় স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার সাধারণ জনগণ।

এছাড়া হাসপাতালের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির জনবলের অবস্থা আরো নাজুক। এক্স-রে মেশিনটি দীর্ঘদিন পড়ে আছে। কোন এমটি (মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট) না থাকায় সম্প্রতি যশোর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে কর্মরত এমটি আনিসুর রহমান সপ্তাহে ৩ দিন এবং পাশ্ববর্তী ঝিকরগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত এ্যানেসথেসিষ্ট ডাঃ সুচিন্ত দত্ত সপ্তাহে ২ দিন আসেন। যার ফলে কিছু রোগীর অপারেশন হয়।

জানা যায়, প্রায় ৫ লক্ষাধিক জন অধ্যুষিত দেশের বৃহত্তম এ উপজেলায় ১টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ২টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ১৫টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। ২০১১ সালে উপজেলা সদরে অবস্থিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও সেই আগের জনবল কাঠামোয় রয়েছে। কিন্তু ৫০ শয্যার জনবল তো দূরের কথা ৩১ শয্যার জনবল কাঠামোর সিংহভাগ পদই এখানে শুন্য রয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩১ শয্যার জনবল কাঠামোর বিধি অনুযায়ী চিকিৎসক থাকার কথা রয়েছে ২১ জন কিন্তু এর বিপরীতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছে মাত্র ৫ জন। ১ জন মিডওয়াইফ (ধাত্রী) সহ ২২ নার্সের বিপরীতে ১৯ জন থাকলেও করুণ অবস্থা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্ষেত্রে। ১০৫ জন তৃতীয় শ্রেণির বিপরীতে রয়েছে ৫৫ জন এবং ২২ চতুর্থ শ্রেণির বিপরীতে রয়েছে ১০ জন ।

অপরদিকে ৫০ শয্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসক ৩৮জন, ২য় শ্রেনি ২২, ৩য় শ্রেণি ১৭৭ এবং ৪র্থ শ্রেণির পদ ২৪ জন থাকার কথা রয়েছে।

হাসপাতালে আরেক জনগুরুত্বপূর্ণ এক্স-রে মেশিনটি দীর্ঘদিন পড়ে থাকলেও কোন লোক নেই। সম্প্রতি যশোর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে কর্মরত মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট আনিসুর রহমান সপ্তাহে ৩ দিন আসেন।

পাশ্ববর্তী ঝিকরগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত এ্যানেসথেসিষ্ট ডাঃ সুচিন্ত দত্ত সপ্তাহে ২ দিন আসেন বিধায় রোগীর অপারেশন হয়। এদিকে একটু জটিল রোগী হাসপাতালে আসলেই তাদেরকে যশোর ২শ’৫০ শয্যা হাসপাতালে রেফার করা হয় বলে ভূক্তভোগী অনেক রোগী-সাধারণ অভিযোগ করেন। 

সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) মণিরামপুর উপজেলা কমিটির উপদেষ্টা ও মণিরামপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অরুণ কুমার নন্দন বলেন, বৃহত্তর এ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির নানাবিধ সমস্যার কারণে যথাযথ স্বাস্থ্য সেবা থেকে জনগণ বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি খুবই কষ্টের ও দুঃখ জনক। তিনি এ সংকট উত্তরণে অতি দ্রুত সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ শুভ্রারানী দেবনাথ চিকিৎসকসহ জনবল সংকটের কথা জানিয়ে বলেন, ৩৯তম বিসিএস ক্যাডার (স্বাস্থ্য) নিয়োগকৃতদের পদায়ন হলে সংকট অনেকটা দুর হবে।

জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ দিলীপ কুমার রায় বলেন, ইতোমধ্যে জেলার ৫০ শয্যায় উন্নীত অন্যান্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবল পূরণ হয়েছে। মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির শর্ত পূরণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

উপজেলার ভূক্তভোগী জনগন ও সচেতন মহল কাংঙ্খিত চিকিৎসকসহ জনবল নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।


   আরও সংবাদ