ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ ভাদ্র ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রামে লাগামহীন পেঁয়াজের বাজার, ২০০ ছেড়েছে


প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর, ২০১৯ ১৩:০০ অপরাহ্ন


চট্টগ্রামে লাগামহীন পেঁয়াজের বাজার, ২০০ ছেড়েছে

   

নিউজ ডেস্ক: প্রশাসনের দফায় দফায় অভিযান, বড় শিল্প গ্রুপের পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা, বিকল্প আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও দেশে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। ভারত থেকে রফতানি বন্ধের দেড় মাসের মাথায় দেশের পেঁয়াজের বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে।

চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে একদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪০ টাকার মতো। চট্টগ্রাম নগরীতে খুচরা দোকানে পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে ১৯০ টাকায়। শহরের বাইরে দেশের গ্রামীণ এলাকার বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০০ টাকায় পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মার্কেট কাঁচামাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিচ  বলেন, বাজারে পেঁয়াজ নেই। চাহিদার তুলনায় আমদানি খুবই সামান্য। সরকারের পক্ষ থেকে কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপ বড় অঙ্কের পেঁয়াজ আমদানি করবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল। সেই পেঁয়াজ এখনো বাজারে আসেনি। সেটা না আসা পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম বাড়তে বাড়তে কোথায় গিয়ে ঠেকবে, সেটা আমরাও বলতে পারছি না।

খাতুনগঞ্জের কোনো আড়তে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ভারতের পেঁয়াজ দেখা যায়নি। মিয়ানমারের পেঁয়াজ ভালো মানের ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা এবং মাঝারি মানের ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মিশর, চীন ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের গ্রামীণ বাণিজ্যালয়ের মালিক বলাই কুমার পোদ্দার  বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) মায়ানমারের পেঁয়াজ আমরা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা বিক্রি করেছি। একদিনে দাম ৪০ টাকা বেড়ে গেছে। মিশর, চীন, পাকিস্তানের পেঁয়াজের দামও কিছুটা বেড়েছে। তবে এসব পেঁয়াজের চাহিদা তেমন নেই।

পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাবার বিষয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, সারাদেশের সব ক্রেতা খাতুনগঞ্জে চলে এসেছে। এখান থেকে পেঁয়াজ কিনে বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যেতে চান তারা। এর ফলে চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। দিনে ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাকের চাহিদা আছে। কিন্তু বাজারে ১৫-২০ ট্রাকের বেশি আসছে না। স্বাভাবিকভাবেই দাম বাড়ছে।

এদিকে পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব সঙ্গে সঙ্গেই পড়েছে খুচরা বাজারে। চট্টগ্রাম নগরীর আসকার দিঘীর পাড়, কাজীর দেউড়ি, চেরাগি পাহাড় এলাকায় কয়েকটি খুচরা মুদির দোকানে ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখেছে। কাজীর দেউড়ির বাজারের পাশে একটি দোকানে মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

আসকার দিঘীর পাড়ের একটি দোকানে ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়া গেছে। তবে দাম বেড়ে যাওয়ায় দোকানি বিক্রিতে আগ্রহী নন। ওই দোকানে ভারতের পেঁয়াজ প্রতিকেজি ২০০ টাকা দর হাঁকাতে এবং মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৭০ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

গত সেপ্টেম্বরে ভারত আকস্মিকভাবে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়। মুহূর্তের মধ্যে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। পাইকারিতে কেজিপ্রতি ৩০ টাকার পেঁয়াজ দিনশেষে দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে বিক্রি হতে শুরু করে। আর খুচরা বাজারে সেটা ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

এ অবস্থায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন পাইকারী ও খুচরা বাজার, আমদানিকারকের আড়তে অভিযান শুরু করে। পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও করে প্রশাসন। প্রতিবার অভিযানের পর পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা কমলেও দুয়েকদিন পরই তা আবারও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় হাল ছেড়ে দিয়েছে প্রশাসনও।


ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইদ্রিচ  বলেন, ‘প্রশাসন চাপ দিচ্ছে, ঠিক আছে। কিন্তু চাপ প্রয়োগ করে তো বাজার স্বাভাবিক করা যাবে না। যতক্ষণ পেঁয়াজ পর্যাপ্ত আমদানি হবে না কিংবা বাজারে আসবে না, ততক্ষণ বাজার স্বাভাবিক হবে না।

ব্যবসায়ী বলাই কুমার পোদ্দার  বলেন, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত আজ প্রত্যাহার করলে কাল থেকে দেশের বাজারে দাম কমতে শুরু করবে। ভারতের মহারাষ্ট্রের নাশিক থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত পেঁয়াজ দেশের বাজারে এসে পৌঁছবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত দাম আগের অবস্থায় আসবে না।

সম্প্রতি এস আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে ৫৫ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেওয়া হয়। আরও চারটি শিল্প গ্রুপ পেঁয়াজ আমদানি করছে বলে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে তথ্য দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানির জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছে ৬৫ হাজার ৯৩০ টনের। এর বিপরীতে এসেছে মাত্র চার হাজার ৮১৫ টন।

ঘোষণার পরও যথাসময়ে শিল্পগ্রুপের আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে না আসাকেও দাম বাড়ার অন্যতম কারণ বলছেন ব্যবসায়ীরা।

মোহাম্মদ ইদ্রিচ বলেন, বড় গ্রুপ যখন আমদানি করছে, তখন ছোট ছোট আমদানিকারকদের কেউ কেউ আর এলসি খোলেননি। বাজার পড়ে গেলে শুধু শুধু লস দেবে কে? প্রশাসন চাপ দিয়ে কাউকে কাউকে দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির এলসি খুলতে বাধ্য করেছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, পেঁয়াজ বাজারে আসতে হবে। না হলে দাম পড়বে না।


   আরও সংবাদ