ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ ভাদ্র ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

তুরস্কে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশীপের আবেদন শুরু


প্রকাশ: ২১ জানুয়ারী, ২০২০ ১৩:০০ অপরাহ্ন


তুরস্কে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশীপের আবেদন শুরু

   

আনাদলু বিশ্ববিদ্যালয়, এসকিশেহীর, তুরস্ক থেকে মশিউর রহমান : উসমানিয়া খিলাফতের কেন্দ্রবিন্দু, ঐতিহ্য, শিল্প, সংস্কৃতি আর বিশ্ব রাজনীতে আলোচনায় থাকা তুরস্ক সরকারের ঘোষিত তুরস্ক সরকারী স্কলারশীপের আবেদন শুরু হয়েছে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে এক যোগে শুরু হওয়া এই আবেদন ১০ ই জানুয়ারী শুরু হয়েছে, চলবে ২০ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ব্যাচেলর, মাস্টার্স আর পিএইচডি অধ্যয়নে ইচ্ছুক ছাত্ররা স্কলারশীপের ওয়েব সাইট থেকে বিনা ফিতে এই আবেদন করতে পারবেন।

আপনারা যারা স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাহিরে পড়াশুনার জন্য নিজেদের মানসিকতা তৈরি করেছেন কিন্তু ভাল কোন স্কলারশিপ এর তথ্য না পাওয়ায় আবেদন করতে পারছেন না তাদের জন্যই আজ তুরস্কের সরকারী স্কলারশীপ লিখেছেন, ২০১৪ সাথে স্কলারশিপ নিয়ে বর্তমানে তুরস্কের আনাদলু বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার উপরে অধ্যয়নরত মশিউর রহমান।

স্কলারশিপ পরিচিতিঃ
তুরস্ক সরকারী স্কলারশিপ মুলত তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকে কালচার এবং টুরিস্ট মন্ত্রনালয়ের অধীনে থাকা Yurtdışı Türkler ve Akraba Topluluklar Başkanlığı (YTB) এর রক্ষনাবেক্ষনে দেয়া হয়ে থাকে। এই স্কলারশীপের অধীনে বিশ্ব থেকে প্রতি বছর লক্ষাধিক আবেদনের মধ্য থেকে বাছাই করে ৩ স্তরে মোট ৫ হাজার ছাত্রকে নির্বাচিত করা হয়। তবে রিচার্স এর জন্যও প্রতি বছর বেশ কিছু গভেষনায় ইচ্ছুকদেরও এই স্কলারশীপ দেয়া হয়। বিগত বছরগুলো পর্যালোচনা করলে বাংলাদেশ থেকে এই ৩ লেভেল প্রতি বছর এ গড়ে ৪০-৫০ জন শিক্ষার্থী এই স্কলারশিপের জন্য নির্বাচিত হয়ে থাকেন।

কি কি সুবিধা নিয়ে থাকছে এই স্কলারশিপঃ
আনার্স লেভেল এর জন্য সাধারনত ৪ বছর মেয়াদী মূল কোর্সের সাথে এবং ১ বছর তার্কিশ ভাষা কোর্স এর যাবতীয় খরচ এবং মাসে নগদ ৮০০ তার্কিশ লিরা। সরকারী ছাত্রাবাসে থাকা ও খাওয়ার ফ্রি সুবিধা। মাস্টার্স এর জন্য ২ বছর মেয়াদী মূল কোর্স আর সাথে ভাষা কোর্স এর খরচ, মাস্টার্সে অধ্যায়নরত এবং বিবাহিত ছাত্রদের যারা সরকারী ডরমেটরীতে থাকবেন না তাদের জন্য ২য় বছর থেকে ৫৫০ লিরা বাসা ভাড়া। আর মাসে ১১০০ লিরা নগদ স্টাইপেন। পিএইচডি এর জন্য ৪ বছর মেয়াদী মূল কোর্স আর ভাষা কোর্স এর সাথে থাকছে মাসিক নগদ ১৬০০ তার্কিশ লিরা এবং বাসা ভাড়া বাবদ ৫৫০ লিরা। এছাড়াও সকল ছাত্রদের জন্য থাকছে তুরস্কের অবস্থান কালীন সময়ের জন্য সরকারী হেলথ বিমা। সেই সাথে তুরস্কে প্রথম আসা আর শিক্ষা শেষে যাওায়ার সময়ের বিমান টিকেট।

আবেদনকারীর বয়সঃ
২০২০ সালে আবেদনকারীর অনার্স এর জন্য ২১ বছর, মাস্টার্স এর জন্য ৩০ আর পিএইচডি এর জন্য ৩৫ বছর এর বেশী না হওয়া।

আবেদন এর সময়কালঃ
২০২০ সালের আবেদন এর সময়কাল ১০ই জানুয়ারি থেকে ২০ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। যারা আবেদন করতে ইচ্ছুক তারা http://www.turkiyeburslari.gov.tr/  ওয়েব সাইটে গিয়ে আবেদন করতে পারবেন। আর সেই সাথে

কি কি প্রয়োজন আবেদন এর জন্যঃ
তুরস্ক সরকারী স্কলারশিপের আবেদন করতে আপনাকে রেডি করতে হবে বিগত পরিক্ষার সকল মূল কাগজপত্র।
১/ বিগত পরিক্ষার সকল সার্টিফিকেট
২/সকল মার্কশীট
৩/২টি রেফারেন্স লেটারস
৪/পাসপোর্ট বা জন্ম নিবন্ধন
৫/পাসপোর্ট সাইজের ছবি
৬/বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা প্রতিযোগিতা থেকে পাওয়া নানান যোগ্যতার সার্টিফিকেট (যদি থাকে)
৭/মাস্টার্স ও পি এইচ ডি এর জন্য কোন লেখা পাব্লিকেশন (যদি থাকে) তার কপি বা লিংক।

যেহেতু প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হবে সেক্ষেত্রে প্রথমে উপোরোক্ত সকল ডকুমেন্টস এর স্ক্যান কপি লাগবে। আর যখন ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকবে, তখন সকল মূল ডকুমেন্টস দেখাতে হবে। সাথে যারা জন্ম নিবন্ধন দিয়ে আবেদন করেছে তাদের পার্সপোর্ট দেখানো ভাল। আবেদন করতে অনার্স লেভেল এর জন্য এইচএসসি বা আলিমে সর্বোনিম্ন জিপিএ ৪.০০ অর্থাৎ ৭০ ভাগ মার্কস। মাস্টার্স ও পিএইচডি এর জন্য আগের লেভেল গুলোতে সর্বোনিম্ন ৭৫% থাকতে হবে। যারা মেডিকেল এর জন্য আবেদন করতে চান তাদের জন্য ৯০% মার্কস থাকা বাধ্যতামূলক।

পড়াশুনার মাধ্যমঃ
যারা তুরস্কে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে চায় তাদের প্রথমেই মাথায় যে ব্যাপার টি সেভ করে নিতে হবে তা হল এখানে এসে তার্কিশ ভাষায় পড়তে হবে। এরপর যদি কারো ভার্সিটি গ্রহন করে আর ব্যাক্তির IELTS, TOFEL বা অন্য কোন ইংলিশ লেভেল প্রমান করে এমন প্রফেসিয়েন্সি এক্সাম রেজাল্ট থাকে সেটা দেখাতে হবে।। তবে হা, যেহেতু সবাইকে এক বছর তার্কিশ ভাষা শিখানো হবে আর পরিবেশের কারনে সবাই তার্কিশ ভাষা শিখে ফেলবেন তাই আপনি এই ভাশায় পড়তে সক্ষম হবেন। বাংলাদেশেও এই সার্টিফিকেট এর পূর্ন মান দেয়া হয়।

যে বিষয় গুলো আবেদন করতে পারবেঃ
বাংলাদেশের একটি সাধারন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিভাগ ভিত্তিক যে সব বিষয়ে আবেদন করতে পারে, এখানে তার থেকে ও আপনাদের পছন্দ মত আরো বেশী বিষয়ে আবেদন করতে পারবেন।

বাছাই প্রক্রিয়াঃ
অসংখ্য ছাত্রদের থেকে, আবেদন করার সময় আপনাদের পছন্দ করা বিষয়গুলো থেকে (আপনি ৬ থেকে ১২ টি বিষয় পছন্দ করতে পারবেন, সাথে বিশ্ববিদ্যালয়) আর আপনার সার্বিক রেজাল্ট অনুযায়ী যোগ্য মনে হলে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকা হবে। তবে এখান থেকেই সাধারনত বিশাল একটা ভাগ বাদ পড়ে যায়। ইন্টারভিউ এর জন্য যাদের ডাকা হয়ে থাকে তাদের থেকে বাছাই করে চুড়ান্ত ফলাফল শিক্ষার্থীর মেইল এর মাধ্যমে দেয়া হয়।

চুড়ান্ত বাছাইয়ের পরঃ
যদি আপনি চুড়ান্ত বাছাই হন এর পর আপনাকে আপনার সকল ডকুমেন্টস গুলো তার্কিশ ভাষা অনুবাদ করাতে হবে। পাসপোর্ট আর এম্বাসী থেকে নির্ধারিত মেডিকেল এ মেডিকেল সম্পন্ন করে বাকি সকল ডকুমেন্টস নিয়ে বাংলাদেশ থাকা তার্কি এম্বাসীতে ভিসা আবেদন করবে। তারা নির্ধারিত সময়ে ভিসা প্রদান করলেই আপনি, ভিসা ও টিকেট পেয়ে যাবেন । সেই সব নিয়ে না হয় আর একদিনই লিখব। সবার জন্য থাকছে অনেক শুভ কামনা।


   আরও সংবাদ