ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ ভাদ্র ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের দ্বীপ সোনার চর


প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ ১৩:০০ অপরাহ্ন


নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের দ্বীপ সোনার চর

   

রাঙ্গাবালী পটুয়াখালী থেকে এম এ ইউসুফ আলী : প্রকৃতিময় পর্যটন কেন্দ্রগুলো অন্যসব ঋতুর তুলনায় শীতে বেশি সজ্জিত থাকে আর পর্যটকরাও ভ্রমণের জন্য বেঁছে নেয় এ সময়কে। এই শীতে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা সংলগ্ন বঙ্গপসাগরের কোল ঘেঁষে জেগে থাকা সোনার চররের প্রকৃতি মেলেছে ডানা। প্রকৃতির সাঁজে সজ্জিত এই দ্বীপটিতে উড়ে আসা অতিথি পাখিদের কলকাকলি সমুদ্র সৈকতের অপরূপ রূপকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলেছে। 

অতিথি পাখির কলরব আর সাগরের ঢেউয়ের গর্জনে মুখরিত হয়ে ওঠেছে সোনার চরের পরিবেশ। সাগরের আছরে পরা ঢেউ গুলোও কোন চিত্র শিল্পীর রঙ তুলির পরশ মনে হয়। ফেনিল নোনা জলে ভেজা তটরেখায় চলে লাল কাঁকড়াদের ছোঁটাছুটি। সামান্য দূরেই ঝাউ বাগানের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা বাতাসের শো শো আওয়াজ। ঝাউ গাছের ঝরা পাতাগুলো শুকনো বালুর ওপর যেন কার্পেটের নরম বিছানায় পরিনত হয়ে আছে। নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের যাবতীয় আয়োজন রয়েছে এ দ্বীপটিতে। 

নদী আর সাগরের জল আছড়ে আছে এ দ্বীপের চারপাশে। সোনারচরের চিকচিক বালিতে যেন ভোরের কোমল সূর্য আলো ছড়ায়। অস্তগামী সন্ধ্যার লালিমা তেমনি মায়া ঢালে নিভৃতে। অপরূপ সোনারচর স্বর্নালী স্বপ্নের মতই বর্নিল শোভায় ঘেরা। অন্তত একবার এসে ঘুরে দেখুন দেশের ভিতর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমী এই দ্বীপটিকে।

প্রকৃতিরটানে: সোনারচরের আকর্ষণ যেকোন মানুষকেই কাছে টানে। এখানে পা না ফেললে এটা বোঝার উপায় নেই। এখানে রয়েছে প্রায় দশ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত আর সৈকতের গা ঘেঁসে জেগে থাকা ঝাউবন এখানকার সৌন্দর্য আরও অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। হরিণ, বন্য মহিষ, সুকর ও উদসহ নানা প্রজাতির প্রাণী রয়েছে এখানে। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে কোন দর্শনার্থীকে স্থানন্তর হতে হয়না। একই স্থানে দাড়িয়ে এ দৃশ্য উপভোগ করা যাবে। প্রভাত আর গোধুলি ক্ষনই সোনারচরের অন্যতম আকর্ষণ।

কুয়াশার চাদরে ঢাঁকা পূর্ব আকাশের দিগন্ত ছুঁয়ে উঁকি দেয় ভোরের নতুন সুর্য। শেষ বিকালে রক্তরঙ সূর্যটা রক্তিম আভা ছড়িয়ে সমুদ্রের কোলে নীড় খোঁজে। তখন সোনারচরের স্বর্ণময় রূপের নীলজলকে স্বর্ণালী করে তোলে। গোধুলির আচ্ছন্নতায় ম্লান হয় সোনারচরের আলো। নিজের রূপের আয়নায় ঘোমটা টেনে আরেকটি নতুন সকালের অপেক্ষায় ঘুমিয়ে পড়ে সমুদ্রের কোলে জেগে ওঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় সোনারচর।

পাখির গানে ঘুম ভাংবে কোন দর্শনার্থীকে সকালে ঘুম থেকে ডেকে উঠাতে হবেনা। পাখির গানেই ঘুম ভাংবে। এমনকি ঘুম থেকে জগে ঘড়ির কাটাও দেখতে হবেনা। বনের পাখিরা অপেক্ষামান সময়ের আওয়াজ তোলে সর্বদাই। কখন রাত বারোটা বাজলো, কিংবা কখন ভোর তা ঘড়ি দেখে কারও বোঝার প্রয়োজন হবেনা এখানে। 

এই সময়গুলোতে পাখিরা একযোগে আওয়াজ তুলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে কথাই মনে করিয়ে দেয়। বর্তমান শীত মওসুমে স্থানীয় পাখিদের দলে যোগ দেয় হাজারো অতিথি পাখি। সাইবেরিয়ান হাঁস, সরাইল, গাঙচিলসহ নানা জাতের পাখির উদ্বভাব হয়।

আয়তন ও আকৃতি: ভূখন্ড পরিমাপের হিসাবে সোনারচরের আয়তন দশ হাজার একর। চরটি দেখতে অনেকটা বাদামের দানার আকৃতির মত। সোনারচর ও এর পার্শ্ববর্তী চর আন্ডার মাঝখানে একসময় বড় নদী ছিল। চর পড়ে সে নদী এখন ছোট হয়ে গেছে। শুকনো সময়ে পায়ে হেঁটেই পার হওয়া যায়। সোনারচর চ্যানেল সরু হয়ে গিয়ে বনের সৌন্দর্য্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়াও অগনিত চ্যানেল রয়েছে সোনার চরের আশে পাশে।

পর্যটকরা ঘুরতে পারেন নৌকা অথবা ট্রলার নিয়ে। চ্যানেলের দুই পাশ জুড়ে বহু পুরনো ম্যানগ্রোভ আর ঝাউ বন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে পাশাপাশি চরের কোল ঘেঁষে অবস্থান মৌসুমি জেলে ও জেলে শ্রমিকের। এই শীত মৌসুমে নানা স্থান থেকে ব্যবসার জন্য এই চরটিতে আশ্রয় নেয় অগনিত জেলে।

যাওয়ার পথ: প্রথমে পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে গলাচিপা উপজেলায় পৌঁছাতে হবে কোন দর্শনার্থীকে। সেখান থেকে যে কোন ভাড়াটে মটর সাইকেল মাধ্যমে পৌঁছাতে হবে আগুনমুখা নদীর মোহনায়। আগুন মুখার তীরে পৌঁছালে বুড়াগৌরাঙ্গ ও দাঁড়ছিড়া নদী পাড়ি দিতেই দু’পাশ জুড়ে ঘন ম্যানগ্রোভ বনের দৃশ্য তার মনকে দ্বীগুন প্রানবন্ত করে তুলবে। ট্রলার কিংবা লঞ্চযোগে আগুনমুখার মোহনা থেকে ঘণ্টা দুয়েক এগুলেই চোখে পড়বে মায়াবী দ্বীপ-‘চর তাপসী’। তাপসীর দুই পাশ জুড়ে বিরল দৃশ্য অতিক্রম কালেই সোনার চরের হাতছানি। তাপসী থেকে ৩০ মিনিটের পথ দক্ষিণে এগুলেই সোনারচর। স্পীডবোটের ব্যবস্থা রয়েছে। বৃত্তবানরা যেতে পারেন স্পীডবোট নিয়েও। এছাড়াও রয়েছে ইঞ্জিন চালিত ট্রলার।

রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর থেকে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ও স্পীডবোটে সোনারচর যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর থেকে স্পিড বোটযোগে সোনার চরে পৌছাতে মাত্র এক ঘণ্টা সময় লাগবে। আবার কুয়াকাটা থেকে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সোনারচরে যাওয়া যায়।

থাকার জায়গা: সোনারচরে রাত্রিযাপনের জন্য নিরাপদ আরামদায়ক ব্যবস্থা এখন গড়ে ওঠেনি। তবে প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটকদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ছোট্ট তিন কক্ষের একটি বাংলো। রয়েছে বন বিভাগের ক্যাম্প। এসব স্থানে রাতে থাকার সুযোগ রয়েছে।


   আরও সংবাদ