ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ ভাদ্র ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ইউনেস্কো-ব্রাজিল ও দূতাবাসের যৌথউদ্যোগে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন


প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ ১৩:০০ অপরাহ্ন


ইউনেস্কো-ব্রাজিল ও দূতাবাসের যৌথউদ্যোগে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন

   

কূটনৈতিক প্রতিবেদক : একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে এবছরের ইউনেস্কো প্রতিপাদ্য "ল্যাঙ্গুয়েজ উইথআউট বর্ডার্স"-এর আলোকে ব্রাসিলিয়াতে এবারের দু'দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছিল।

প্রথম পর্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহন আরো সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে এবার ১২টি দেশের ১৫টি সাংষ্কৃতিক উপস্থাপনায় সাজানো হয়েছিল ২০শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার অনুষ্ঠানমালা।

গত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারের আয়োজনেও ইউনেস্কো-ব্রাজিল ও রাজধানী ব্রাসিলিয়া সরকারের সংষ্কৃতি ও শিক্ষা বিভাগ দূতাবাসের এ উদ্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।

ব্রাজিলেএকুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসউদযাপনে এ দুটি সংগঠনের অংশীদারিত্বএখন একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।ব্রাজিলের ২১ কোটি জনগণ এবং এদেশেবসবাসকারী লক্ষ লক্ষ বিদেশিদের কাছেএকুশের বার্তা পৌঁছে দিতে এই যৌথউদ্যোগ আগামীদিনগুলোতেও  গুরুত্বপূর্ণভূমিকা পালন করবে, সেটা এখন নির্দ্বিধায়বলা যায়।

২০শে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান তাঁর স্বাগত বক্তব্যেভাষাসংগ্রাম থেকে শুরু করে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য বাঙালি জাতির বীরত্বগাঁথাতুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের একুশেকিভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হলো, সে গৌরবের দিনগুলিও তিনি তুলে ধরলেনআন্তর্জাতিক এই সমাবেশে। 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্মার্থ তথা পৃথিবীর সবভাষাকে বাঁচিয়ে রাখা এবং সব ভাষাভাষী মানুষের তাঁদের নিজ নিজ মায়ের ভাষায়কথা বলার অধিকার নিশ্চিতের জন্যওতিনি আহবান জানান।

তিনি বলেন যে,ভাষা একটি জাতিগোষ্ঠীর সাংষ্কৃতিক বাজাতিগত পরিচয় বংশপরম্পরায় বয়েনেয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী বাহন এবং পৃথিবীর সব জাতি গোষ্ঠী গুলোর সংষ্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সবার ভাষাকে বাঁচিয়েরাখা তাই জরুরী।

বাঙালির মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকাররক্ষায় শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত একুশেআজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসেরমর্যাদায় অভিষিক্ত। একদা একান্ত ভাবেই বাংলাদেশের এই দিবসটি আজ রাজনৈতিক সীমান্ত ছাড়িয়ে পালিত হচ্ছে পৃথিবীর সর্বত্র।

একুশের প্রেক্ষাপট,ইতিহাস বা পৃথিবীর সব ভাষার মর্যাদাপূর্ণঅবস্থানের সংগ্রামে একুশের অবদানএসবই  বিশ্বসভায় তুলে ধরার দায়িত্ব তাইআজ সব বাঙালির এভাবেই ব্রাজিলেএবার বৃহত্তর পরিসরে একুশে ওআন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের আয়োজনের প্রাসঙ্গিকতা বর্ণনা করলেন ব্রাজিলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান। 

অনুষ্ঠানে বিপুল দর্শকউপস্থিতির সুযোগ নিয়ে রাষ্ট্রদূত জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরজন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মুজিববর্ষেবাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজন গুলোতে অংশ গ্রহনের জন্যও সবার প্রতি আহবান জানান।

ইউনেস্কো ও ব্রাসিলিয়া সরকারের প্রতিনিধিবৃন্দ তাঁদের বক্তব্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্বের প্রতি আলোকপাত করে এবিষয়ে কাজ করে যাওয়ার জন্য তাঁদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

 এ ধরণের একটি সত্যিকারেরআন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমেদিনটিকে সবার মাঝে পরিচিত করার এপ্রয়াসের জন্য  ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁরাবলেন যে, ব্রাজিলে  বাংলাদেশ দূতাবাসেরএ উদ্যোগে তাঁরা ভবিষ্যতেও সহযোগিতা করবেন।

ইউনেস্কো-ব্রাজিলের পরিচালক, ব্রাসিলিয়াসরকারের গভর্নরের প্রতিনিধিবৃন্দ, ব্রাজিলপররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া বিভাগেরমহাপরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ,ব্রাজিল সরকারের বিভিন্ন স্তরের সামরিকও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, রাষ্ট্রদূতবৃন্দসহ শতাধিক কূটনীতিক, ব্রাজিলিয়ান ওঅন্যান্য বিদেশীসহ চারশতাধিকদর্শকশ্রোতা এ আয়োজনে উপস্থিত থেকেবাঙালির প্রিয় একুশেকে সত্যিকারভাবেইসেদিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসেরুপান্তরিত করেছিল। বিশ্ব-সংষ্কৃতির এক মিলনমেলা যেনো বসেছিল ব্রাসিলিয়াতে সেই সন্ধ্যায়।

বাংলাদেশের উপস্থাপনায় "আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কিভুলিতে পারি" বা "চলো বাংলাদেশ, চলোবিশ্ব উঠানে, চলো বাংলাদেশ, চলোবিজয়ের টানে", স্প্যানিশ ফ্লামিংগো, ব্রাজিলের ইউনেস্কো-স্বীকৃত ঐতিহ্য কাপোয়েইরার  বা ফোঁহো এন্ড সাম্বার মনমাতানো পরিবেশনা, জাপানেরহিকারীদাইকো-তাইকো ড্রামেরউচ্চনিনাদের পরিবেশনা, এ্যাঙ্গোলারআফ্ৰিকান ঐতিহ্যবাহী  নাঁচ, আর্জেন্টিনারবিশ্বখ্যাত ট্যাংগো, গ্রিসের পরিবেশনায়হেলেনিক সংষ্কৃতির একগুচ্ছ উপস্থাপন, কিউবার মনমাতানো আর রুদ্ধশ্বাস ব্যালেপরিবেশনা, ব্রাজিলের স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী আনা লেইলার পরিবেশনায় 'শান্তির' গানের  মূর্ছনা, দর্শক মাতানো মিসরের  লোকনৃত্য, জ্যামাইকার পরিবেশনায় "সিয়ার স্বপ্ন", সংযুক্ত আরব আমীরাতের পরিবেশনায় ঐতিহ্যবাহী আরব নৃত্য, সিরিয়ার কণ্ঠশিল্পী দিয়ালাফায়াদের সুরেলা আরবি সঙ্গীতের পরিবেশনা, এসবই উপভোগ করেন হলভর্তিচার শতাধিক দর্শক তিন ঘন্টাব্যাপী এ অনুষ্ঠানে।

মুহূর্মুহু করতালিতে সিক্ত হনশিল্পীরা।দূতাবাসের এ অনন্য আয়োজনের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশী, কূটনৈতিক কোরের সদস্যবৃন্দ , ব্রাজিলিয়ান ও অন্যান্য বিদেশিরা দূতাবাসকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান অকুণ্ঠ চিত্তে।

আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বে একুশের সকালেরাষ্ট্রদূত জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরনকরে দিনের কর্মসূচীর সূচনা করেন। এরপর প্রবাসী বাংলাদেশী ও দূতাবাস পরিবারের সদস্যদের সাথে দূতাবাসে স্থাপিত শহীদমিনারে পুষ্পস্তবক অৰ্পন করেন। দূতাবাসে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে শহীদ দিবস ওআন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি,  প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণীসমূহ পড়ে শোনানো হয়। এউপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় প্রবাসীবাংলাদেশীসহ আলোচকরা বায়ান্নরশহীদদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেবলেন যে, বাঙালির ভাষা আন্দোলনই ছিল বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামেরসূত্রপাত। আজকের স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু কন্যা  প্রধানমন্ত্রীর হাতকেশক্তিশালী করার বিষয়েও তাঁরা প্রত্যয় ব্যক্তকরেন।

রাষ্ট্রদূত তাঁর সমাপনী বক্তব্যে ভাষাআন্দোলনের প্ৰেক্ষিত বর্ণনা করে বলেন যে,ভাষাশহীদদের সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায়দীক্ষিত হয়ে আজ আমাদের কাজতাঁদের স্বপ্নের সবরকমের বঞ্চনাহীন একবাংলাদেশ গড়ে তোলা বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় অংশগ্রহণ করে একটিশোষণ ও বঞ্চনামুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে তিনি সবার প্রতি আহবান জানান।প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে তিনি বলেন যে, আজকের শিশুরা যাতে বাংলাভাষা  শুদ্ধভাবে শিখতে ও চর্চ্চা করতেপারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রত্যেকটিবাবা-মায়ের কর্তব্য। ভাষা শহীদদের প্রতিসেটাই হবে আমাদের সর্বোৎকৃষ্ট শ্রদ্ধার্ঘ্য।

সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা অন্যান্যদের উপরচাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতবলেন যে, বায়ান্নর ভাষাশহীদরা শুধুমাত্রতাঁদের মাতৃভাষার তথা বাংলাভাষারঅধিকার রক্ষার জন্যই সেদিন আত্মাহুতি


   আরও সংবাদ