ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ ভাদ্র ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শবে মেরাজ'এর শিক্ষা


প্রকাশ: ২৭ মার্চ, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


শবে মেরাজ'এর শিক্ষা

   

বিশেষ প্রতিবেদন : মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয়তম রাসূলকে যত মুজিযা দিয়েছিলেন সেগুলির অন্যতম এক মুজিযা হলো মি'রাজ। মহান আল্লাহ রাসুলুল্লাহ সা: কে এক রাত্রিতে মক্কা মুয়াজ্জামা থেকে ফিলিস্তিনের "আল মাসজিদুল আকসা" পর্যন্ত এরপর সেখান থেকে উর্ধ্বে সাত আসমান ভেদ করে তাঁর নৈকট্যে নিয়ে যান। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় একে মি'রাজ বলে।

আর মি'রাজ রজনীতে আল্লাহ তাঁর রাসুলকে সালাত প্রধান ও জান্নাত জাহান্নাম ঘুরিয়ে তাঁকে জান্নাতের নেয়ামত ও জাহান্নামের শাস্তি অবলোকন করান। যা অনুসরণের মধ্যে রয়েছে মানব জাতির মুক্তির পথ।

নিম্নে মি'রাজের শিক্ষা সম্পর্কে বলা হলো-
১) সালাত আদায় করা: মি'রাজের অন্যতম নিয়ামক বা শিক্ষা হলো পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয়তম রাসূলকে দ্বীনের যত আহকাম দিয়েছেন সবই ওহীর মাধ্যমে জিব্রাইল দুনিয়াতে নিয়ে গিয়েছেন।

একমাত্র ব্যতিক্রম হল সালাত। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয়তম রাসূলকে নিজের সান্নিধ্যে নিয়ে তাঁকে তার উম্মতের জন্য সালাতের মহান নিয়ামত প্রদান করেন।সালাতের মাধ্যমে উম্মত দুনিয়া ও আখেরাতে সর্বোচ্চ নিয়ামত লাভ করতে পারবে। আবার সালাত অবহেলা করলে মুমিনের ঈমান হারিয়ে সর্বহারা হওয়ার পথ উন্মুক্ত হয়। সালাত কে গ্রহণ করলে মি'রাজের হাদিয়া গ্রহণ করা হয়।

এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন:
"মুমিনগণ সফলকাম হয়েছেন যারা অত্যন্ত বিনয় ও মনোযোগিতার সাথে সালাত আদায় করে।(সুরা মুমিনুন: ১-২ আয়াত)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, একজন মানুষ ও কুফুরি-শিরিকের মধ্যে পার্থক্য  হচ্ছে নামাজ ত্যাগ করা। (মুসলিম, আস-সহীহ ১/৮৮)

২) ফিতনা-ফাসাদ থেকে বিরত থাকা:
রাসূল (সা:) কে মি'রাজের রজনীতে যে কয়টি জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি দেখানো হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো জমিনে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টির শাস্তি।
আল্লাহ বলেন: "তোমরা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করোনা" (সূরা বাকারা, ১১ আয়াত)

৩) গীবত না করা:
রাসুল সালাম সালাম বলেন, "আমি দেখেছি কিছু মানুষের হাতে পিতলের নখ লাগানো এবং তারা এই নখগুলো দিয়ে প্রচন্ড জোরে তাদের মুখমণ্ডল ও বক্ষদেশে আঁচড়ে রক্তাক্ত করছে, জিব্রাইল (আঃ) জানান যে,এরা হলো সেই ব্যক্তি যারা পৃথিবীতে মানুষের গীবত করত"।

৪) সুদ পরিহার করা:
রাসূল সা: কে শবে মি'রাজের রাতে দেখানো হলো যে, এক ব্যক্তি রক্তের নদীতে সাঁতার কাটছে এবং তাকে বড় বড় পাথর জোর করে গিলানো হচ্ছে।
জিব্রাইল বলেন, এই হলো সুদখোরের শাস্তি।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
"ঘুষ গ্রহীতা ও ঘুষ দাতা কে রসুলুল্লাহ (সা:) লানত করেছেন"।(তিরমিজি, আস-সুনান ৩/৬২২)

৫) ব্যভিচারে লিপ্ত না হওয়া:
ব্যভিচারের শাস্তি ইসলামে মারাত্মক।ইসলামে ব্যভিচার তো দূরের কথা ব্যভিচারের কাছে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন; "তোমরা যিনার কাছেও যেও না এটা অত্যন্ত খারাপ এবং খুবই জঘন্য পাপ" (সূরা বানী ইস্রাইল-৩২ আয়াত)

সম্মানিত পাঠক মিরাজের শিক্ষা অনুধাবনের জন্য আমাদের কুরআন কারীমের "সূরা ইসরা" অধ্যায়ন করা দরকার।

এ  সূরায় মি'রাজের বিষয় উল্লেখের মধ্যে মহান আল্লাহ পৃথিবীতে ফিতনা-ফাসাদের শাস্তি, শিরিক মুক্ত তাওহীদের গুরুত্ব, পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন, দরিদ্র ও অন্যান্য মানুষের অধিকার পালনের গুরুত্ব, ব্যভিচার, হত্যা, এতিমের সম্পদ ভক্ষণ, ওজনে কম দেওয়া, আন্দাজে ধারণা ভিত্তিক মতামত প্রকাশ বা অপবাদ দেয়া, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, অহংকার করা ইত্যাদি মহাপাপের ভয়াবহতা বর্ণনা করেছেন।

আমরা দেখি যে, মিরাজের মধ্যে এ ধরনের পাপের শাস্তি রাসুলুল্লাহকে প্রদর্শন করানো হয়েছে।

আমরা যদি আল্লাহর ভয়াবহ শাস্তি থেকে বাঁচতে চাই তাহলে উপরোক্ত বিষয়গুলো থেকে আমাদেরকে বিরত থাকতে হবে।  এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শবে মি'রাজের শিক্ষাকে আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মি'রাজের শিক্ষার আলোকে পথ চলার তৌফিক দান করুক। (আমিন)

লেখক: মুহাদ্দিস আকবর হোসাইন ফয়সাল
ধর্মতত্ত্ব অনুষদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
[email protected]


   আরও সংবাদ