ঢাকা, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ ভাদ্র ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চামড়া ব্যবসায়ীদের আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে : শিল্পমন্ত্রী


প্রকাশ: ২১ জুন, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


চামড়া ব্যবসায়ীদের আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে : শিল্পমন্ত্রী

   

স্টাফ রিপোর্টার : চামড়া শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে আসন্ন ঈদ-উল-আযহায় চামড়া ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন শিল্প মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। 

তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে চামড়া শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের লাভের কথা বিবেচনা করে কাঁচা চামড়া ও লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এতে ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত পরিমাণে চামড়া ক্রয় ও সংরক্ষণ করার সক্ষমতা অর্জন করবেন। 

আজ সোমবার (২২ জুন) চামড়া শিল্প উন্নয়নের লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় সভায় সভাপতিত্বকালে শিল্প মন্ত্রী একথা বলেন। 

সভায় জানানো হয়, আসন্ন ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সহায়তায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন উদ্যোগে মসজিদের ইমাম, মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী, চামড়া ছড়ানোর সাথে জড়িতদের চামড়া ছড়ানো ও সংরক্ষণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
 
সভায় তথ্য মন্ত্রণালয় ও লেদার বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের মাধ্যমে ঈদ-উল-আযহার কয়েকদিন পূর্ব হতে টেলিভিশনে জনসচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এমপি ট্যানারি শিল্পের জন্য বাজেট সহায়তা নিশ্চিত করতে অর্থ বিভাগের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। 

তিনি বলেন, হাজারিবাগে ট্যানারি মালিকদের জমি হতে রাজউকের 'রেড জোন' প্রত্যাহার করা হলে মালিকদের ঋণ পেতে সুবিধা হবে। ট্যানারি মালিকদের জন্য ঋণ সহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে আসন্ন ঈদ-উল-আযহায় চামড়ার পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলে তিনি আশংকা করেন। 
 
শিল্প প্রতিমন্ত্রী আসন্ন ঈদ-উল-আযহায় চামড়া সংরক্ষণে দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোকে কাজে লাগানোর প্রস্তাব করেন। 

তিনি বলেন, কওমি মাদ্রাসাগুলো বহুদিন ধরে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে জড়িত এবং এ থেকে অর্জিত আয় দিয়ে ওইসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। কোরবানি উপলক্ষে কওমি মাদ্রাসাগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা দিলে তারা আসন্ন কোরবানির ঈদে চামড়া ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। 

শিল্প প্রতিমন্ত্রী হাজারীবাগে অবস্থিত ট্যানারি মালিকদের জমিতে 'রেড জোন' ঘোষণা দ্রুত প্রত্যাহারের জন্য রাজউকের প্রতি আহ্বান জানান। 

শিল্প প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ট্যানারি মালিকরা যাতে ঋণ পেতে পারেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি সাভারে চামড়া শিল্পনগরীতে সিইটিপির কাজ দ্রুত সমাপ্ত করতে বিসিককে নির্দেশনা প্রদান করেন। 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া কাঁচা চামড়া ও লবণযুক্ত চামড়ার সঠিক মূল্য নির্ধারণ এবং ট্যানারি মালিক ও কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি এ লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এখন থেকেই পরিকল্পিতভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন। 

শিল্প সচিব কে এম আলী আজম বলেন, আসন্ন ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে তৃণমূল পর্যায়ে চামড়া ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, উপজেলা নির্বাহি অফিসার, মওসুমি চামড়া ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে নিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হবে। এ জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী বলেন, আসন্ন ঈদ-উল-আযহার পূর্বেই ট্যানারি মালিকদের জন্য ঋণ সাহায্য নিশ্চিত করা হবে। এ জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআই নেতৃবৃন্দ, তফসিলভুক্ত ব্যাংকসমূহের ব্যবস্থাপনা পরিচালকবৃন্দ, চামড়া শিল্প সম্পর্কিত ব্যবসায়ী সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে শীঘ্রই একটি সভা করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

বিসিকের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ এনডিসি বলেন, ঈদের পরের তিন মাস চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এ সময় ট্যানারিগুলোতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করা হলে সিইটিপির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে। অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করলে ট্যানারিগুলো লেদারের ওয়ার্কিং গ্রুপের সার্টিফিকেট অর্জনে ব্যর্থ হবে।

তিনি বলেন, দেশে পর্যাপ্ত লবণ মজুদ রয়েছে এবং কোরবানির সময় লবণের কোথাও কোনো ঘাটতি হবে না। সাভারে অবস্থিত ঢাকা চামড়া শিল্প নগরীর সিটিপি'র কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তিনি বলেন, শিল্পনগরীতে অন্যান্য অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে এবং ফায়ার সার্ভিস নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। 

জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহেদ আলী বলেন, কোরবানিকে কেন্দ্র করে ভারত থেকে অবৈধ গবাদি পশু আসা এবং কোরবানির পশুর চামড়া চোরাচালান প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঈদের দিন ও পরদিন চামড়া নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং এ সময় যাতে কোনো গুজব ছড়ায়, সে বিষয়ে পুলিশকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হবে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, সাভারের চামড়া শিল্প নগরীর ট্যানারিসমূহে বর্তমানে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার চামড়া জমা আছে। ট্যানারি মালিকদের জন্য আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ঋণ সহায়তার নিশ্চিত করা ছাড়া অধিকাংশ ট্যানারি মালিকদের পক্ষে চামড়া ক্রয় সম্ভব হবেনা। তিনি এ বিষয়টি সুরাহার জন্য টাস্কফোর্স সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। 

সমাপনী বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে চামড়া শিল্প যাতে ঘুরে দাঁড়াতে সে লক্ষ্যে ট্যানারী মালিক, আড়তদার, চামড়াখাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরণের কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। 

তিনি বলেন, চামড়া শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত শ্রমিকদের সহযোগিতা প্রদান এবং বিগত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আসন্ন ঈদ-উল-আযহার সময় চামড়ার সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে। এ লক্ষ্যে তিনি সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে খোলা মন নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্প সচিব কে এম আলী আজম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন, জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহেদ আলী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রমেশ বিশ্বাস, বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ, বাংলাদেশ ফিনিসড লেদার, লেদার গুডস এন্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, মৎস্য ও প্রানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। 


   আরও সংবাদ