ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ ভাদ্র ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

য‌শোর ২৫০ শয্যা হাসপাতা‌লে রোগীদের উপ‌চেপড়া ভিড়, হিমশিম খাচ্ছে কতৃপক্ষ


প্রকাশ: ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৪:০০ অপরাহ্ন


য‌শোর ২৫০ শয্যা হাসপাতা‌লে রোগীদের উপ‌চেপড়া ভিড়, হিমশিম খাচ্ছে কতৃপক্ষ

   

যশোর থে‌কে খান সা‌হেব : যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রোগী আর রোগী। শয্যায় রোগী, বারান্দায় রোগী, মেঝেতে রোগী, সিড়ির পাশে রোগী রয়েছে। রোগীর চাপে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শনিবার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সরকারি এই হাসপাতালে ২৫০ শয্যার বিপরীতে ৬১৯ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এদিন বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ২ হাজার ৮২৫ জন রোগী।

রোগী সামাল দিতে হাফিয়ে উঠছেন চিকিৎসক ও সেবিকারা। চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে গিয়ে তারাও কিছু সময় রোগীর পাশে দাঁড়াতে পারছেন না।

এরমধ্যে রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে নিয়মিত রাউন্ড দিচ্ছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম আজাদ লিটু। 

তিনি জানান, চিকিৎসক সেবিকা ও জায়গা সংকটের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রীতিমতো বিপাকে রয়েছে। চিকিৎসকের নতুন পদের চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এখনো সাড়া মেলেনি।

হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এখানে মোট চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৫৪ টি। কর্মরত আছেন ৪৪ জন। শূণ্য রয়েছে ১০ চিকিৎসকের পদ। এরমধ্যেই রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। গড় এখানে সাড়ে ৫শ রোগী চিকিৎসাধীন থাকেন। যা বর্তমান জনবল দিয়ে চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হিমশিম অবস্থা।

সেই সাথে মারাত্মক জায়গা সংকট রয়েছে। দিনে দিনে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ। এই অবস্থার মধ্যে চলতি মাসে ৬০ চিকিৎসক, ১ জন উপসেবা তত্ত্বাবধায়ক, ১০০ জন সেবিকা ও ১৬৫ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। নতুন পদগুলো পূরণ হলে রোগীদের চিকিৎসায় কোনো সমস্যা হবে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন, মহিলা মেডিসিন, পুরুষ পেইং ও মহিলা পেইং ওয়ার্ডে রোগীর চাপে পা ফেলার জায়গা নেই। আবার ওয়ার্ডের মধ্যে জায়গা না পেয়ে বারান্দার মেঝেতেও রোগীর দীর্ঘ সারি পড়েছে। তত্ত্বাবধায়কের কক্ষের সামনেই ছিলো ২৮ জন রোগী। এতো বেশি রোগীর চাপ যে নতুন রোগী বিছানা দেয়া কষ্টকর হয়ে পড়ছে। যেখানে সামান্য জায়গা মিলছে সেখানেই রোগীর চিকিৎসার জন্য বিছানা দেয়া হচ্ছে। সিঁড়ির নিচে থাকতে দেয়া হয়েছে রোগী।

জানা গেছে, এদিন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন ১০৫ জন। আর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন ৫১৪ জন।

যশোর সদর উপজেলার হালসা গ্রামের আকবর মৌলভীর ছেলে রোগী ইমদাদুল হক (৪০), শংকরপুর বাস টার্মিনাল এলাকার আব্দুল হামিদ বীরের ছেলে ইমান আলী (৬০) জানান, চিকিৎসকরা সকালে রাউন্ডে এসে তাদের নতুন চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন। জায়গা সংকটের কারণে বেশি সময় দাঁড়াতে পারছেন না। সেবিকারা ওষুধ দিয়েই চলে যাচ্ছেন। রোগীর চাপের কারণে কথা বলার সময় নেই কারো। তাদের মতো অনেকইে বাধ্য হয়ে যেখানে সেখানে শুয়ে চিকিৎসাসেবা গ্রহন করছেন।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম আজাদ লিটু জানান, এমন পরিবেশে রোগীদের থাকার দৃশ্যে নিজেও কষ্ট পাচ্ছি। কিন্তু অসহায়ত্ব প্রকাশ করা ছাড়া কিছু করার নেই। এতো রোগীর জায়গা দেয়া অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বারান্দা ও হাসপাতালের অলিগলিতে চিকিৎসাধীন রোগীদের সুবিধার্থে ১০টি সিলিং ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে তিনি প্রতিনিয়ত রাউন্ডে বের হচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, গড় এই হাসপাতালে সাড়ে ৫০০ রোগী চিকিৎসাধীন থাকে। আর বর্হিঃবিভাগে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে ২ হাজার ৪২৫ রোগী। নানা সংকটের মধ্যেও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে করা হচ্ছে।


   আরও সংবাদ