প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন
যশোর মণিরামপুর প্রতিনিধি : যশোরের মণিরামপুর উপজেলার শ্যামকূড় ইউনিয়নের হালসা গ্রামের শান্তশিষ্ট, ভদ্র, মিষ্টভাষী, সদা হাসি-খুশির এক দুরন্ত কিশোরের নাম বাচ্চু। স্কুল পড়ুয়া বাচ্চুর পিতা রবিউল ইসলাম মোল্লা একজন দিনমজুর। স্ত্রী, দুই ছেলে বাচ্চু (১৫) ও মুজাহিদ (১০) কে নিয়ে কষ্টে চলে তার সংসার।
তথাপিও দুই ছেলের ভবিষ্যত গড়তে সীমাহীন কষ্টকে তিনি সর্বদা জয় করে চলেছেন দুর্নিবার গতিতে। অনেক কষ্টের রোজগার দিয়ে তিল তিল করে নির্মাণ করেছেন সুখের নিড়।
সম্প্রতি রবিউল দুরারোগ্য আলসারে আক্রান্ত! চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহে ধারদেনা করতে হয়েছে অনেক। এরই মধ্যে তার বড় ছেলে বাচ্চু সম্প্রতি জ্বরে আক্রান্ত হয়।
স্থানীয় ডাক্তারের চিকিৎসান্তে জ্বর নিরাময় হতে সপ্তাহ গড়িয়ে যাওয়ায় এবং করোনা রোগির ন্যায় কিছু উপসর্গ তার দেখা দেয়। গত শুক্রবার বিকেল থেকে অবস্থা বেগতিক দেখে অতি আদরের বাচ্চুকে নিয়ে সবাই কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়ে। রক্ত বমি ও সীমাহীন শ্বাসকষ্টের যন্ত্রনা দেখে সবাই বিচলিত হয়ে পড়ে।
ওই রাতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় যশোর সদর হাসপাতালে। কিন্তু রাত তিনটার দিকে বিনা চিকিৎসায় বাবার কোলেই তার মৃত্যু হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর, শনিবার অতি প্রত্যুষে বাচ্চুর নিথর দেহ একটি এ্যাম্বুলেন্সযোগে বাড়ীতে আনা হয়। সে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য! স্বজনদের কান্না ও আহাজারিতে আশপাশের আকাশ বাতাশ ভারি হয়ে উঠে।
স্বজনদের অনেকেই বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। ১৪/১৫ বছরের কিশোর গ্রামবাসির সবার অতি প্রিয় বাচ্চুর আকষ্মিক মৃত্যুকে কেহই যেন মেনে নিতে পারছে না। তার অকাল মৃত্যুর কারণ নিয়ে সবার মধ্যে বেশ কৌতুহল! সহপাঠীদের কেউ কেউ জানালো কয়েকদিন আগে পুকুরে গোসলে যেয়ে ডিগবাজি লাফ দিতে যেয়ে বাচ্চু বুকে বেশ আঘাত পান। কিন্তু তা সে বাড়িতে জানায় নি।
তাইতো জ্বরের স্বাভাবিক চিকিৎসা করিয়ে কোন ফল হয়নি। সবার সাথে মিষ্টভাসী,অত্যান্ত মিশুক, ভদ্র ও অত্যান্ত বিনয়ী স্বভাব-সুলভের ছিলো কিশোর বাচ্চু। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায় তার সহপাঠীদের কাছে ছিলো সে আস্থার প্রতিক। বাড়ির কাজেও সারাক্ষণ সময় দিতো।
প্রতিবেশিদের ডাকে সাড়া দিয়ে যে কোন কাজে নির্দিধায় ঝাপিয়ে পড়তো সে। তার অকালের চির বিদায় কেউ মানতে পারছে না। তবুও বিধাতার অমর সত্য মৃত্যুকে না মেনে তো আর কারো কিছুই করার নেই।
তাই তো মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে তার বেহস্ত নসীবের জন্য ফরিয়াদ করি। হে আল্লাহ তার শোক সন্তপ্ত পরিবার-স্বজনদের এই কঠিন শোক সহ্য করার শক্তি দান করুন। আমিন!