ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩২, ৯ জ্বমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শীতের সাথে গ্রামের মিতালি


প্রকাশ: ৪ জানুয়ারী, ২০২১ ২৩:০০ অপরাহ্ন


শীতের সাথে গ্রামের মিতালি

'শীতের হাওয়ার লাগল নাচন আমলকির এই ডালে ডালে; পাতাগুলি শিরশিরিয়ে ঝরিয়ে দিল তালে তালে'।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শীত নিয়ে বিখ্যাত এই উক্তিটি আমাদেরকে বারবার মনে করিয়ে দেয় শীত নিয়ে আশা ভরসা আর রোমাঞ্চকর অনুভূতির কথা। এজন্যই হয়তো ইংরেজ কবি শেলী বলেছিলেন, ‘‘ও, ভিন্ড, ইফ ভিন্টার কামস্, ক্যান স্প্রিং বি ফার বিহাইন্ড?'' অর্থাৎ ‘যদি শীত আসে, বসন্ত কি খুব দূরে থাকতে পারে?'

শীতের আগমনের সাথে সাথে আমাদের গ্রামদেশে যোগ হয় ভিন্ন মাত্রা। শীত যেন সমস্ত আনন্দ সাথে করে নিয়ে আসে আঙ্গিনায়। শীত যে শুধু কর্কশতা  কিংবা  আমাদের অস্তিত্বে আঘাত হানতেই আমাদের দেশে সহসা আগমন করে, ঠিক তা নয়।

পূর্ব দিগন্তে কুসুমের মতো হলুদ রাঙ্গা সূর্যি মামা মনে করিয়ে দেয় গাছিদের খেজুর রস সংগ্রহের কথা। আর ভোজন রসিক বাঙ্গালীকে তার শত বছর পুরনো ঐতিহ্যকে নতুন রুপে জাগরণ করা।

টিনের চালে টুপটুপ করে কুয়াশার শব্দে আর গৃহিনীর লাল মোরগটার ডাকে সহসাই ঘুম ভেঙ্গে যাবে। যেখানে শহুরে জীবনের মতো কোনো ইলেকট্রিক ঘড়ির ক্রিং ক্রিং শব্দের পরিবর্তে প্রকৃতি নিজ দায়িত্বে তাদেরকে সজাগ করে দেয়।

সকাল বেলা কচি পেয়াজ রসুনের পাতার সাথে সরিষা ফুলের ভর্তা দিয়ে রাতে বেচে যাওয়া ঠান্ডা ভাতের সাথে ঘানিতে ভাঙ্গা তেলের ঘ্রাণ এবং স্বাদে সারাদিন শক্তি যোগাবে।

গৃহস্থ চলে যাবে গরু নিয়ে মাঠে আর গৃহিণী সকালের ভাত রান্না করতে ব্যস্ত হয়ে পরবে এবং অন্য চুলোয় ভাপা পিঠার পাতিল উঠিয়ে দিয়ে গুণবে সময়। আর মায়ের পাশে চাদর মুড়ি দিয়ে ছোট্ট ছেলেটির ভাপা পিঠা খাওয়া যেন শীতকে হার মানিয়ে দেয়।

সারা বছর বাড়ি ছেড়ে শহরে বসবাস করা আত্মীয়-স্বজনেরা চলে আসে এই সময়টা পরিবার পরিজনের সাথে কাটাতে। আর তাদেরকে শীতের পিঠাপুলির সাহায্যে আপ্যায়ন করা হয়ে থাকে। গ্রামে বেড়াতে আসা এসব মানুষজন শীতের সকালে গাছতলায় বসে খেজুর রস খেয়ে ভুলে যান ইঁটপাথরের নগরটাকে। সহসাই যেন হারিয়ে যেতে থাকেন খেজুর রসে ভিজানো চিতুই পিঠার স্বাদে। এজন্যই হয়তো এসব মানুষ কখনোই ভুলে যান না গ্রামকে, তাইতো বারবার ফিরে আসতে মন চায় হাজারবার।

সকালে শীত নিবারণে আগুন পোহানো থেকে শুরু করে সন্ধ্যায় মটরশুটি পুড়িয়ে খাওয়ার আনন্দটা মনে থাকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত। এই সময়টাতে বিলঝিল পুকুর প্রায় শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে সবাই মিলে মাছ আহরণের আনন্দটা যেন আবারো মনে করিয়ে দেয় গ্রামের মানুষজন আর শীতের সাথে গভীর মিতালি।

সারাবছর গ্রামে কোনো আনন্দ কিংবা বিনোদনের উপলক্ষ্য কম থাকে। কিন্তু শীতের আমেজে তারা সেই খোরাক মেটানোর প্রয়াস পান। গ্রামের ছোট বড় সবাই মিলে আয়োজন করে থাকেন ওয়াজ মাহফিলের। আর সেখানে রাতভর মনোযোগী শ্রোতা হয়ে বসে থেকে উপভোগ করেন আলেমদের নসিহত। প্রত্যেকটি গ্রাম যেন এসব ঐতিহ্যের ধারক বাহক।

 


   আরও সংবাদ