ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩২, ৯ জ্বমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিশু দিবস পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধিত হোক


প্রকাশ: ১৭ মার্চ, ২০২১ ১১:১৬ পূর্বাহ্ন


শিশু দিবস পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধিত হোক

চন্দ্রিকা চক্রবর্তী : স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির নিষ্পাপ ও সর্বাপেক্ষা সুন্দর পর্যায়ে অবস্থান করা সেই মানব কিংবা মানবী হলো শিশু। বয়সের গন্ডি ধরে বলতে গেলে সাধারণত ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে পনেরো বছরের বালক-বালিকাদের শিশু হিসেবে অভিহিত হয়। শিশু বরাবরই কোমলমতি হয়। 

শিশুদের ভালোবাসে না এমন মানুষ বোধহয় সহজে খুঁজে পাওয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জন্মদিনটা কাটাতেন শিশুদের সাথে। শিশুদের অত্যন্ত স্নেহ করতেন তিনি। শিশুরাও দলবেঁধে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে যেত। এভাবেই ১৭ মার্চকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে। 

প্রত্যেকটি শিশুই অপার সম্ভাবনার আধার। একটি জাতির উন্নতি ও সমৃদ্ধির বীজ সুপ্ত অবস্থায় লুকায়িত থাকে শিশুর মধ্যেই। একটি শিশু জন্ম নেওয়া মানে যে শুধু সেই শিশুটার মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে এমনটা কিন্তু নয়, বরং একটি জাতির উন্নতির সঞ্চার হয় সুষ্ঠু পরিবেশে বিকশিত হওয়া সেই শিশুর দ্বারা। 

একটি মহৎ জাতি গড়ে তোলার মূল পন্থা এটাই, সেটা হলো উন্নত চরিত্র এবং সুগঠিত বিকাশপ্রাপ্ত শিশুর সমন্বয়। শিশুরা ফুলের ন্যায় পবিত্র। প্রত্যেকটি শিশুই হলো ভিন্ন ধরনের ফুল এবং তারা সবাই একসাথে মিলে একটি সুন্দর বাগিচা তৈরি করতে পারে। সেই বাগিচা যা শুধু একটি নির্দিষ্ট জাতি নয় বরং পুরো বিশ্বকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে। 

আজকের শিশুই বড় হয়ে ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির দায়িত্ব গ্রহণ করবে। সমাজব্যবস্থাকে উন্নত করে তুলবে। প্রত্যেক শিশুই একটা সাদা কাগজের মতো।সেটার মধ্যে যা লিখা হবে সেটিই ফুটে উঠবে। কথাটার ব্যাখা এভাবেই দেওয়া যায় যে, শিশুর মন সরল এবং তারা অনুকরণপ্রিয় হয়। তারা যে পরিবেশে বেড়ে উঠে সে পরিবেশের আচার-আচরণ অনুকরণ করে এবং সেভাবেই অভ্যস্ত হয়ে পরে। 

অনুকূল পরিবেশ, উপযুক্ত শিক্ষা এবং উপযুক্ত অভিভাবক পেলে যেমন একটি শিশু পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠে। ঠিক তেমনই বৈরী ও কুরুচিপূর্ণ পরিবেশ, উপযুক্ত শিক্ষার অভাব, অসৎসঙ্গ এবং বিবেকহীন অভিভাবকের অধীনে শিশু বড় হয়ে অমানুষ ও লম্পট চরিত্রের হতে পারে যা ভবিষ্যতে সেই জাতির জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শিশুরা অবহেলিত থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুখ থুবড়ে পড়বে।

শিশু দিবস পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশুদের কল্যাণ সাধন এবং তাদের মৌলিক অধিকার আদায়সহ নানাবিধ সমস্যার সমাধান। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় পাঁচ কোটি শিশু কিশোর রয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় এটাই যে, এখনো তাদের অনেকেরই মৌলিক অধিকারগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। আজও কতো শিশু ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভোগে। পরিধান করার মতো বস্ত্র পায় না। রোগশোকে চিকিৎসা পায় না এমনকি সেবন করার মতো ঔষধ। 

দারিদ্র্যের কারণে বিপুল সংখ্যক শিশুকে জীবিকার তাগিদে শ্রমদাসে পরিণত হতে হচ্ছে। এখনো অনেক শিশুকে অন্যের গৃহে, হোটেল-রেস্টুরেন্টে, কলে-কারখানায় কাজ করতে হচ্ছে। যে সময়ে শিশুটার শিক্ষাঙ্গনে বিচরণ করার কথা ছিলো, সেই সময়ে শিশুর বিচরণ ঘটছে শ্রমক্ষেত্রে। পরিপূর্ণ ভাবে প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই পথে-প্রান্তরে কতো শিশু নিঃশব্দে অকালে ঝরে যায় তার কোনো হিসেব নেই। 

তাই প্রতিবছর শুধু শিশুদিবস পালন করলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। প্রকৃতপক্ষে শিশুর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণসহ শিশুর উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য তৈরি করা শিশু সংগঠনগুলো আরো দৃঢ়ভাবে কাজ করতে হবে। 

জাতীয় প্রচারণা ও বিভিন্ন আঙ্গিকের অনুষ্ঠানমালা প্রচার করতে হবে। আমাদের আশেপাশে অবহেলিত প্রতিটি শিশুর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। শিশুর সঠিক বিকাশে সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশের ব্যবস্হা করে দিতে হবে। তবেই দেশের ও জাতির সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হবে।

লেখিকাঃ চন্দ্রিকা চক্রবর্তী, শিক্ষার্থী, ফার্মেসী বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।


   আরও সংবাদ