প্রকাশ: ২৪ জুন, ২০২১ ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন
সঙ্গী টেইলরও ব্যতিক্রম হন কীভাবে! ড্রেসিং রুমে অবশ্য আবেগে বাধ দেওয়ার ব্যাপার নেই। টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ল কিউইদের বাঁধনহারা উল্লাস। দীর্ঘ প্রতীক্ষা, কাতর অপেক্ষা আর যন্ত্রণাময় অনেক প্রহর পেরিয়ে অবশেষে ধরা দিল বহু কাঙ্ক্ষিত আইসিসি শিরোপা। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চ্যাম্পিয়ন নিউ জিল্যান্ড!
দুই বছরের পথচলায় সেরা দুইয়ে জায়গা করে নেওয়ার তীব্র লড়াই, অনেক চড়াই-উৎরাই, অনিশ্চয়তা-উত্তেজনার নানা মোড় পেরিয়ে ট্রফির ফয়সালা পৌঁছে গেল ফাইনালের শেষ দিনের শেষ সেশনের শেষ ঘণ্টায়। তাতে ভারতকে ৮ উইকেটে হারিয়ে নিউ জিল্যান্ড পেল শিরোপার অনির্বচনীয় স্বাদ।
সেই ২০০০ সালে নকআউট বিশ্বকাপ (এখনকার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি) জিতেছিল নিউ জিল্যান্ড। এরপর আর কোনো আইসিসি ট্রফি ছিল না। বিশ্বকাপ তো বরাবরই অধরা। সবশেষ দুটি বিশ্বকাপের ফাইনালে হতাশার হার, দুই বছর আগে এই ইংল্যান্ডেই লর্ডসের ফাইনালে সব সমীকরণে সমান্তরালে থেকে বাউন্ডারি সংখ্যায় শিরোপা না পাওয়ার বিষাদ, এমন হাহাকারের অনেক মুহূর্তের পর অবশেষে এলো সাফল্য রাঙা সময়। ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদার সংস্করণের প্রথম বৈশ্বিক আসরের ট্রফিই তাদের!
আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠার পর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেরও চ্যাম্পিয়ন, ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজাত আঙিনায় প্রতিষ্ঠিত হলো কিউই শ্রেষ্ঠত্ব।
দুই দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর যৌথ শিরোপার সম্ভাব্য ছবিই ছিল সবচেয়ে স্পষ্ট। তবে আবহাওয়ার কথা ভেবেই আগে থেকে ঠিক করে রাখা বাড়তি দিনে ( ষষ্ঠ দিন, ‘রিজার্ভ ডে’) কিউইরা লিখল দারুণ জয়ের কাব্য।
সাউথ্যাম্পটনে বুধবার শেষ দিনে কিউই পেসারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ১৭০ রানে। নিউ জিল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩৮।
স্নায়ুক্ষয়ী রান তাড়ায় দুই ওপেনারের দ্রুত বিদায়ে আভাস জাগে নাটকীয়তার। তবে এবার দলকে আর হৃদয়ভাঙা হারের স্বাক্ষী হতে দেননি কেন উইলিয়ামসন ও রস টেইলর। দলের সেরা দুই ব্যাটসম্যানের জুটিতেই দারুণ জুটিতেই ধরা দেয় জয়।
প্রথম ইনিংসে ৫ ঘণ্টার লড়াইয়ে ৪৯ রানের ইনিংসের পর শেষ ইনিংসের রান তাড়ায়ও অগ্রণী উইলিয়ামসন। কিউই অধিনায়ক অপরাজিত ৫২ রানে। জয়সূচক বাউন্ডারিতে টেইলর অপরাজিত ৪৭ রানে। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আসে ৯৬ রান।
এই জয়োৎসবের ভিত গড়া কিউই বোলারতের হাত ধরে। স্কোরকার্ড বলছে, ইনিংসের সফলতম বোলার টিম সাউদি। কিন্তু সকালে মূল কাজটি করে দেন আরও একবার কাইল জেমিসন।
৩২ রানে এগিয়ে থেকে দিন শুরু করা ভারত বড় ধাক্কা খায় সাতসকালে বিরাট কোহলিকে হারিয়ে। আপাতদৃষ্টিতে শটটি বেশ আলগা, অফ স্টাম্পের বাইরে খোঁচা। তবে দারুণ বোলিংয়ে ‘সেট আপ’ করার কৃতিত্ব পুরোপুরিই জেমিসনের।
৬ ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বা বোলার নিজের পরের ওভারে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ফেরান চেতেশ্বর পুজারাকেও।
বাকি সময়টায় কিউইদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের পাশাপাশি ভারতীয়দের আলগা সব শটে গড়া হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য। ট্রেন্ট বোর্টৈর লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে কট বিহাইন্ড হন অজিঙ্কা রাহানে। রবীন্দ্র জাদেজা আউট হন নিল ওয়্যাগনারের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে। রবিচন্দ্রন অশ্বিন তাড়া করেন বাইরের বল।
রিশাভ পান্ত চেষ্টা করছিলেন লিড কিছুটা বাড়াতে। কিন্তু সহজাত আক্রমণের পথেই আসে তার পতন। ৪১ রানে বোল্টকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বল তুলে দেন আকাশে, দারুণ ক্যাচ নেন হেনরি নিকোলস।
কিপিংয়ের সময় আঘাত পেয়ে নড়ে যায় বিজে ওয়াটলিংয়ের আঙুলের হাড়। কিন্তু টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে ইতিগাস গড়ার গন্ধ পেয়ে তিনি নড়বেন কেন! ভাঙা আঙুলেই চালিয়ে যান কিপিং।
শেষ দুই উইকেট দ্রুত তুলে নেন সাউদি। ২৮ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারায় ভারত।
ম্যাচের বাকি তখন ৫৩ ওভার, নিউ জিল্যান্ডের লক্ষ্য ১৩৮। এই সুযোগ তারা হাতছাড়া করেনি। উপলক্ষ্য রাঙিয়ে তোলে তারা নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে স্মরণীয় সাফল্যে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ভারত ১ম ইনিংস: ২১৭
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৪৯
ভারত ২য় ইনিংস: (আগের দিন ৬৪/২) ৭৩ ওভারে ১৭০ (পুজারা ১৫, কোহলি ১৩, রাহানে ১৫, পান্ত ৪১, জাদেজা ১৬, অশ্বিন ৭, শামি ১৩, ইশান্ত ১*, বুমরাহ ০; সাউদি ১৯-৪-৪৮-২, বোল্ট ১৫-২-৩৯-৩, জেমিসন ২৪-২-৩০-২, ওয়্যাগনার ১৫-২-৪৪-১)।
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: (লক্ষ্য ১৩৮) ৪৫.৫ ওভারে ১৪০/২ (ল্যাথাম ৯, কনওয়ে ১৯, উইলিয়ামসন ৫২*, টেইলর ৪৭*; ইশান্ত ৬.২-০-২১-০, শামি ১০.৫-৩-৩১-০, বুমরাহ ১০.৪-২-৩৫-০, অশ্বিন ১০-৫-১৭-২, জাদেজা ৮-১-২৫-০)।
ফল: ৮ উইকেটে জিতে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যাম্পিয়ন নিউ জিল্যান্ড।
ম্যান অব দা ফাইনাল: কাইল জেমিসন।