ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩২, ৯ জ্বমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শহরে শিশু-বৃদ্ধ সবার হেঁটে যাতায়াত নিশ্চিত করতে হবে


প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ০৭:১৫ পূর্বাহ্ন


শহরে শিশু-বৃদ্ধ সবার হেঁটে যাতায়াত নিশ্চিত করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: একটি বাস যোগ্য শহর যদি ৮ বছর থেকে ৮০ বছরের মানুষের জন্য নিরাপদ ও প্রবেশগম্য হয়, তাহলে শহরটি সবার জন্যই নিরাপদ ও প্রবেশগম্য হবে ওঠে। একইভাবে, শিক্ষার্থীদের জন্য হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হলে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সবাই উপকৃত হন। 

বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে এ্যাস্ট্রোজেনেকা, কার ফ্রি সিটিস অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত “অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। 

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার নাঈমা আকতার বলেন, অধিক জায়গা দখল করে কম যাত্রী পরিবহন করায় ব্যক্তিগত গাড়ির কারণে অসহনীয় যানজট, অধিক জ্বালানি ব্যয়, মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণ, সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। 

মূল প্রবন্ধ বলা হয় অসংক্রামক রোগের মূল কারণগুলো হলো-শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, তামাক সেবন, অ্যালকোহল সেবন এবং বায়ু দূষণ। বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে অসংক্রামক রোগের দুটি কারণকে প্রতিহত করা সম্ভব। 

রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা দূর করে নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ পরিবেশ তৈরির জন্য তিনটি নকশার মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দশ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন সুপারিশ, যেমন-বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ, সড়কের পাশ থেকে পার্কিং, দোকানের মালামাল অপসারণ, বাসার সামনে সবুজায়ন বৃদ্ধি, সড়কের পাশে পকেট পার্ক তৈরি ইত্যাদি তুলে ধরেন। 

অনুষ্ঠান শেষে রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল এবং সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৩০ জন শিক্ষার্থীকে ‘ইয়াং অ্যাডভোকেটস অন এনসিডি প্রিভেনশন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যারা তাদের স্কুলে অংসংক্রামণ রোগ নিয়ন্ত্রণে সবাইকে নিয়ে সচেতনতা মূল বিভিন্ন কার্যক্রমের সমন্বয় করবেন। 

এতে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-এর সভাপতি আবু নাসের খান বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া শিশুবান্ধব নগর, অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর গড়ে তোলা সম্ভব নয়। নগরের ৬০ শতাংশ মানুষ কোন না কোন ভাবে হেঁটে যাতায়াত করেন। কিন্তু নগর-পরিকল্পনায় তাদের উপেক্ষা করে প্রাধান্য দেওয়া। দেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, সমাজ ব্যবস্থা উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। 

ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্ট অ্যান্ড একাডেমিকের পক্ষ থেকে আহমাদ আল মুহাইমিন বলেন, সড়ক ও ফুটপাত গুরুত্ব গণপরিসর ও এখানে শিশু-কিশোরদের প্রাধান্য নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। ঢাকা শহরে এমন অনেক এলাকা আছে, যেখানে রাস্তাই একমাত্র গণপরিসর। স্থপতি হিসেবে আমাদের সামাজিক দায়িত্ব শিশুবান্ধব নগর গড়ে তোলা। নগর গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, নীতিনির্ধারকসহ সকল অংশীদার এবং শিশুদেরও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। 

এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক নিয়াজ মোহাম্মদ জাফরী বলেন, শুধুমাত্র অসংক্রামক রোগ নয়, কোভিডের মতো সংক্রামক রোগ প্রতিহত করার জন্যও হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াত জরুরি। কারণ, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াত করা সম্ভব। পাশাপাশি গণপরিবহন উন্নত ব্যবস্থা উন্নত করা প্রয়োজন। একটা শহর কতটা উন্নত তা নির্ভর করে তার গণপরিবহন ব্যবস্থার ওপর, ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যার ওপর নয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের জন্য আমাদের শহরটি নিরাপদ করে গড়ে তুলতে হবে। 

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারি বলেন, আমাদের নগরে শিশুদের খেলার জায়গার পরিবর্তে গাড়ি পার্কিংকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমরা একটি অসুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলছি এবং বয়স্ক মানুষদের আরও গৃহবন্দী করে ফেলছি। এখন সবাইকে একত্রিত হয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। 

রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেসা ও ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এমএ মান্নান মনির তাদের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে অ্যাডভোকেসি চলমান রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। 


   আরও সংবাদ