প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন
কূটনৈতিক প্রতিবেদক : ভাষা সংগ্রামের পথ ধরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশের গৌরবময় স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২৯ তম অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে ইতালির রোমে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষাকে পৃথিবীর সর্বত্র সম্মানজনকভাবে উপস্থাপনের সুযোগ তৈরি হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আরো বেগবান হবে।
সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় ইতালির রোমে বাংলাদেশ দূতাবাস ভার্চুয়াল মাধ্যমে "শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২২" উদযাপন করেছেন। এতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দূতাবাসের আমন্ত্রিত দেশি-বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, বন্ধুপ্রতীম বিদেশী নাগরিকবৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ ও প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকগণ সংযুক্ত হন।
তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে এ দিবস পৃথিবীর সকল দেশের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রাখছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এ ছাড়া দিবসের বিশেষ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয় এবং চ্যান্সেরী প্রাঙ্গণে স্থাপিত শহীদ মিনারে রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে মাতৃভাষার অস্তিত্ব রক্ষা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মত্যাগকারী শহীদদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রকাশ করেন।
মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্র মন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, ইউনেস্কোর মহাপরিচালকের বাণী পাঠ করে আগত অতিথিদের শোনান হয়।
ইউনেস্কোর আঞ্চলিক পরিচালকের পক্ষে আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারী মিস. মেগুমি ওয়াতানাবে মাতৃভাষার জন্য আত্মত্যাগকারী বাংলাদেশী তরুণদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতির মাধ্যমে পৃথিবীর সব মাতৃভাষার স্বকীয় গুরুত্ব ও অবস্থান সুসংহত করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।
ইতালির ফ্লোরেন্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের অনারারী কনসাল মিস. জর্জিয়া গ্রানাটা বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে শান্তি ও সৌহার্দ্য বিনির্মাণের ক্ষেত্রে দিনটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বলেও মতামত ব্যক্ত করেন।
নেপলস্ এ নিযুক্ত বাংলাদেশের অনারারী কনসাল মিস. ফিওরেলা ব্রেগলিয়া ভাষার জন্য বাংলাদেশের তরুণদের আত্মত্যাগের জন্য তিনি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান এবং গর্ববোধ করেন বলে অনুভূতি ব্যক্ত করেন। বন্ধুপ্রতীম ইতালীয় ও অন্যান্য বিদেশী নাগরিকবৃন্দও মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় আত্মত্যাগকারী শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তারা মাতৃভাষার অনন্যতা ও স্বকীয়তার বিষয়ে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
ঋষিল্পি ইন্টারন্যাশনাল নামীয় সংগঠনের উদ্যোক্তা বাংলাদেশের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু দুই ইতালীয় নাগরিক বাংলাদেশের সাতক্ষীরা থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসার কথা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে, হাইব্রিড মাধ্যমে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ শিশু শিল্পীদের পরিবেশনায় দেশাত্মবোধক গান ও নাচের ধারণকৃত অংশ উপভোগ করেন। মিজ্ সুস্মিতা সুলতানার পরিচালনায় এবং স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সঞ্চারী সংগীতায়ন’ এর শিক্ষার্থীদের সপ্রতিভ পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করে। অনুষ্ঠানের এ অংশের বিশেষ আকর্ষণ ছিল মিজ লাওরা নামের একজন ইতালিয়ান ছাত্রীর মনোমুগ্ধকর একক পরিবেশনা।
অনুষ্ঠানের পরবর্তী পর্যায়ে দিবসটি উপলক্ষ্যে শিল্পকলা একাডেমি নির্মিত বিশেষ প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। ইতালি, ভারত, থাইল্যাণ্ড ও প্রবাসী বাংলাদেশী শিল্পীদের ধারণকৃত বর্ণিল পরিবেশনা অনুষ্ঠানে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ, ইতালীয় আলোকচিত্রী মিস্টার. স্টেফানো রোমানো -এর তোলা ছবি নিয়ে তৈরি "আমার চোখে একুশ" শীর্ষক ছবির যাত্রা প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়। শহীদদের রুহের মাগফেরাত ও দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
এর আগে ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭.০১ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ২১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২.০১ মিনিটে ইতালির রোমে অবস্থিত আইজাক রবিন পার্কে স্থাপিত শহীদ মিনারে বাংলাদেশ দূতাবাস, রোম-এর উদ্যোগে রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও পরিবারবর্গ পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ভাষা শহীদদের সম্মানে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে মহিমান্বিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রয়াসে ইতালীয় সরকারের অনুমতিক্রমে রবিন পার্কে ২০১১ সালে শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়।
ভূতাত্ত্বিক অনুপযোগিতার কারণে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকলেও দূতাবাসের সক্রিয় প্রচেষ্টার ফলে ২০১৪ সালের পর এবারই প্রথম এ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন সম্ভব হয়। দূতাবাসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন এবং বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশীরাও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময় রাষ্ট্রদূত তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সকলের সামনে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। একই সাথে রবিন পার্কে দর্শনীয় শহীদ মিনার স্থাপনের পেছনে জড়িত দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা ও ইতালীয় সরকারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।