প্রকাশ: ১ নভেম্বর, ২০২৫ ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন
জবি প্রতিনিধি: পেশায় বাবা-মা দুইজনই শিক্ষক। কিন্তু ছাত্রী হলে সিট নেয়ার জন্য শিক্ষক বাবাকে বানালেন কৃষক, মাকে বানালেন গৃহিনী। মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ছাত্রী হলে সিট নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী দিয়া চৌধুরী।
হলে সিটের জন্য আবেদন ফরম যাচাই-বাছাই ও ওই শিক্ষার্থীর এলাকায় খোঁজ নিয়ে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। হলের আবেদন ফরমে দেখা যায়, ওই ছাত্রীর বাবার নাম হান্নান চৌধুরী। পেশার স্থানে বাবার পরিচয় দেন কৃষক। অন্যদিকে মায়ের নাম সাদিয়া নওশীন। ফরমে মায়ের পরিচয় দেন গৃহিনী হিসেবে। বাবার বার্ষিক আয় দেন মাত্র ৮০ হাজার টাকা। মায়ের বার্ষিক কোনো আয় নেই বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া ঢাকায় স্থানীয় অভিভাবকের স্থানে ভাই হিসেবে পরিচয় দেন রুবেল হোসেনকে। তার পেশা উল্লেখ করা হয় ব্যবসায়ী।
তবে ওই ছাত্রীর এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাবা হান্নান চৌধুরী পেশায় একজন শিক্ষক। তিনি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের ভাকলা স্কুল এন্ড কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক। সম্প্রতি তিনি অবসরে গেছেন। তবে শিক্ষকতার মূল বেতনের সমপরিমাণের ৬-৭ বছরের ওপর পেনশন পাবেন। এছাড়া মা সাদিয়া নওশীন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের বরাটে অবস্থিত চৌধুরী মাহবুব উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। শিক্ষক হিসেবে মায়ের বার্ষিক আয় আড়াই লাখ টাকার ওপরে৷ কিন্তু হলে উঠতে কৃষক হিসেবে শুধু বাবার বার্ষিক আয় ৮০ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন এই ছাত্রী।
অন্যদিকে জানা গেছে, রুবেল হোসেনকে ভাই পরিচয় দিলেও সম্পর্কে তিনি দুলাভাই। ফরমে দেয়া তথ্যে তিনি ব্যবসায়ী নয়, বরং তিনি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে গোপালগঞ্জের রামদিয়া সরকারি শ্রীকৃষ্ণ কলেজে কর্মরত আছেন। এ চাকরির আগে তিনি সহকারী সিকিউরিটি অফিসার হিসেবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সরকারী চাকরিতে কর্মরত ছিলেন। হলে সিট নিতে ফরম পূরণের সময় চাকুরীজীবি দুলাভাইকেও ব্যবসায়ী হিসেবে উপস্থাপন করেন নাট্যকলার ছাত্রী দিয়া।
এছাড়া আরো জানা গেছে, দিয়া চৌধুরীর স্বামীও রয়েছেন। শাকিল আহমেদ নামে তার স্বামী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ১৩ ব্যাচের ছাত্র। স্বামী বর্তমানে সিটি ব্যাংকে (গুলশান-১ শাখায়) চাকরি করেন। তবে পরিচয়টি গোপন রেখে ক্যাম্পাসে শাকিলকে বড় ভাই হিসেবে পরিচয় দেন এই ছাত্রী।
এদিকে দিয়ার সহপাঠী ও রাজবাড়ী জেলা ছাত্রকল্যাণের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, দিয়া সবাইকে রাজবাড়ী-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি কাজী কেরামত আলীর ঘনিষ্ট আত্মীয় বলে পরিচয় দেন। এলাকায় চৌধুরী পরিবার ও আওয়ামী লীগের কান্ডারী হিসেবে তাদের বংশের নামডাক রয়েছে। দিয়া সরকার পতনের পরেও ১৫ আগস্টের তার ফেসবুক প্রোফাইলে বঙ্গবন্ধুর ছবি পোস্ট করেন। এ বছরেও তিনি পোস্ট দেন। এছাড়া দিয়া একটি শাড়ি কখনো দ্বিতীয়বার পড়েন না বলেও বন্ধু-বান্ধবীদের কাছে গর্বের সাথে বলেন। তবে ছাত্রী হলে ওঠার ফরমে মিথ্যা তথ্যসহ মলিন মলিন পোশাকে যান দিয়া।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জবির নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আনজুম আরা উর্মি। তিনি বলেন, নাট্যকলার ছাত্রী দিয়া চৌধুরীকে এবছর হলে সিট দেয়া হয়। হলের আবেদন ফরমে সে বাবা কৃষক ও মা গৃহিনী পরিচয় দেয়। তার নামের সাথে চৌধুরী থাকায় বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাই। কিন্তু সে এটি শুধুমাত্র তার বংশীয় পদবী বলে জানায়। বাবা কৃষক আর মা গৃহিনী জানিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে। ভাইবা মূল্যায়ন নোটেও সেটা লেখা আছে। পোশাক দেখেও নিডি মনে হয়েছে।
প্রভোস্ট আরো বলেন, জেলায় জেলায় গিয়ে সবকিছু যাচাই বাছাই করা সম্ভব নয়। তবে বাবা-মায়ের পরিচয় ও পারিবারিক আর্থিক তথ্য মিথ্যা হলে এটি গুরুতর অপরাধ। হলের আমার দরজায় লেখা আছে মিথ্যা তথ্য দিলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। আমরা তদন্ত করে বিষয়টির সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
এদিকে বিষয়টি স্বীকার করে দিয়া চৌধুরী বলেন, 'হ্যাঁ, আমার বাবা-মা দুজনেই শিক্ষক। প্রথমবার আমি কৃষক গৃহিনী পরিচয় দিয়েই আবেদন করি কিন্তু হয়নি। পরের বার সঠিক তথ্য দিয়ে আবেদন করেছি।' তবে পরবর্তী আবেদনের কপি প্রতিবেদকের কাছে আছে এবং সেখানে কৃষক-গৃহিণী পরিচয় দেয়া আছে জানালে তখন ওই ছাত্রী মিথ্যা তথ্য দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।