প্রকাশ: ১০ মার্চ, ২০২১ ১২:৩৯ অপরাহ্ন
কূটনৈতিক প্রতিনিধি : ব্রাসিলিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস বাঙালি জাতির ইতিহাস ও অস্তিত্বের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে থাকা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের কালজয়ী ভাষণের ব্রাজিলিয়ান পর্তুগীজে অনুবাদের মাধ্যমে এ ঐতিহাসিক ভাষণের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করে।
ব্রাজিলের সার্বিক করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির ক্রমাবনতির প্রেক্ষিতে এবং ব্রাসিলিয়া সরকারের এতদ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য নির্দেশনার অনুসরণে সীমিত পরিসরে কিন্তু যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি উদযাপিত হয়।
ব্রাজিলের ২১ কোটি জনগণ এবং এদেশে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ বিদেশির কাছে বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত শব্দমালা পৌঁছে দেবার নিমিত্ত্ দূতাবাস বঙ্গবন্ধু-র ৭ই মার্চের ভাষণ ব্রাজিলীয় পর্তুগীজ ভাষায় অনুবাদের দ্বায়িত্ব ব্রাজিলের অন্যতম প্রথিতজশা রিও গ্রান্ডে দো সুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপিকা ডাঃ রবার্টা সার্টোরি লুসো ডি কারভালহো-কে অর্পণ করে।
রবার্টা সার্টোরি প্রফেসর ড অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে এই দ্বায়িত্ব পালন করেন, এবং বঙ্গবন্ধুর দৃপ্ত উচ্চারণের ঠিক পঞ্চাশ বছর পর ৭ই মার্চ ২০২১ ব্রাসিলিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে ঐ যুগান্তকারী ভাষণের ব্রাজিলীয় পর্তুগীজ অনুবাদটি পাঠ করা হয়। প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মর্ম উপলব্ধি করতে পেরে উপস্থিত ব্রাজিলীয় অতিথিবৃন্দের অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন।
উল্লেখ্য, ডাঃ রবার্টা সার্টোরি লুসো ডি জুম প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পোর্ত আলেগ্রো শহর থেকে দূতাবাসের অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর মাহেন্দ্রক্ষণে দূতাবাস কর্তৃক ১৭ই মার্চ ২০২১ বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিবসে এই অনুবাদটি সম্বলিত পুস্তিকা প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রকাশনার মাধ্যমে ব্রাজিলের নাগরিকগণ বঙ্গবন্ধুর সাথে সম্যক পরিচিতি লাভ করবে বলে দূতাবাস আশাবাদী।
৭ই মার্চ সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গনে শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স কর্তৃক জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সূচিত অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী লাখো শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর প্রবাসী বাংলাদেশী ও দূতাবাস পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অৰ্পন করেন।

দূতাবাসে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পড়ে শোনানো হয়। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবারের অন্যান্য শহীদ সদস্য ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং দেশের অব্যাহত সমৃদ্ধির জন্য এবং সার্বিক করোনা মহামারীর কবল থেকে বিশ্বকে পরিত্রাণ করার জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
এ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় প্রবাসী বাংলাদেশীসহ আলোচকরা দিবসটির তাৎপর্য এবং বাঙালি জাতির ইতিহাসে ৭ই মার্চের ভূমিকার উপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ-এর ভিডিও প্রদর্শিত হয়। আলোচনা সভায় অন্যতম প্রধান আলোচক হিসেবে দূতাবাসের সামরিক উপদেষ্টা ৭ই মার্চের ভাষণের উপর বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা করেন।
এছাড়াও আলোচনায় আলোচকরা জাতির পিতার এই ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার সূক্ষ অথচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরেন। আলোচনা সভায় শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতাকে রক্ষার বলিষ্ঠ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের `রোল মডেল` হিসেবে সুপরিচিত। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করার জন্য তিনি সকলকে আহ্বান জানান।
ব্রাজিলে করোনা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির পরিপ্রেক্ষিতে দূতাবাসে সীমিত পরিসরে দিবসটি উদযাপনে বাধ্য হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হলে বৃহৎ পরিসরে ব্রাজিল এবং বাংলাদেশ উভয় দেশের নাগরিকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন করার আশাবাদ ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি হয়।