প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারী, ২০২২ ১০:০৩ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: নৌকায় উঠতে গিয়ে ডুবে গেছে হাতি। লিখিত, অলিখিত, দৃশ্যমান–অদৃশ্য সব যুদ্ধেই বিজয়ী ‘চুনকার বেটি’। পরিবর্তন না প্রত্যাবর্তন। শঙ্কা, আশঙ্কা, অভিযোগ– অনুযোগ সব ছাপিয়ে আবারও জয় মেয়র পদে সেলিনা হায়াৎ আইভী। ১৯২টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ লাখ ৬১ হাজার ভোট পেয়ে হাতি মার্কার বিরুদ্ধে ৬৯ হাজার ১০২ ভোটের ব্যবধানে জিতেছে নৌকা। বেসরকারি ফলাফলে বিজয়ী ২০১১ সালে শামীম ওসমানকে হারিয়ে মেয়রের পদে বসা আইভী। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তৈমুর আলদ খন্দকার পেয়েছেন ৯২ হাজার ১৭১ ভোট।
রাত ৮টার আগেই বেসরকারি সূত্র থেকে ফলাফল নিশ্চিত হয়ে যায়। যত বেশি কেন্দ্রের ফল আসে ততই আনন্দ ঝিলিক দিতে থাকে চুনকা কুটিরে। অন্যদিকে সন্ধ্যার আগেই ফিকে হয়ে যায় তৈমুরের বাড়ির আলো। ১৯২ কেন্দ্রের ফল আসার আগেই উৎসব শুরু হয় নৌকা শিবিরে। মিছিল নিয়ে দেওভোগের দিকে আগাতে থাকেন সমর্থকেরা।
পুরো দেশের চোখ ছিল রাজধানী লাগোয়া আলোচিত জনপদ নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। কি হবে? আইভী কি ধরে রাখবেন নিজের সিংহাসন না কী অভিযোগ ওঠা ‘ওসমান পরিবারের আশীর্বাদ’ নিয়ে তৈমুর ইতিহাস পাল্টে দেবেন। এসব ছাপিয়ে সহিংসতা, বহিরাগত, ধড়পাকড় শব্দগুলো হয়ে উঠেছিল নাসিক নির্বাচনের সমর্থক। কিন্তু এক সময়ের চেনা সেই সন্ত্রাসের জনপদে, এবার হল অচেনা নির্বাচন।
সকাল ৮ টা থেকে বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহন হয় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, কদম রসুল (বন্দর) ও শহর এলাকার ২৭টি ওয়ার্ডে। বিকেলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ব্রিফ করে নাসিক নির্বাচনে ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণার কথা জানায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সামগ্রিকভাবে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হয়েছে বলেও মনে করছে কমিশন।
ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় এ কথা বলেন নির্বাচন কমিশন সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের অন্য কর্মকর্তারা ।
হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে সব শ্রেণি পেশার মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন। প্রার্থী এবং তাঁদের সমর্থকেরা নমনীয় থাকায় কোথাও কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। ভোট গ্রহণ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোনো প্রার্থী বা ভোটার আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি।
বিক্ষিপ্ত দুয়েকটি সংঘর্ষ ছাড়া শান্তিপূর্ণ ছিল সারাদিন। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারিতে আহন দুজন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাসায় ফেরেন তারা। এছাড়া আলোচিত কোনো সহিংসতার ঘটনা দেখা যায়নি। তবে ভোটের দিন সবচেয়ে আলোচিত ছিল ইভিএম। ভোটারদের মধ্যে সহজে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি ভোট না দিতে পারা ও দীর্ঘক্ষন অপেক্ষায় থাকার অভিযোগ ছিল অনেক কেন্দ্র থেকে।
বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জের বেশি কিছু এলাকায় ৪টার পরেও চলে ভোটগ্রহন। কারও আঙ্গুলের ছাপ মিলছে না, ইভিএম মেশিন ধীরে কাজ করছে। এমন বেশকিছু অভিযোগ আসে ভোটারদের পক্ষ থেকে। পুলিশ, র্যাব বিজিবির টহল ছিল চোখে পড়ার মত। কয়েকটি জায়গায় ভীড় করার কারণে লাঠিচার্জ করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
নিউ চাষাঢ়া এলাকার আদর্শ স্কুলের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে এসে ভোটের মাঠের নিরাপত্তার কথা জানান নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে। ভোটারদের নিরাপত্তায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। ভোটকেন্দ্রে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেওয়া হবে না। সিটি করপোরেশনের প্রতিটি কেন্দ্রে কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শতভাগ নিরাপদে ভোটদান হবে।’
‘প্রতিটি কেন্দ্রে পাঁচজন পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি ১২ জন আনসার সদস্য মোতায়েন ছিল। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের টহল ছিল নিয়মিত বিরতিতে।