প্রকাশ: ১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : তৈরি পোশাক ও চিকিৎসা সামগ্রী আমদানি–রফতানির আড়ালে অর্থপাচারের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও চেয়ারম্যান এএসএফ রহমানসহসহ সংশ্লিষ্ট ২৮জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত আইজিপি সিআইডি প্রধান ছিবগাত উল্লাহ।
তিনি বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে প্রায় ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১২’শ কোটি টাকা) সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাচারের সত্যতা পেয়েছে সিআইডি। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর সংস্থাটি গত বছরের ১৭ ও ১৮ সেপ্টম্বরে ঢাকার মতিঝিল থানায় ১৭টি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে। মামলা হওয়ার ১৪ মাস পর সিআইডি একসঙ্গে বেক্সিমকো গ্রুপের সব মামলার চার্জশীট দেওয়ার অনুমোদন করেছে।
সিআইডি প্রধান ছিবগাত উল্লাহ্ বলেন, সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট তদন্তে বেরিয়ে আসে ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত ১৭টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান বৈদেশিক বাণিজ্যের নামে অর্থপাচার তথ্য। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে এলসি খোলা হলেও রফতানি বিপরীতে অর্জিত অর্থ দেশে ফেরত নিয়ে আসা হয়নি। সেই অর্থ পাঠানো হয় দুবাইয়ের আর.আর গ্লোবাল ট্রেডিং লিমিটেডের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও আইয়ারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে। ওই আর.আর গ্লোবাল ট্রেডিং মালিক সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং তার ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমান।
তিনি বলেন, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের ১৭টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান বৈদেশিক বাণিজ্যের নামে ৯৬ কোটি ৯৬ লাখ ৬৮০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা) পাচার করেছে। এর বিপরীতে দেশে কোনো অর্থ ফেরত আসেনি।
এরই মধ্যে আদালতের আদেশে আসামিদের বিভিন্ন সম্পদ ক্রোক করেছে সিআইডি। তার মধ্যে রয়েছে— ঢাকা জেলার দোহার থানার প্রায় ২ হাজার শতক জমি ও স্থাপনা, গুলশানের ‘দ্য এনভয় বিল্ডিং’-এর ৬ হাজার ১৮৯.৫৪ বর্গফুট ফ্ল্যাট, এবং গুলশান আবাসিক এলাকার ৬৮/এ রোডের ৩১ নম্বর প্লটে অবস্থিত ২ হাজার ৭১৩ বর্গফুটের ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাট। এ ছাড়া আসামিদের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে এবং বিদেশ গমনেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ক্রোককৃত সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকার মধ্যে। মামলাগুলোতে বেক্সিমকো চেয়ারম্যান এএসএফ রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানসহ ২৮ ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট ১৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে অটোম্যান লুপ এ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াসিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এদিকে বর্তমানে কারাগারে থাকা সালমান এফ রহমানকে সব মামলাতে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
মামলার চার্জশীটে অভিযুক্তরা হলেন
বেক্সিমকো গ্রুপের অর্থপাচার সব মামলায় সালমান এফ রহমান ও তাঁর ভাই এএসএফ রহমান এবং ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও তাঁর ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানকে আসামি করা হয়েছে। এর বাইরে অন্য আসামীরা হলেন— স্কাইনেট এ্যাপারেলস ও এ্যাডভেঞ্চার গার্মেন্টসের আনোয়ারুল বাশার ও নাসরিন আহমেদ; আরবান ফ্যাশান লিমিটেডের হেলাল উদ্দিন ও শাহিদা রহমান; অটামন লুপ এ্যাপারেলস ও পিয়ারলেস গার্মেন্টসের ওয়াসিউর রহমান ও রোজিয়া আক্তার; এ্যাপোলো এ্যাপারেলসের সৈয়দ ফরিদুজ্জামান ও কামরুন নাহার নাসিমা; পিংক মেকার গার্মেন্টসের কাজী উম্মে কুলসুম মৈত্রী ও রুম্মান মোহাম্মদ ফাহিম খান; মিট ওয়েস্ট ও স্প্রিংফুল গার্মেন্টসের কোহিনুর আবেদীন ও মোহাইমিনুল ইসলাম; কাঁচপুর ও কজি এ্যাপারেলসের মাহফুজুর রহমান খান ও সৈয়দ তানভীর এলাহী আফেন্দী; বেক্সটেক্স গার্মেন্টসের মাসকুরা খানম ও সাইফুর রহমান; কসমো পলিটন ও উইন্টার স্প্রিন্ট এ্যাপারেলসের সাজিয়া জামান ও খাদিজা বিনতে আলম; ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়ার এ্যাপারেলসের আহমদ জালাল খান মজলিস ও ইমরান খান মজলিস; এসএস ফ্যাশানের আবু নাঈম মাহমুদ সালেহীন ও মোস্তাফিজুর রহমান তানভির এবং প্লাটিনাম গার্মেন্টসের মোহাম্মদ আলিফ ইবনে জুলফিকার ও নুসরাত হায়দার।
প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক পাচারের পরিমান
স্কাইনেট এ্যাপারেলস লিমিটেড ২৬ লাখ ৪৪ হাজার ৯৯২, আরবান ফ্যাশান লিমিটেড ১ কোটি ৪৪ লাখ ৬১ হাজার ৫৭৬.৮০, অটামন লুপ এ্যাপারেলস ২৮ লাখ ৩২ হাজার ৪২৮, এ্যাপোলো এ্যাপারেলস ২কোটি ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬৪, এ্যাডভেঞ্চার গার্মেন্টস ২৩ লাখ ২৮ হাজার ৭৫০, পিংক মেকার গার্মেন্টস ২৬ লাখ ৬৩ হাজার ১৭৬, পিয়ারলেস গার্মেন্টস ১৯লাখ ৪৭ হাজার, মিট ওয়েস্ট গার্মেন্টস ২৯ লাখ ২৫ হাজার, স্প্রিংফুল গার্মেন্টস ৪৬ লাখ ৮৭ হাজার ৮৭৫, কাঁচপুর এ্যাপারেলস ২৯ লাখ ৭৯ হাজার ৯২০, কজি এ্যাপারেলস ১৯ লাখ ৬৪ হাজার ২৫০, বেক্সটেক্স গার্মেন্টস ১ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার ২৩৬, কসমো পলিটন ২৯ লাখ ৯৭ হাজার, উইন্টার স্প্রিন্ট এ্যাপারেলস ২৩ লাখ, ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়ার এ্যাপারেলস ৪৫ লাখ ৪১ হাজার ২০৩.২৩, এসএস ফ্যাশান ৩৮ লাখ ২২ হাজার ১৮৭.০৫ এবং প্লাটিনাম গার্মেন্টস ১৮ লাখ ৬ হাজার ১৪৪ মার্কিন ডলার। টাকাপাচারের যুক্ত সবগুলো প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। গাজীপুরের কাশিমপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে সব প্রতিষ্ঠানের অবস্থান।
মতিঝিল জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস শাখা থেকে বিভিন্ন সময় ১৭টি প্রতিষ্ঠানের লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) খোলা হয়। এ বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এসব মামলায় জনতা ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়। তবে এলসি খোলায় তাদের এতে কোনো সংশ্লিষ্ঠতা আছে কী না তা জানতে তদন্ত চলছে।