প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারী, ২০২২ ০৭:০৮ পূর্বাহ্ন
 
            
নিজস্ব প্রতিবেদক: এবারের কৃষি মন্ত্রীদের সম্মেলন কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক বাংলাদেশে মাটির টেকসই ব্যবহারের নানা চ্যালেঞ্জ ও তা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা ও টেকসই ব্যবহার অনেক চ্যালেঞ্জিং। ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা মেটাতে মাটির অতিরিক্ত ব্যবহার, মাটির অবক্ষয়, দূষণ, লবণাক্ততা, জলবায়ু পরিবর্তন, মাটির পুষ্টি উপাদানের অবক্ষয়, মাটি ক্ষয় প্রভৃতি সমস্যা রয়েছে। তা ছাড়া, নগরায়ণ, শিল্পায়নসহ নানা কারণে বছরে কৃষি জমি কমছে ০.৪৩% হারে। বাংলাদেশ সরকার মাটির টেকসই ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।
মাটির টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে সম্মিলিত বৈশ্বিক উদ্যোগ জরুরি। এ ব্যাপারে উন্নত দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহকে সমন্বিত ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা সহ উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশের সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক।
আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ‘বার্লিন কৃষি মন্ত্রীদের সম্মেলন’ ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এ আহ্বান জানান। জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি অব ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারের (বিএমইএল) আয়োজনে ৫ দিনব্যাপী ১৪ তম ‘গ্লোবাল ফোরাম ফর ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার (জিএফএফএ) ’ এর শেষ দিনে কৃষি মন্ত্রীদের এ সম্মেলন হয়। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এবার গত ২৪ জানুয়ারি থেকে আজ ২৮ জানুয়ারি ভার্চুয়ালি কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ভূমির টেকসই ব্যবহার: মৃত্তিকা থেকেই খাদ্য নিরাপত্তার শুরু’ এই শিরোনামে কৃষি-খাদ্য বিষয়ক বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এ সম্মেলনে বিশ্বের ৭০ টিরও বেশি দেশের কৃষিমন্ত্রী ও ১০টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেছে।
ড. রাজ্জাক বলেন, মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা, বর্তমানে ও ভবিষ্যতে মাটির টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত ও বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষা করতে উন্নতদেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে সমন্বিত ও জোরাল কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি তাদেরকে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশের পাশে দাঁড়াতে হবে, সহযোগিতা বৃদ্ধিতে এগিয়ে আসতে হবে।
কৃষি মন্ত্রীদের সম্মেলনে জার্মান ফেডারেল মিনিস্টার অব ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অজদেমির, কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন বিষয়ক ইইউ কমিশনার জানুস্জ উজসিচোস্কি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উপমহাপরিচালক জ্যাঁ মেরি পগাম ও বিভিন্ন দেশের কৃষিমন্ত্রীরা বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনের জানান হয়, বৈশ্বিক খাদ্য উৎপাদনের ৭০% মাটির ওপর নির্ভরশীল। সারা বিশ্বের মাটিই আজ হুমকির সম্মুখীন। নগরায়ণ, শিল্পায়ন, অবকাঠামো নির্মাণ, জমির উৎপাদনশীলতা হ্রাস, দূষণ, লবণাক্ততা, মরুকরণ নানা কারণে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে বেশি জমি প্রয়োজন, কারণ খাদ্য চাহিদা বাড়ছে।
এ বিষয়কে সামনে রেখে গত পাঁচ দিনে বিভিন্ন দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা একটি ‘যৌথ ইশতেহার’ (কমিউনিক) প্রস্তুত করেছেন। মাটির টেকসই ব্যবহার ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে যৌথ ইশতেহারে চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ২৯টি বিষয়ে (কল ফর অ্যাকশন) একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
এবারের কৃষি সম্মেলনে ৪টা বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে আলোচনা ও করণীয় নির্ধারিত হয়। প্রথমত, মাটির অবক্ষয় রোধ করণীয়। মৃত্তিকার গুণাগুণ ও বাস্তুতন্ত্রকে কীভাবে রক্ষা করা যায়। কারণ, এক-তৃতীয়াংশ প্রজাতি মাটির নিচে বসবাস করে।
দ্বিতীয়ত, অবক্ষয় সাধিত মাটির উন্নয়ন। এফএওর হিসেবে ইতিমধ্যে বিশ্বের ৩৩% মাটি অবক্ষয় সাধিত/ডিগ্রেডেড হয়েছে, যা উদ্বেগজনক। কারণ, ১০ সেমি মাটির উন্নয়ন করতে প্রায় ২০০০ বছর লাগে। এ ছাড়া, মাটির অবক্ষয়ের কারণে আগামী ২৫ বছরে খাদ্যর দাম ৩০ বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তৃতীয়ত, সীমিত জমির টেকসই ব্যবহার ও কৃষি জমিকে কীভাবে রক্ষা করা যায়।
চতুর্থত, কৃষকেরা কীভাবে জমির মালিকানা পেতে পারে। প্রকৃত কৃষকের নিকট জমির মালিকানা থাকলেই খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করা সম্ভব হবে। অথচ, ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ৫ বছরে বিশ্বব্যাপী ১ বিলিয়ন মানুষ তাদের নিজস্ব জমি ও ভূসম্পত্তি থেকে মালিকানা হারাবে বা উৎখাত হবে।