প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ০৪:৫১ পূর্বাহ্ন
 
            
নিজস্ব প্রতিবেদক :স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দেশে সীমান্ত এলাকা দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইস ও ইয়াবা আসছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে সেই প্রতিবেশী দেশই চালান আসতে উৎসাহ দিচ্ছে। সীমান্তে অত্যাধুনিক সেন্সরের ব্যবস্থা চালু করে এসব মাদকের প্রবেশ ঠেকানো হবে।
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সদর দপ্তরে ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধান অতিথির পক্ষ থেকে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মনোনীতদের পদক তুলে দেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কোনো ড্রাগ প্রডিউসিং (মাদক উৎপাদন) কান্ট্রি নয়। কিন্তু তার পরেও মাদকের ভয়াল থাবা থেকে আমাদের প্রজন্মকে রক্ষার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেছি। পার্শ্ববর্তী দেশ যারা মাদক উৎপাদন করে, তাদের সঙ্গে মন্ত্রী, ডিজি, বিজিবি ও কোস্ট গার্ড পর্যায়ে আলোচনা করছি। কোস্ট গার্ডকে আরও শক্তিশালী করছি। শক্তিশালী করার অনেকগুলো উদ্দেশ্যের মধ্যে মাদক রোধ একটি উদ্দেশ্য।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভয়ংকর মাদক ইয়াবা ও আইস প্রবেশ রোধে সীমান্ত শক্তিশালী করছি। সীমান্তে সেন্সর লাগানোসহ কোস্ট গার্ডকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। মাদককে জিরো টলারেন্স নীতিতে আমরা রোধ করব।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইয়াবা ও আইস ভয়ংকর ড্রাগ। এই ড্রাগ যারা সেবন করে, তাদের শরীর ও মেধা নষ্ট হয়ে যায় এবং সমাজের জন্য সে বোঝা হয়ে যায়। এসব মাদক নিয়ন্ত্রণে শুধু কোস্ট গার্ড নয়, পুলিশ, বিজিবিসহ সবাই সতর্ক রয়েছে। ৪৭ হাজার কিলোমিটার আমাদের উপকূলীয় এলাকা। সীমান্তে একটি এলাকা মাদক নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী করছি, কিন্তু অন্য এলাকা দিয়ে মাদক কারবারিরা মাদক আনার চেষ্টা করছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ইয়াবাকে উৎসাহ দেয় বলেই অহরহ দেশে আসছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘কোস্ট গার্ডে জনবলের সংকট ছিল। কোস্ট গার্ডের আইনে রয়েছে এখানকার সবাই নৌবাহিনী থেকে নিয়োগ হবে, সে জন্য একটু সংকট আছে। তাই আমরা খুব শিগগির আইনের সংশোধন করছি, যাতে নিজস্ব জনবল নিয়োগের মাধ্যমে বাহিনীটি বিজিবির মতো নিজস্ব বাহিনীতে পরিণত হয়। পটুয়াখালীতে কোস্ট গার্ডের একটি ট্রেনিং একাডেমি স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে জনবলকে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা হবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালে কোস্ট গার্ডের বেসরকারি বিল এনেছিলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী থাকাকালে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান, বাহিনীতে পরিণত হয়েছে কোস্ট গার্ড। ১৯টি জেলা উপকূলীয়, ৪৭ হাজার কিলোমিটার কোস্টাল এরিয়ার রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা একটা দুরূহ কাজ। কোস্টগার্ড তৈরির আগে এগুলো ছিল অরক্ষিত।
আজ বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আগারগাঁওস্থ কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ২৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদ্যাপিত হয়। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আখতার হোসেন এবং আমন্ত্রিত অন্যান্য সামরিক ও অসামরিক অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধান অতিথির পক্ষ হতে বিশেষ অতিথি কর্তৃক কোস্ট গার্ড এর বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, নাবিক, অসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বীরত্বপূর্ণ ও সাহসী কার্যক্রমের জন্য পদক বিতরণ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদূর প্রসারী ভাবনার ফলেই আমাদের নিজস্ব সমুদ্র এলাকা দাবী সম্বলিত “The Territorial Waters and Maritime Zones Act, 1974ÕÕ প্রণীত হয়। পরবর্তীতে তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড প্রতিষ্ঠার সোপান রচনা করেন। বিগত ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় মহান জাতীয় সংসদে ‘‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বিল’’ উত্থাপন করা হয়। যার প্রেক্ষিতে ১৯৯৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এ বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়।
শুরুতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী থেকে ২টি জাহাজ ও ২টি বোট এবং প্রেষণে আগত ২২০ জন নৌ সদস্য নিয়ে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড তার পথ চলা শুরু করে। পরবর্তীতে কালের পরিক্রমায় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় এ বাহিনীতে নতুন নতুন প্লাটফর্ম ও অবকাঠামো সংযোজিত হয়েছে। এর ফলে বাহিনীর অপারেশনাল কর্মকান্ডে ব্যাপক গতি সঞ্চার হয়েছে এবং অর্জিত হয়েছে নানা সাফল্য। কোস্ট গার্ডের নিরলস প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম বন্দর ঝুঁকিপূর্ণ বন্দরের তালিকা থেকে মুক্ত হয়ে একটি নিরাপদ বন্দরে পরিনত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষ উদ্যাপনের লক্ষ্যে কোস্ট গার্ড কর্তৃক চর ও দ্বীপাঞ্চলের স্থানীয় জনগণের মাঝে বিশুদ্ধ/সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থার পাশাপাশি উপকূলীয় জেলেদের জন্য লাইফ জ্যাকেট ও রেইনকোট বিতরণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত গরীব ও দুস্থদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা ইত্যাদি প্রদান করা হয়। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে বিশ্বব্যাপী চলমান কোভিড- ১৯ মহামারির দুঃসহ দিনগুলোয় উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় তিন কোটি মানুষের মাঝে সাহস আর ভরসা জুগিয়ে এসেছে কোস্ট গার্ড এর সদস্যরা।
এ ছাড়াও করোনাকালীন ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন ব্যবস্থাপনা ও জননিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি খাদ্যসামগ্রী নিয়ে অসহায়, দুঃস্থ, কর্মহীন এবং শ্রমজীবী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে কোস্ট গার্ড। আসন্ন দিনগুলোতে দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণে সততা, পেশাদারিত্ব এবং দেশপ্রেমের চেতনাকে বুকে ধারণ করে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যেতে বদ্ধ পরিকর কোস্ট গার্ড। সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে জাতির প্রত্যাশা পূরণে নিরলস কাজ করে যাবে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড।