প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ০৫:৩০ পূর্বাহ্ন
 
            
নিজস্ব প্রতিবেদক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশসমূহ কর্তৃক জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় উন্নত দেশসমূহ থেকে স্বল্প মূল্যে অধিকতর সবুজ, টেকসই ও উন্নত প্রযুক্তি সরবরাহ অত্যন্ত জরুরী।
গতকাল সোমবার জেনেভাস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন কর্তৃক আয়োজিত “আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা সংক্রান্ত অগ্রাধিকারসমূহ” শীর্ষক এক ওয়েবিনারে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিয়ে এ কথা বলেন।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ)-এর আওতায় অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উন্নয়নশীল দেশসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সম্ভাব্য করণীয়সমূহ তুলে ধরা হয়। উল্লেখ্য, ২০১১-১৩ মেয়াদে সিভিএফ সভাপতি হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালনের পর বাংলাদেশ দ্বিতীয় মেয়াদে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা ৫৫টি দেশের এ ফোরামের সভাপতিত্ব করছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের মানুষের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবসমূহ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করেন। একইসাথে মন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত কার্যক্রমসমূহও তুলে ধরেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানান। এ সময় তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের অতি ঝুঁকিতে থাকা দেশসমূহের উন্নয়ন প্রতিবন্ধকতাসমূহ অতিদ্রুত নিরসন করার জন্য উন্নত দেশসমূহের প্রতি আহবান জানান। বিশেষকরে, তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ সকল দেশসমূহের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উপর নেতিবাচক প্রভাবসমূহ প্রশমনের উপর জোর দেন।
অন্যান্যের মধ্যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. এনগোজি ওকোনিও আইওয়েলা, বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থার মহাপরিচালক ড. দারেন তাং, জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার উপ-মহাসচিব ইসাবেল ডুরান্ট, জাতিসংঘ শিল্প উন্নয়ন সংস্থার উপ-মহাপরিচালক হিরোশি কুনিওশি, সিভিএফ সভাপতির বিশেষদূত মো: আবুল কালাম আজাদ, সাউথ সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক ড. কর্লোস মারিয়া কোরেয়া এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, ভারত ও বার্বাডোসের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধিগণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক তাঁর বক্তব্যে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বাণিজ্য নীতিসমূহে অবশ্যই উন্নয়নশীল দেশসমূহের জন্য বিদ্যমান প্রযুক্তি হতে টেকসই ও সবুজ প্রযুক্তিতে স্থানান্তরের যথাযথ সুবিধা ও ব্যবস্থা থাকতে হবে। তিনি জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশসমূহে আধিকতর অর্থায়ন ও বাণিজ্য সহায়তা প্রদানের জন্য উন্নত দেশসমূহকে আহবান জানান।
বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থার মহাপরিচালক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অভিনব প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উন্নয়নশীল দেশসমূহে প্রযুক্তি সহায়তা বৃদ্ধির উপর জোর দেন। স্বল্পোন্নত দেশসমূহের রপ্তানিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত বিধির ক্ষেত্রে এমন কোনো পদক্ষেপের বিষয়ে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার উপ-মহাসচিব সতর্ক করেন। অর্থায়নের ঘাটতিকে টেকসই পরিবেশের জন্য কাঠামোগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা বলে তিনি চিহ্নিত করেন। তিনি উন্নয়নশীল দেশসমূহে, বিশেষকরে ঝুঁকিতে থাকা বিশটি (ভি-২০) দেশে অতিরিক্ত অর্থ সহায়তা, পেটেন্ট মুক্ত সবুজ প্রযুক্তি সরবরাহ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার আহবান জানান। জাতিসংঘ শিল্প উন্নয়ন সংস্থার উপ-মহাপরিচালক কার্বন নিঃসরণ প্রশমনে টেকসই শিল্পায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
জেনেভাস্থ বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ছাড়াও জলবায়ু, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কিত বেসরকারি সংস্থা, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে যোগ দেন।