প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১১:২৩ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গত ১২ বছরে (২০১৪—২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত) ৬৭ হাজার ২৮৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৯১ হাজার ৫১১জন নিহত এবং ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭ জন মানুষ আহত হয়েছেন। আজ শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটের (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলানায়তনে এক আলোচনা সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
আজ ১৩ সেপ্টেম্বর যাত্রী অধিকার দিবস উপলক্ষে ‘যাত্রী অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক অঙ্গীকার চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সেখানে সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণহানী কমাতে উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা, যানজট ও ভোগান্তি লাঘবের পরিকল্পনা ও অঙ্গীকার দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে ধরার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।
লিখিত বক্তব্যে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ৬৭ হাজার ২৮৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৯১ হাজার ৫১১জন নিহত এবং ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭ জন মানুষ আহত হয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে অসহনীয় যানজটে প্রতিদিন কেবল রাজধানীতে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি ৯৮ হাজার কোটি টাকা। জ্বালানি অপচয় প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার।
সভায় বক্তারা নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান—সড়ক দুর্ঘটনা রোধে জাতীয় অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন, গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন, ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নে কঠোরতা এবং দুর্নীতি দমন, শহরাঞ্চলে যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং পার্কিং ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, চালক প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করা, সড়ক নির্মাণে পরিকল্পিত ও বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ, দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত চিকিৎসা সহায়তার জন্য বিশেষ ফান্ড গঠন।
আলোচকরা বলেন, সরকারকে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে গত আওয়ামী লীগের আমলের চিন্তা করলে এখন হবে না। এখানে যাত্রী, শ্রমিক ও মালিক পক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো যোগ্যতা ও ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিতে বসাতে হবে। এ ছাড়া একই মন্ত্রণালয়ে একজনকে দীর্ঘদিন রাখলে সেই সেক্টর অচল হয়ে যায়। তার উদারণ সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবাইদুল কাদের। এছাড়া এই সময়ে দাড়িয়েও দেশের একটি সড়ককে দুর্ঘটনা রোধে রোল মডেল করতে পারিনি।
এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যানজটে আর্থিক ক্ষতির চেয়ে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি কয়েকগুণ বেশি। এতে একজন নাগরিকের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে ও উদ্বেগ বাড়ছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুস ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, কিডনি, হৃদযন্ত্র ও প্রজননতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সড়কে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানী বন্ধ করা ও যানজটের ভোগান্তি লাঘবের কৌশল থেকে স্ব স্ব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে।
আলোচনা সভায় এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, বিআরটিএ’তে আমরা গাড়ির ফিটনেস করাতে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। আবার রাস্তায় চলাচল করা গণপরিবহনের দিকে তাকানো যায় না। এসব গাড়ির নাকি ফিসটনেস করাতে যাওয়া লাগে না। এমনিই হয়ে যায়। এসব কিছুর সংস্কার না হলে কিছুই হবে না।
গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান একাই যাত্রী সমিতি, শ্রমিক সমিতি ও মালিক সমিতির নেতা ছিলেন। এই অবস্থা হলে ভালো কিছু আশা করি কিভাবে। পরে যাত্রী কল্যাণ সিমিতির দাবির সঙ্গে একমত ঘোষণা করেন তিনি।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জানুয়ারি থেকে আগস্ট (৮ মাস) পর্যন্ত ৪৬৬৭টি দুর্ঘটনায় ৪৮২১ জন নিহত ও ১০ হাজার ৮০০ জন আহত; ২০২৪ সালে ৬২৫৯টি দুর্ঘটনায় ৮৫৮৩ জন নিহত ও ১২ হাজার ৬০৮ জন আহত; ২০২৩ সালে ৬২৬১টি দুর্ঘটনায় ৭৯০২ জন নিহত ও ১০ হাজার ৩৭২ জন আহত; ২০২২ সালে ৬৭৪৯টি দুর্ঘটনায় ৯৯৫১ জন নিহত ও ১২ হাজার ৩৫৬ জন আহত; ২০২১ সালে ৫৬২৯টি দুর্ঘটনায় ৭৮০৯ জন নিহত ও ৯ হাজার ৩৯ জন আহত; ২০২০ সালে ৬৫৮১টি দুর্ঘটনায় ৮৬৪২ জন নিহত ও ২১ হাজার ৮৫৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ২০১৯ সালে ৫৫১৬টি দুর্ঘটনায় ৭৮৫৫ জন নিহত ও ১৩ হাজার ৩৩০ জন আহত; ২০১৮ সালে ৫৫১৪টি দুর্ঘটনায় ৭২২১ জন নিহত ও ১৫ হাজার ৪৬৬ জন আহত; ২০১৭ সালে ৪৯৭৯টি দুর্ঘটনায় ৭৩৯৭জন নিহত ও ১৬ হাজার ১৯৩ জন আহত; ২০১৬ সালে ৪৩১২টি দুর্ঘটনায় ৬০৫৫জন নিহত ও ১৫ হাজার ৯১৪ জন আহত; ২০১৫ সালে ৬৫৮১টি দুর্ঘটনায় ৮৬৪২ জন নিহত ও ২১ হাজার ৮৫৫ জন আহত এবং ২০১৪ সালে ৫৯২৮টি দুর্ঘটনায় ৮৫৮৯ জন নিহত ও ১৭ হাজার ৫২৪জন আহত হয়।
আলোচনা সভায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি রফিকুজ্জামনের সভাপত্বিতে আরও বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের দীপক রায়, সংগঠনের সাবেক চেয়ারম্যান শরিফ রফিকুজ্জামান, সিনিয়র সদস্য সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি ইয়াসিন চৌধুরী প্রমুখ।