ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩২, ৮ জ্বমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ হস্তান্তর মঙ্গলবার


প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:২২ অপরাহ্ন


জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ হস্তান্তর মঙ্গলবার

নিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারকে দেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সোমবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা তথা ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
 
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একে কমিশনের সমাপনী বৈঠক বলে আখ্যা দিয়েছে। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সমকালকে বলেছেন, সরকারপ্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের কাছে সুপারিশ জমা দেবে কমিশন। এরপর সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।
 
কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ-২০২৫’ জারি করতে সুপারিশ করা হবে। জুলাই সনদ হবে এই আদেশের অংশ। সনদ নয় আদেশের ওপর গণভোট। গণভোটে আদেশটি অনুমোদিত হলে, আগামী সংসদের দ্বৈত ভূমিকা থাকবে। নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে গঠিত হবে 'সংবিধান সংস্কার পরিষদ'।
 
কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সংসদ এবং পরিষদ একই সঙ্গে কাজ করবে। সংসদের স্পিকার হবেন পরিষদের চেয়ারম্যান। সরকার গঠন, আইন ও বাজেট প্রণয়নের মতো নিয়মিত কাজ করবে সংসদ। পরিষদ জুলাই সনদে থাকা সংস্কার বাস্তবায়নের সংবিধানের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংশোধন করবে। এ জন্য গণভোটের মাধ্যমে পরিষদকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তনের ক্ষমতা তথা কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ার দেওয়া হবে।
 
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ক্ষমতা বলে আদেশ জারি করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে কমিশন। যদিও বিএনপি সাংবিধানিক আদেশ জারির বিরুদ্ধে। দলটির অবস্থান হল, বিদ্যমান আইনে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচনের দিনে গণভোট আয়োজন সম্ভব। জামায়াত এবং এনসিপি সনদকে আইনী ভিত্তি দিয়ে নির্বাচনের আগে গণভোট দাবি করছে। কমিশন সদস্যরা সমকালকে জানিয়েছে, অভ্যুত্থানের ক্ষমতাবলে জারি করা আদেশই হবে আইনি ভিত্তি। 

গণভোটে জনগণকে প্রশ্ন করা হবে, ‘আপনি আদেশ সমর্থন করেন?’ 'হ্যা' 'না' ভোটে মতামত জানাবেন ভোটাররা। সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার যোগ্য নাগরিকরা গণভোট ভোট দিতে পারবেন।
 
গত ১৭ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরিত জুলাই সনদে থাকা সংস্কারের ৮৪ সিদ্ধান্তের মধ্যে পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনসহ ৯ মৌলিক সংস্কারে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) রয়েছে। দলটির দাবিতে সনদে নোট অব ডিসেন্ট অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। 

বিএনপির ভাষ্য, যে দলের যে সংস্কারে নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে, ক্ষমতায় গেলে তা বাস্তবায়ন না করার এখতিয়ার রাখবে। যদি জামায়াত, এনসিপি গণভোটে নোট অব ডিসেন্ট চায় না। দল দুটির দাবি, গণভোটে অনুমোদিত হলে পুরো সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। 

কমিশন সূত্র জানিয়েছে, গণভোটে নোট অব ডিসেন্ট থাকবে না। উচ্চকক্ষে পিআর নিয়েই মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ রয়েছে। বিএনপি পিআরের বিরোধী। অন্যান্য দল অন্তত উচ্চকক্ষে পিআর চায়। তাই আদেশের খসড়ায় থাকছে, গণভোট আদেশ পাস হলে সংবিধান সংস্কার পরিষদ পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনে অনুমোদন দেবে। আগামী সংসদেই উচ্চকক্ষ গঠিত হবে।
 
আদেশে বলা থাকতে পারে, আগামী ৯ মাসের মধ্যে সংবিধান সংস্কার পরিষদ জুলাই সনদ অনুযায়ী সংস্কারে বাধ্য থাকবে। এরপর পরিষদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। যমুনার বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, কমিশন আদেশ এবং সুপারিশের যে খসড়া করেছে, তা গ্রহণ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। কোনো কিছু পরিবর্তন করতে বলেননি।
 
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কমিশনের সব নথি, আলোচনার ভিডিও, অডিও, ছবি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেছেন, এগুলো মহামূল্যবান সম্পদ। জাতি হিসাবে আমরা কোন প্রেক্ষাপটে কী প্রক্রিয়ায় কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম, তা সকলের জন্য দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং উন্মুক্ত থাকা দরকার।

বৈঠকে সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি অন্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নেও সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। 

আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আইন বিশেষজ্ঞ, বিচারপতি, শিক্ষাবিদসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলোচনায় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের প্রধান দায়িত্ব ছিল সংস্কারের একটি রূপরেখা তৈরি করা। মিল-অমিল সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা ছিল। তারা দিনের পর দিন ধৈর্য্য ও বিচক্ষণতার সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছে। 

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সনদ বাস্তবায়নে সবাই সরকারের নিবিষ্টতা ও সাহসিকতা প্রত্যাশা করে। কমিশন সদস্য ড. ইফতেখারুজ্জামান জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।  

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, শহিদ পরিবার বলছে সংস্কার নিশ্চিত না হলে তাদের সন্তানদের জীবন উৎসর্গ করা বৃথা যাবে।


   আরও সংবাদ