প্রকাশ: ৩০ জুন, ২০১৯ ০০:০০ পূর্বাহ্ন
বরগুনায় প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে শাহনেওয়াজ রিফাতকে (রিফাত শরীফ) কুপিয়ে হত্যার মামলায় সাগর নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ রোববার তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে রিফাত হত্যার ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করা হলো।
পুলিশ হেডকোয়ার্টারের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা জানান, সাগর এজাহারভুক্ত আসামি। তাকে বরগুনা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যার পরিকল্পনাকারী গ্রুপের সদস্য সাগর চাকরি পেতে যাচ্ছিলেন পুলিশের কনস্টেবল পদে। ইতোমধ্যেই তিনি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আজ রোববার তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল বরগুনা পুলিশ লাইনে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, কোনো আবেদনকারী যদি ফৌজদারী মামলার আসামি হয় তাহলে তার নিয়োগ আপনাআপনি বাতিল হয়ে যায়। তার পুলিশে চাকরির করার সুযোগ নেই।
রিফাত হত্যার পরিকল্পনা করা মেসেঞ্জার গ্রুপ ০০৭-এ যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করেন মো. সাগর। তবে রিফাতের ওপর হামলার সময় তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে জানান। সাগর বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুল লতিফ মাস্টারের ছেলে। বর্তমানে তারা বরগুনা পৌরসভার পশ্চিম আমতলা পাড় সড়কের বাসিন্দা।
রিফাত হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে মেসেঞ্জার গ্রুপ ০০৭-এর কথোপকথনের ভাইরাল ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি স্ক্রিনশটে দেখা যায়, রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের দিন বুধবার সকাল ৮টা ৬ মিনিটে রিফাত হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী গ্রুপে লেখেন, ‘০০৭ এর সবাইরে কলেজে দেখতে চাই।’ এর উত্তরে মোহাম্মাদ নামে একজন লেখেন, ‘কয়টায়।’ নয়ন ফরাজির লেখা ‘০০৭ এর সবাইরে কলেজে দেখতে চাই’- এর উত্তরে বরগুনায় পুলিশের কনেস্টবল পদে চাকরি পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ মো. সাগর সম্মতিজ্ঞাপনসূচক এবং বিজয়ের প্রতীক ভি (v) সিম্বল দিয়ে উত্তর দেন। এরপর মোহাম্মাদ আবার রিফাত ফরাজীকে মেনশন করে লেখেন ‘কয়টায় ভাই।’ এরপর রিফাত ফরাজী উত্তর দেন ‘৯টার দিকে।’
এ বিষয়ে গ্রেপ্তারের পূর্বে মো. সাগর মোবাইল ফোনে গণমাধ্যমকে জানান, আমি ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। আমি বরগুনা এসেছি ২২ তারিখ, পুলিশে চাকরি পেতে বাছাই পর্বে লাইনে দাড়ানোর জন্য। রিফাত শরীফের ওপর হামলার আগের দিন বরগুনা জেনালের হাসপাতালে ভুয়া চিকিৎসায় আবদুল্লাহ নামে একজন মারা যাওয়ার প্রতিবাদে আমরা সবাই মানববন্ধন করেছিলাম। এরপর রিফাত শরীফের ওপর হামলার দিন সকালে আমি ঘুম থেকে জেগে দেখি ওই মেসেজটি। আমি বুঝিনি যে ৯টায় কলেজে থাকতে হবে। আমি ভেবেছি ওই মানববন্ধনেরই কিছু। পরে আমি একটি লাইক দিছি। এরপর আমি বের হয়ে গেছি। পরে আর কি হয়েছে তা আমি দেখিনি। পরে আমি রেজাল্ট আনতে গেছি। তিনি আরও বলেন, রিফাত শরীফের ওপর হামলার সময় আমি কলেজে ছিলাম না। ওই সময় আমি আমার ভাইভা পরীক্ষার রেজাল্ট আনতে গিয়েছিলাম। পরে আমি সাড়ে ১১টা নাগাদ সেখান থেকে আসি।
নয়ন এবং রিফাত ফরাজীর সঙ্গে পরিচয় সম্পর্কে সাগর বলেন, দুই বছর আগে আমি বরগুনা এসেছি। এর মধ্যে আমি দুই মাস বরগুনা থেকেছি এবং বাকি সময় ঢাকায় থেকেছি। একদিন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় এলাকার তানভীর আমাকে ডেকে নিয়ে বলে- ‘আপনার বাসা কই?। তখন আমি বলি, আমি এখানে নতুন। তখন সে রিফাত ফরাজীর কথা উল্লেখ করে বলে- ‘এলাকায় নতুন আসছেন। এই ভাইরে চিন্না রাখেন। ভাইয়ের কথা মতো চলতে হবে এলাকায় থাকতে হলে।’
এদিকে রিফাত শরীফকে হত্যার ঘটনায় পরদিন বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ১২ জন আসামির নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন তার বাবা মো. আ. হালিম দুলাল শরীফ। এ মামলার আসামিরা হলো ক্রম অনুযায়ী সাব্বির আহমেদ নয়ন (নয়ন বন্ড) (২৫), মো. রিফাত ফরাজী (২৩), মো. রিশান ফরাজী (২০), চন্দন (২১), মো. মুসা, মো. রাব্বি আকন (১৯), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রায়হান (১৯), মো. হাসান (১৯), রিফাত (২০), অলি (২২) ও টিকটক হৃদয় (২১)। বাকি পাঁচ থেকে ছয় জন অজ্ঞাত আসামি।
১২ আসামির মধ্যে আগে ধরা পড়ে দুজন। এরা হলো চন্দন ও মো. হাসান। আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয় সন্দেহভাজন হিসেবে। নাজমুল হাসান নামে এই সন্দেহভাজনের নাম মামলায় নেই। এরমধ্যে গ্রেফতার দুই আসামি চন্দন ও হাসানের সাত দিন এবং নাজমুল হাসানের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। শুক্রবার (২৮ জুন) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. রাসেল এ রিমান্ড আদেশ দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) হুমায়ন কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেন।