ঢাকা, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৬ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

নির্বাচন করা নয়, বিএনপি’র উদ্দেশ্য নির্বাচনকে বিতর্কিত করা : তথ্যমন্ত্রী


প্রকাশ: ২ জানুয়ারী, ২০২০ ০০:০০ পূর্বাহ্ন


নির্বাচন করা নয়, বিএনপি’র উদ্দেশ্য নির্বাচনকে বিতর্কিত করা : তথ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার : তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘নির্বাচন করা নয়, বিএনপি’র উদ্দেশ্য নির্বাচনকে বিতর্কিত করা এবং এর মাধ্যমে গণতন্ত্রের চলার পথকে বাধাগ্রস্ত করা।’ 

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। 

বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জোটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রখ্যাত অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম। 
 
প্রয়াত আওয়ামী নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব বলেছেন- আমরা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি, নির্বাচন যে সুষ্ঠ হয় না সেটি দেখানোর জন্যে। অর্থাৎ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনকে বিতর্কিত করা। তারা যে নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবে না, এটি তারা এখনই অনুধাবন করতে পারছেন। এবং তিনি সেটি খোলসাও করেছেন যে, তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনটাকে বিতর্কিত করা।’

ড. হাছান বলেন, ‘ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব আরেকটি কথা বলেছেন, রাস্তায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলে ১০ জনের ৯ জনই না কি সরকারের বিপক্ষে বলবে। আমি নিশ্চিত, তিনি নয়া পল্টনের রাস্তায় তাদের দলের যে কর্মীরা দাঁড়িয়ে থাকেন, তাদের কথাই বলেছেন। কারণ তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলেই শুধু সে রকম উত্তর পাওয়া যেতে পারে।’ 

‘প্রকৃতপক্ষে আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দেশ পরিচালনা করছেন, তা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বে অনন্য জনপ্রিয়তা লাভ করেছে’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অপরদিকে, আজকে যদি রাস্তায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করা হয়, বিএনপির নেতৃত্ব কিভাবে দল পরিচালনা করছে, শতকরা ৯৫ জন বলবে তারা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিএনপি’র উদ্দেশ্যে বলেন, আমি তাদেরকে অনুরোধ জানাবো, নির্বাচনকে বিতর্কিত করার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। বরং আপনারা জনগণের কাছে যান, আপনাদের কর্মসূচি, ঢাকায় আপনারা কি করতে চান, সেটি নিয়ে জনগণের কাছে উপস্থিত হোন। জনগণকে যদি বুঝাতে সমর্থন হয় তাহলে আপনাদের বরং জয় হবে, এই লক্ষ্য নিয়েই নির্বাচন করা উচিত বলে আমি মনে করি।’ 

‘সেই কারণে দুই একদিন আগে তাদের দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেছেন, হঠাৎ করে সরকারের পতন ঘটবে’ স্মরণ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এই কথার মাধ্যমে এটিই তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবকে বলবো, ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ হবে না। আসুন সবাইকে নিয়ে গণতন্ত্রকে সংহত ও শক্তিশালী করি। আপনাদের মতমত নিয়ে জনগণের কাছে হাজির হোন। দয়া করে গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করবেন না।’

‘উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা পূর্ববর্তী-পরবর্তী সময়ে বহু রাজনীতিবিদ আদর্শের জন্যে জীবন দিয়েছেন’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘জাতীয় চারনেতার কাছে প্রস্তাব ছিল, ভাইস প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার, তারা আপোষ করলে বেচে যেতেন, কিন্তু তারা বঙ্গবন্ধুর রক্তের সাথে বেঈমানী করেন নাই। সুতরাং রাজনীতি হচ্ছে একটি ব্রত। আজকে অনেক রাজনীতিবিদরা এগুলো ভুলে গেছে। রাজনীতিতে আজকে যে অবক্ষয়, সেই অবক্ষয়ের সূচনা করে জিয়াউর রহমান।’

‘পঁচাত্তরের পরে জিয়াউর রহমান রাজনীতিবিদদেরকে মৌসুমে যেমন খেলোয়াড় কিনে নেয়া হয় এবং সেটার জন্য বিট হয়, জিয়াউর রহমান ঠিক একই কায়দায় দেশের কিছু সুবিধাবাদি রাজনীতিবিদদের কিনে নিয়েছেন, তাদেরকে নিয়েই দলটি পরিচালিত হয়’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘তাদের সবার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বলতে চাই, বিএনপি’র অনেকেই জিয়াউর রহমানের হাটে বিক্রি হওয়া রাজনীতিবিদ।’

প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের একনিষ্ঠতার কথা স্মরণ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেন এ আটকের পর শেষ পর্যন্ত জননেত্রীকে মুক্ত না করা পর্যন্ত তিনি যেভাবে বিশ্বস্ততার সাথে দলের দায়িত্ব পালন করেছেন, সে কারণে তাকে পরে আবার তাকে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে, বিশ্বস্ততার সাথে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সবসময় মিতভাষী, মিতভোজী ছিলেন। তার সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা হয় প্রকৃতপক্ষে ২০০৭ সালে। আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ২০০২ সাল থেকেই আছি, তারপরও এর আগে তার সাথে এত ঘনিষ্ঠতা আমার সাথে ছিল না।’

‘আশরাফ ভাইয়ের কাছ থেকে এবং তার পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের জীবন থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘রাজনীতি একটি ব্রত, দেশ সেবা, জনসেবার ব্রত হচ্ছে রাজনীতি। রাজনীতির একমাত্র লক্ষ্য ক্ষমতায় যাওয়া নয়, রাজনীতির লক্ষ্য হচ্ছে আমি যে আদর্শে বিশ্বাস করি, সেই আদর্শকে লালন করে, সেই আদর্শের আলোকে আমি সমাজে পরিবর্তন ঘটাতে চাই। সেটির প্রতি নিষ্ঠাবান থেকে, মানুষের প্রতি অবিচল থেকে, জনসেবা ও দেশসেবা করার লক্ষ্যে সংগ্রাম করা হচ্ছে রাজনীতি।’


   আরও সংবাদ