ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ ফাল্গুন ১৪৩২, ৯ জ্বমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

১৮ বছরেও বিচার হয়নি রমনা বটমূলে বোমা হামলার


প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ পূর্বাহ্ন


১৮ বছরেও বিচার হয়নি রমনা বটমূলে বোমা হামলার

রমনা বটমূলের পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় ১৮ বছর পার হলেও এখনও নিষ্পত্তি হয়নি ওই ঘটনায় করা দুইটি মামলা। একই ঘটনায় ২০১৪ সালে দায়ের করা হত্যা মামলার রায় হিসেবে বিচারিক আদালত ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। কিন্তু হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিল শুনানি থমকে আছে দুই বছরের বেশি সময় ধরে।

মামলাটি বর্তমানে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির অপেক্ষায় আছে। বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি এটর্নি জেনারেল মো. মনিরুজ্জামান বলেন, মামলাটি বর্তমানে এই বেঞ্চের কার্যতালিকায় (কজলিস্ট) আছে।

এ ঘটনায় হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ জঙ্গি মুফতি আবদুল হান্নান (ইতোমধ্যে অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর) ও অপর ১৩ জঙ্গিকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের হয়। চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন মুফতি হান্নানসহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।

মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা আকবর হোসেন, মুফতি আবদুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মাওলানা আরিফ হাসান সুমন।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আবদুর রউফ ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত তাজউদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল হাই, শফিকুর রহমান ও আবু বকর ওরফে সেলিম হাওলাদার পলাতক। আর বাকিরা কারাগারে।

মামলাসূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৩ জুন বিচারিক আদালত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করে। এরপর ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের জেল আপিল ও ফৌজদারি আপিলের শুনানির জন্য মামলাটি হাইকোর্টে আসে। এরপর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি শহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স শুনানির শেষ পর্যায়ে আসার পর আদালতের এখতিয়ার পরিবর্তন হয়।

এরপর মামলাটি পাঠানো হয় হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে। ওই বেঞ্চেও মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি। বর্তমানে মামলাটি বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুসের নেতৃত্বে অন্য বেঞ্চে আছে।

উল্লেখ্য, পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান ‘ইসলামবিরোধী’ বিবেচনা করে ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণে বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় ঘটনাস্থলেই ৯ জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মারা যায় একজন। এ ঘটনায় রাজধানীর নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। ঘটনার প্রায় ৮ বছর পর ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আলোচিত এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা বারবার পরিবর্তন, সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল, বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও তদন্ত কর্মকর্তাদের আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসার কারণে বিচার শুরু হতে দেরি হয়। পর্যায়ক্রমে থানা, ডিবি ও সিআইডি পুলিশে মামলার তদন্তে যায়। মামলার অষ্টম তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ ২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দুটি মামলারই অভিযোগপত্র একসঙ্গে দাখিল করা হয়। পরে বিচারের জন্য মামলা দুটি ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে যায়।


   আরও সংবাদ