প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন
চৌগাছা ( যশোর) প্রতিনিধি : যশেরের চৌগাছায় চারদিন পর দুই শিশু উদ্ধার করা হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছেন মা। বুধবার চৌগাছা উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালের সাইকেল গ্যারেজ থেকে ছেলে সাগর হোসেন সাফিন (৫) ও মেয়ে মোহনা আক্তার জুলেখা (২০ মাস) উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বাড়ি থেকে দুই শিশু সন্তান নিয়ে নিখোঁজ হন সাগরী খাতুন (২৩)। ৪ দিন পর বুধবার সকালে চৌগাছা উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালের সাইকেলগ্যারেজ থেকে ছেলে সাগর হোসেন সাফিন ও মেয়ে মোহনা আক্তার জুলেখা কাঁদতে দেখে গ্যারেজের দায়িত্বে থাকা মফিজুর রহমান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার লাকিকে জানান। তিনি বিষয়টি থানা পুলিশ ও গণমাধ্যম কর্মী সাংবাদিকদেরকে জানান।
পরে পুলিশ শিশু দুটিকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে থানায় নেন। এরই মধ্যে সংবাদ পেয়ে গ্রাম থেকে বাচ্চাদুটি বাবা, দাদা, দাদি চাচাসহ স্বজনরা হাসপাতালে এসে পৌছান। উদ্ধার সাফিন (৫) ও জুলেখা (২০ মাস) যশোরের চৌগাছা উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের হায়াতপুর গ্রামের আক্তারুল ইসলামের সন্তান।
হাসপাতালে সাগরী খাতুনের স্বামী আক্তারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গত রবিবার (২৬ সেপ্টম্বর) দুইছেলে-মেয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে আমার স্ত্রী সবার চোখফাকি দিয়ে কোথাও চলে যায়। তিনদিন ধরে সাগরীর বাবার বাড়ি উপজেলার স্বরুপদহ ইউনিয়নের চুটারহুদা গ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে খুঁজাখুজি করেও না পেয়ে মঙ্গলবার চৌগাছা থানায় সাধারণডায়েরী করি। এরপর স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে এসে আমার ছেলে-মেয়েকে পুলিশ হেফাজতে পাই। স্বামী, শশুর ও শাশুড়ির ধারণা সাগরীর অন্য কোন ছেলের সাথে স¤পর্ক আছে। সেই সূত্রেই হয়তো সে চলে গেছে।
সন্তানদের কোলে নিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে আক্তারুল জানান, একটা মোবাইল নাম্বারে মাঝে মধ্যে কথা বলতো।আমি এ নিয়ে তাকে মাঝে মধ্যে ঝগড়াঝাটিও করেছি। একদিন মেরেছিও। তবে গত কোরবানীর ঈদে ওর বাপের বাড়ি থেকে ঘুরে আসার পর সে আমাকে চলে যাওয়ার হুমকিও দেয়। তিনি বলেন, যাওয়ার সময় বাড়ি থেকে নগদ ২০ হাজার টাকাসহ ভালো কাপড় চোপড় গহনা সব নিয়ে গেলেও বাচ্চাদের যে পোশাকে নিয়ে গিয়েছিলো সেই পোশাকেই রয়েছে। আক্তারুল ইসলামের মা মাজেদা বেগম বলেন, বউমা খুব সুন্দরী। মাঝে মাঝে আমাকে এসে বলতো মা, গ্রামে মেয়ে দেখতে আসা লোকেরা আমাকে বলেছে তোমার তো বিয়ে হয়নি আমি দুসন্তানের মা বললেও কেউ বিশ্বাস করে না।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাগরীর একজন ভাসুর (স্বামীর বড়ভাই) বলেন, কয়েকদিন আগে সে তার নিজের ভাসুরের স্ত্রীর স্বর্ণের গহনা চুরি করে বাজারে বিক্রি করে। সেটা ধরা পড়ে যেয়ে স্বীকার করে। সেই টাকা তার কাছে ছিলো। সাইকেল গ্যারেজের দায়িত্বে থাকা মফিজুর রহমান জানান, সকালে এসে বাচ্চা দুটিকে বসে থাকতে দেখি। ভেবেছিলাম তাদের মা হয়তো বসিয়ে রেখে ডাক্তার দেখাতে গেছেন। প্রায় একঘন্টা পরে সাড়ে নয়টার দিকে বাচ্চা দুটি খুব কান্নাকাটি করতে দেখে ম্যাডামকে (উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা) জানা।
এসময় ওদেরকে স্থানীয় কয়েকজন জিজ্ঞেস করলে ছেলেটি তার বাবার নাম আক্তারুল ইসলাম আর বাড়ি হায়াতপুর বলতে পারে। তখন তারা পরিচিতজনদের মাধ্যমে পরিবারকে খবর দেয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার লাকি বলেন, সকাল নয়টার দিকে সাইকেল গ্যারেজের দায়িত্বে থাকা মফিজুর জানায় সেখানে দুটি বাচ্চাকে তার মা রেখে চলে গেছে। তারা খুব কান্নাকাটি করছে। তখন বিষয়টি আপনাকে (এ প্রতিবেদক) ও থানা পুলিশকে জানাই।
চৌগাছা থানার এসআই রাজেশ কুমার বলেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছ থেকে মুঠোফোনে সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে এসে তাদের উদ্ধার করি। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে থানার সাধারণ ডায়েরী মূলে স্থানীয় ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সুবজ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।