প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর, ২০২১ ১০:২৫ পূর্বাহ্ন
রহিদুল খান : যশোর পাসপোর্ট অফিসে গত বিশ দিনে আন্তর্জাতিকমানের পাঁচ হাজার ই-পাসপোর্ট ছাপা হয়েছে। খুলনা বিভাগের দশ জেলার মানুষ এ সুবিধা ভোগ করছে। বাংলাদেশের ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানসহ অন্যান্য দেশে এ জাতীয় পাসপোর্ট ছাপা হয় না বলে সূত্রটি জানিয়েছে। চলতি মাসেই যশোর পাসপোর্ট অফিসে চার হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দশ বছর মেয়াদি বিভাগীয় এ কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে।
যশোর পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, দেশে হাতে লেখা পাসপোর্টের কার্যক্রম শেষ হবার পর শুরু হয় মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি)। ২০২০ সালের জুন মাস নাগাদ শেষ হয়ে যায় ডিজিটাল এ পাসপোর্টের কার্যক্রম। এরপর দেশ ই-পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করে। বিশ্বের ১২০টি দেশে বর্তমানে ইলেক্ট্রনিক্স পাসপোর্টের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমে প্রথম। এ তালিকায় বাংলাদেশ সারাবিশ্বের মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। এ কারণে ই-পাসপোর্টে বাংলাদেশের নাম লাল রঙে ছাপা রয়েছে। অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি না থাকায় অন্যান্য দেশের ই-পাসপোর্টে সে সব দেশের নাম কালো রঙে ছাপা হয় বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মিয়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে এখনও ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়নি। এদিক থেকে বাংলাদেশ অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। এছাড়া উন্নত দেশগুলোতে ই-পাসপোর্টধারীদের জন্য আলাদা গেট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যে গেটে এই পাসপোর্ট ধরলেই অটো স্ক্যান হয়ে সব তথ্য ঠিক থাকলে গেট খুলে যায় ও তিনি এয়ারপোর্টের বাইরে চলে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে তাকে কোন ইমিগ্রেশন করতে হয় না।
যশোর অফিস সূত্রে জানা যায়, স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালের ২৮ জুন যশোর অফিসে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের শুরু হয়। এরপর চলতি বছরের গত ৪ অক্টোবর যশোর অফিসে ই-পাসপোর্ট ছাপা কার্যক্রম শুরু হয়। এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধুরী। এরপর গত কুড়িদিনে যশোরে পাঁচ সহস্রাধিক ই-পাসপোর্ট ছাপা হয়েছে। এখানে গড়ে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয়শ’ পাসপোর্ট ছাপা হচ্ছে। যদিও গত দশদিন যান্ত্রিক ক্রটির কারণে ছাপা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। রোববার এখানে সর্বশেষ ছাপা হয়েছে ৫৪০টি পাসপোর্ট বলে সূত্রটি জানিয়েছে। এ কাজের তদারকির জন্য রয়েছেন তিনজন বিশেষজ্ঞ ও জার্মানির একজন প্রতিনিধি। তাদের তত্ত্বাবধানে মুদ্রণের সমস্ত কাজ পরিচালিত হচ্ছে।
তবে এ কাজের জন্য লোকবল সঙ্কটে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। এ জন্য অফিসে নতুন কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী নিয়োগ করা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, বিভাগের দশ জেলার পাসপোর্ট যশোরে ছাপা হওয়ার কারণে এ অঞ্চলের মানুষ সুবিধা ভোগ করছে। তাদেরকে আর ঢাকার অপেক্ষায় বসে থাকতে হচ্ছে না। যশোর থেকে মুদ্রণ করা পাসপোর্ট স্ব স্ব জেলায় পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। অবশ্য এ পাসপোর্টের জন্য হাতে লেখা কাগজের ব্যবহার নেই বললেই চলে। পুলিশ ভেরিফিকেশন ও টাকা জমা থেকে শুরু করে এ সংক্রান্ত সবকিছুই করা হয় অনলাইনে।
ই-পাসপোর্ট হলো একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যাতে এমবেডেড ইলেট্রনিক্স মাইক্রোপ্রসেসর চিপ রয়েছে। এ চিপের মধ্যে রয়েছে বায়োমেট্রিক তথ্য যা পাসপোর্টধারীর পরিচয় প্রমাণের জন্য ব্যবহার করা যায়। এতে রয়েছে ব্যবহারকারীর একাধিক ছবি, দশ আঙ্গুলের ছাপ, চোখের আইরিশসহ তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক যাবতীয় তথ্য। যার মাধ্যমে পাসপোর্টধারীকে সহজে শনাক্ত করা যায়। এ কারণে পাসপোর্ট জালিয়াতির কোন সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে যশোর পাসপোর্ট অফিসের উপ পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ৪ অক্টোবর থেকে যশোর পাসপোর্ট অফিসে ছাপা সংক্রান্ত বিভাগীয় কার্যক্রম শুরু হয়। পাসপোর্ট ছাপার যে কার্যক্রম আগে ঢাকায় হতো, সেটি এখন থেকে যশোরে করা হচ্ছে। মাঝে একটু সমস্যা হলেও বর্তমানে স্বাভাবিক নিয়মে যশোরে পাসপোর্ট মুদ্রনের কাজ চলছে বলে তিনি জানান।
যশোরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব চৌধুরী জানিয়েছিলেন, চার হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দশ বছর মেয়াদি বিভাগীয় এ প্রকল্প জনগুরুত্ব বিবেচনায় যশোরে স্থাপন করা হয়েছে। যেহেতু এখানে আইটি পার্কে ডাটা সেন্টার রয়েছে, সেহেতু ডিজাস্টারে এটি ব্যাকআপ হিসেবে কাজ করবে ও তথ্য আদান প্রদান সহজ হবে। তিনি বলেন, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ঢাকার বাইরে এটিই প্রথম প্রকল্প, যা যশোরে স্থাপন করা হয়েছে। এ প্রকল্প থেকে খুলনা বিভাগের দশ জেলার মানুষ উপকৃত হবে।
রহিদুল খান