প্রকাশ: ২৮ অগাস্ট, ২০২৫ ০৮:০৭ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় আছি বলে জানিয়েছেন র্যাব মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি একেএম শহিদুর রহমান। তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সভা হবে। সেখানে কার কি দ্বায়িত্ব, সেই সম্পর্কে নির্দেশনা পাওয়া যাবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যা ব মিডিয়া সেন্টারে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে এক সংবাদ সন্মেলনে তিনি একথা বলেন।
এ সময় উপস্থিতি ছিলেন র্যাব অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল ইফতেখার আহমেদ, আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী এবং র্যাব ১০–এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
জাতীয় নির্বাচনে র্যাবের প্রস্তুতি জানতে চাইলে অতিরিক্ত আইজিপি শহিদুর রহমান বলেন, এই মুহুর্তে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় আছি। নির্দেশনার আলোকে দ্বায়িত্ব পালন করবে র্যাব। এর পাশাপাশি র্যা বের যারা আছেন তাদেরকে নির্বাচনী আইনকানুন বিষয়ে কিছু অভ্যন্তরীন প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। এই মুহুর্তে নির্বাচনের প্রস্তুতি হলো আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা। আশা করি একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যে ধরনের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি ও পরিবেশ প্রয়োজন, তা তৈরিতে সক্ষম হবো।
গজারিয়ায় পুলিশ ক্যাম্পে হামলায় গ্রেপ্তার ৩
র্যা বের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি একেএম শহিদুর রহমান বলেন, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় পুলিশ ক্যাম্পে ডাকাতদের হামলার ঘটনায় ডাকাতদলের প্রধান ‘পিয়াস নয়ন গ্রুপ’ এর অন্যতম সদস্য নয়নের ছোট ভাই রিপনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের ঢাকা ও গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ও ঘটনার পরই র্যাবের নেতৃত্বে থানা পুলিশ, নৌ পুলিশ এবং কোস্টগার্ডের সদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়েছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি গাজীপুরেও অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গাজীপুর মেট্রো এলাকায় টহল জোরদার করেছে র্যা ব। অল্প সময়ে গাজীপুরেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, দেশের অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতোই র্যা বও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে গত ২৫ আগস্ট মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় পুলিশ ক্যাম্পে ডাকাত দলের হামলার ঘটনায় র্যা ব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এর সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
অতিরিক্ত আইজিপি একেএম শহিদুর রহমান বলেন, নির্বাচনের আগে পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্রসহ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালায় র্যা ব ২ ও ১০। এ সময় গত ২৭ আগস্ট রাজধানীর কদমতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে শুকুর হোসেন ওরফে শ্যুটার শুক্কুরকে দুটি অস্ত্র ও ১২ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যা ব–১০। অস্ত্রের গায়ে নাম্বার মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে অপরাধীরা। ওই অস্ত্র দু’টির একটি পুলিশের লুন্ঠিত অস্ত্র হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ধারণা করছি। তবে গুলির পিছনে ‘বিপি’ অর্থাৎ ‘বাংলাদেশ পুলিশ’ লেখা আছে। ফরেন্সিকে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এর আগে ১৭ আগস্ট সাইদুল ইসলাম ওরফে স্বপনসহ পাঁচ জনকে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর এলাকা থেকে মোহাম্মদপুর থানার লুন্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ গ্রেপ্তার করে র্যা ব–২।
র্যা ব জানিয়েছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে উদ্ধারকৃত লুন্ঠিত অস্ত্রের সংখ্যা ৩২৩টি (পুলিশ ২৩১টি, র্যা ব ৯৩টি), ১৯ হাজার ৩০৪ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং ১৫০টি ম্যাগাজিন। পাশাপাশি মাদকবিরোধী অভিযানও অব্যাহত রয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যা ব ডিজি বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের তথ্য পুলিশ সদরদপ্তর সংরক্ষণ করে। প্রতিদিন পুলিশ সদরদপ্তরের কন্ট্রোল রুমে যৌথ বাহিনী সহ সব বাহিনীর উদ্ধারকৃত অস্ত্রের তথ্য জমা হয়। তারা এই তথ্য সংরক্ষণ করে। এছাড়া যারা অস্ত্র নিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে পূর্বেও বেশ কিছু মামলা রয়েছে। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা প্রকৃত সন্ত্রাসী।
মাদক দমনে সক্রিয় র্যা ব
মাদকের অপব্যবহার বস্তি এলাকায় বেশি। এ নিয়ে কাজ করছি। এটি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করছি। দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এটি অন্যতম চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। যখন ১৪ থেকে ১৮ বছরের কিশোরদের দেশিয় অস্ত্রসহ ছিনতাইয়ের সময় গ্রেপ্তার করি, আমরাও কষ্ট পাই। তাদের যাদের স্কুল-কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার কথা। কিন্তু খুবই দুঃখজনক এসব তরুণ কিশোরকে গ্রেপ্তার করতে হয় এবং মামলার আসামী হিসেবে কোর্টে চালান দিতে হয়। এদের সংখ্যা কিন্তু একেবারে কম না। তাদের মামলা দিয়ে জেলে পাঠাই, আবার জামিন নিয়ে এসে ওই পেশায় যুক্ত হয়।
র্যা বের ডিজি বলেন, মাদক দমনে র্যা ব চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং সিআইডিও তদন্ত করছে। মাদকের পিছনে যারা বড় বড় অর্থ বিনিয়োগকারী আছে, তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনের মামলার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করার এখতিয়ার সিআইডির আছে। সম্প্রতি সিআইডি কক্সবাজার এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যারা মাদক কারবারীর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা করেছে এবং তদন্তাধীন আছে। এটি যদি আরও জোরদার করা যায়, হয়তো এই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট এই দুই মাসে ৭৪টি অবৈধ অস্ত্রসহ ৩৬ জন আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ৪৪৬ জন, নারী নির্যাতনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এবং মাদক মামলায় ৭৪০ জন আসামি গ্রেপ্তার করেছে র্যা ব। গত এক মাসে প্রায় ১৫ লাখ ৩৪ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে র্যা ব। এছাড়া মাদক মামলার অভিযুক্ত এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামী খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। গত দুইদিনে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত মাদক মামলার দুই আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ডিজি বলেন, কেবলমাত্র গ্রেপ্তার, মামলা, কোর্টে পাঠানো, আবার বেল নিয়ে ফিরে আসা— এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে অপরাধ দমন করা একটু কঠিন। এদিকে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতেও একটু সময় লাগে। মাদকের মামলার তদন্ত দুই-তিন মাসের মধ্যে শেষ করা হয়। এরপর অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে অপরাধের প্রবণতা আরেকটু কমতো। কিন্তু এই শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়াটি কিছুটা দীর্ঘসূত্রিতার কারণে সেটা হচ্ছে না।