প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১২:১৬ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে অনুষ্ঠিত ডিজে পার্টিগুলোর আড়ালে গড়ে উঠেছিল ভয়ংকর এক মাদক সরবরাহ চক্র। ইংল্যান্ডে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফেরত কিছু তরুণ প্রযুক্তি দক্ষ সদস্য এই চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। চকলেটের প্যাকেটের ভেতর লুকিয়ে ডাকযোগে আনা হতো বিদেশি পার্টি ড্রাগ, যা পরে বিতরণ করা হতো উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীদের মাঝে।
গতকাল সোমবার রাজধানী সেগুনবাগিচায় ডিএনসির সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় । সেখানে ডিএনসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা চক্রটির পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার এবং বিপুল পরিমাণ মাদক, নগদ টাকা ও ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম জব্দের তথ্য জানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)।
গ্রেপ্তাররা হলেন— জুবায়ের (২৮), জি এম প্রথিত সামস (২৫), আসিফ মাহবুব চৌধুরী (২৭), অপূর্ব রায় (২৫) ও সৈয়দ শাইয়ান আহমেদ (২৪)।
ডিএনসির মহাপরিচালক হাসান মারুফ বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাদের টিম রাজধানীর মোহাম্মদপুর, সেগুনবাগিচা ও পল্টন এলাকায় অভিযান চালায়। এতে প্রথমে তিনজন মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি ও তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তীতে আরও দুজনকে আটক করা হয়। অভিযানে যুক্তরাজ্য থেকে আনা নিষিদ্ধ এমডিএমএ (এক্সটাসি/মলি/হ্যাপি) সহ মোট ৩১৭টি ট্যাবলেট, ১ কেজি ৬৭৬ গ্রাম কুশ, ৫০ মিলিলিটার কিটামিন, ২৫০ গ্রাম গাঁজা, ৬টি মোবাইল ফোন, ১টি ল্যাপটপ এবং নগদ ৭ লাখ ১১ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জুবায়ের (২৮) নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে প্রযুক্তিদক্ষ, উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান এবং ইংলিশ মিডিয়াম ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আরও কয়েকজন মিলে একটি চক্র গড়ে তোলে। তারা কুশ, গাঁজা, এমডিএমএ ও কিটামিনসহ নানা ধরণের পার্টি ড্রাগ উন্নত দেশ থেকে পার্সেলযোগে দেশে এনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ডিজে পার্টি ও অভিজাত সমাজে সরবরাহ করছিল।
তদন্ত কর্মকর্তারা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে জানতে পারেন, সম্প্রতি যুক্তরাজ্য থেকে ডাকযোগে একটি বড় চালান দেশে আসছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে গত রোববার পল্টনের পুরাতন ডাক ভবনের বৈদেশিক ডাক শাখায় তল্লাশি চালিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে আসা একটি এয়ার পার্সেল জব্দ করা হয়। কাগজের কার্টনের ভেতরে বিদেশি ব্র্যান্ডের চকলেটের নিচে বাবল র্যাপে মোড়ানো লালচে রঙের এমডিএমএ ট্যাবলেটগুলো লুকানো ছিল।
তিনি বলেন, পার্সেলটির মালিক চক্রের মূল হোতা জুবায়েরকে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকা থেকে আটক করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জি এম প্রথিত সামস (২৫)কে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার কাছ থেকেও এমডিএমএ, গাঁজা ও কিটামিন উদ্ধার হয়। পরে জুবায়েরের তথ্যের ভিত্তিতে অপূর্ব রায়কে গাঁজাসহ, অপূর্বের তথ্য অনুযায়ী সৈয়দ শাইয়ান আহমেকে গাঁজা ও এমডিএমএ-সংক্রান্ত প্রমাণসহ এবং এই চারজনের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে আসিফ মাহবুব চৌধুরীকে আটক করা হয়।
মহাপরিচালক আরও বলেন, গ্রেপ্তারদের মোবাইল ফোন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তারা হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন এনক্রিপ্টেড অ্যাপ ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা করত। এই চক্রের সদস্যরা মূলত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থী এবং তাদের মধ্যে কয়েকজন ইংল্যান্ডে পড়াশোনা শেষে সেখান থেকে মাদক পাঠানোর ব্যবস্থাও করত। তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য মিলেছে, যাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে।