প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১৬:১৩ অপরাহ্ন
যশোর থেকে খান সাহেব : যশোরের চৌগাছায় পতিত পানিতে ডোবা জামিতে নালা কেটে শিম চাষ করে লাভবার হচ্ছেন কৃষকরা। ভালো ফলন আর দাম বেশি হওয়ায় তারা খুশি। এ উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া শিম চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সে জন্য ধানের জমিতে মাঝে মাঝে নালা কেটে মাটি উঁচু করে নিচু জমিতে এখন শিম চাষ করছেন এসব কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছরে শিম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু অনুকূল আবহাওয়া না থাকায় এবছর গতবারের তুলনায় ১৩০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ কম হচ্ছে।
তবে এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া বিবেচনায় ‘রূপভান’ ও ‘ইফশা’ নামের দুটি জাতের শিম বেশি চাষ হচ্ছে। সাধারণত বীজ রোপণের ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে শিমের লতায় ফুল আসতে শুরু করে। অতি বর্ষা না হলে প্রায় ৫ মাস স্থায়ী হয় শিমের মাচা।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ঘুরে দেখা গেছে যে মাঠের মাঝে শিমের ফুলে ফলে শোভা পাচ্ছে শিমের মাচা। নীল-বেগুনি রঙের শিম ক্ষেতগুলো শরতের আকাশের সঙ্গে মিতালীর নয়ানাভিরাম দৃশ্য। শিমের রুগ্ন ফুল ছাড়িয়ে ফেলা, ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করা এবং কীট পতঙ্গ প্রতিরোধসহ নানা কাজে সময় ব্যস্ত রয়েছেন উপজেলার এসব শিম চাষিরা।
শিমের ক্ষেতে কথা হয় বুন্দলিতলা গ্রামের শিম চাষি আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘ এ ভাবে প্রায় ৮-৯ বছর ধরে আমি এভাবে শিম চাষ করে আসছি। কম বেশি প্রতি বছরই লাভবান হচ্ছি। এ বছরও বাজারে শিমের দাম ভালো। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা দরে। এ বছরে ১ বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৫-২০ হাজার টাকা। মাত্র দুইদিন শিম বিক্রি করে পেয়েছি ৭ হাজার টাকা। অতি বর্ষা না হলে আশা করছি ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করতে পারব’।
জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের স্বপন আলী জানান, একবিঘা জমিতে আমি এ ভাবে নালা কেটে পতিত জমিতে জমি চাষ করছি। আমার এ বছর খরচ হয়েছে ১০-১২ হাজার টাকা। তিনি বিক্রি করেছেন ৩০-৩৫ টাকার। তিনিও আশা করছেন এ বছরে যদি কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হয় তাহলে ৭০-৮০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন।
একই এলাকার চাষী জাহাঙ্গীর আলম, শুকুর আলী, মহিউদ্দীন, হাফিজুর রহমানসহ আরও কয়েকজন চাষী বলেন, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় শিম চাষে আমরা বেশ লাভবান হব।
এ বিষয়ে উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রইস উদ্দিন বলেন, এখানকার মাটি শিম চাষের জন্য উপযোগী। শিম চাষের প্রধান বাধা অতিরিক্ত বর্ষা। বর্ষার পানি ক্ষেতে জমে থাকলে স্যাঁতসেতে মাটিতে শিম গাছের গোড়ায় নেমাটট (কৃমি জাতীয় পোকা) আক্রমণ করে। নেমাটটের আক্রমণ গাছের শিকড় নষ্ট করে দেয়। যে কারণে গাছ মারা যেতে পারে।
ছাড়া অতিরিক্ত বর্ষা হলে শিমের ফুল পচে কুশি গজানোর ক্ষমতা হারায়। তাই শিমগাছের গোড়া পচা রোগ দেখা দিলে ছত্রাক নাশক বা পানিতে পরিমিতভাবে বোরিক এসিড মিশিয়ে স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যায় বলে তিনি বলেন।