ঢাকা, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৬ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

শার্শায় পাটের ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে চাষীদের মুখে


প্রকাশ: ৩ অক্টোবর, ২০২০ ১১:১৮ পূর্বাহ্ন


শার্শায় পাটের ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে চাষীদের মুখে

বেনাপোল থেকে আশানুর রহমান : যশোরের শার্শায় এবার পাটের ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে। সেই সঙ্গে পাটখড়ির দাম যুক্ত করলে প্রতিবিঘায় এখন কৃষকের লাভ হচ্ছে ১৮ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা।

কৃষকরা বলছেন, বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে। এতে প্রতি বিঘায় শুধু পাট বিক্রি করেই কৃষক লাভবান হচ্ছেন ১৩ থেকে ১৭ হাজার টাকা।

বেসরকারি পাটকলগুলো এ অঞ্চলের পাটের একমাত্র ক্রেতা। শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল বলেন, এবার উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। পাট চাষের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির বিপরীতে চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৬০০ হেক্টর। যা থেকে পাট উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৮৮০ মেট্রিকটন।

“গত বছর পাটের উপযুক্ত দাম পাওয়ায় এ মৌসুমে কৃষকরা পাটের আবাদ বেশি করেছে।”

কিন্তু এর আগে গত কয়েক বছর পাটের দাম না পাওয়ার কারণে কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় সে সময় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি বলে মনে করেন তিনি।

উপজেলার ধলদা গ্রামের পাটচাষি আব্দুল হাসেম“গত বছরের চেয়ে এবার ভাল দামে পাট বিক্রি করিছি। মোটামুটি ভাল পাট ২০০০-২৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গতবারের তুলনায় ৫০০-৬০০ টাকা বেশি। এ বছর ভাল দাম পাচ্ছি তার জন্য ভাল লাগছে। পাটের সুদিন ফিরে এসেছে।”

বেনাপোল বাজারের ছোট আচড়া মোড়ে পাট ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর বলেন, “নতুন ওঠা পাট আমরা বিভিন্ন দামে কিনিছি। ধূসর-কালো রঙের পাট ১৮০০-২০০০ টাকা, সোনালি রঙের পাট ২১০০-২৩০০ টাকা পর্যন্ত কৃষকের কাছ থেকে আমরা কিনছি।

“গতবারের তুলনায় এবার পাটের দাম ভাল হওয়ায় কৃষকও খুশি। তবে কিছুদিনের মধ্যে পাটের দাম আরও বাড়তে পারে।”

বারোপোতা গ্রামের পাটচাষি জোব্বার বলেন, “পাটের পাশাপাশি পাটকাঠিরও এবার দাম ভাল। দেড় বিঘা জমিতে আবাদ করে ১২ মণ পাট পাইছি। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকার মতো।

“শুধু পাটকাঠি বিক্রি করিছি নয় হাজার টাকা।খরচ কম হইছে। দাম ভাল পাচ্ছি। এবারের পাটের দামে আমরা খুশি।“ 

বাগআচড়া বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা কৃষক আনারুল বলেন, এবার ২ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করে ২৫ মণ ফলন পেয়েছেন। প্রতিমণ পাট বিক্রি ২৪০০ টাকা দরে বিক্রি করে বেশ ভাল লাভ হয়েছে।

"সরকারি পাটগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছুটা হতাশ হয়েছিলাম। কিন্তু বাজারে পাটের ভালো দাম পেয়ে সেই হতাশা কেটে গেছে।"

উপজেলার ঘিবা গ্রামের জাইদুল হোসেন এবার ৩ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। ফলন পেয়েছেন বিঘায় ১০-১১ মণ করে।

জামতলা বাজারের কাশেম বলেন, বাজারে গত এক মাসের ব্যবধানে পাটের দাম মণে এক হাজার টাকা বেড়েছে। আগে ১৮-১৯’শ টাকা মণ বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। 

টেংরা বাজারের ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, পাট যখন প্রথম বাজারে উঠেল তখন প্রতিমণের দাম ছিল ১৮০০ টাকা; এখন দিন দিন দাম বেড়েই চলেছে। বুধবারও মানভেদে প্রতিমণ পাট বিক্রি হয়েছে ২১-২৪’শ টাকা।

নাভারন বাজারের পাট ব্যবসায়ী কুরবান আলি জানান, বর্তমান বাজারে প্রতিমণ দেশী পাট ১ হাজার ৮ থেকে ২ হাজার টাকা এবং তোষা পাট ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০  টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত বছরের তুলনায় এবার পাটের ফলনও ভাল। এবার পাটের বাজারদর ও বিভিন্ন মিলে চাহিদা থাকায় চাষীর পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে।

বাজারদর এভাবে থাকলে পাট চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

আকিজ পাটকল, আহাদ পাটকল, আফিল উইভিং জুটমিলসহ খুলনাঞ্চলের বেসরকারি জুটমিলগুলো স্থানীয় বাজার থেকে ফড়িয়া এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সারা বছরের পাট সংগ্রহ করে থাকেন। আফিল গ্রুপের যশোরে আফিল উইভিং জুট মিলের চারটি ইউনিট রয়েছে। 

গ্রুপের পরিচালক মাহবুব আলম লাভলু বলেন, “আমরা প্রতিবছর যশোর ও ফরিদপুর জেলা থেকে পাট সংগ্রহ করে থাকি। এখানকার উৎপাদিত পাটের মান ভাল। এবারও আমরা বিপুল পরিমাণ পাট কিনছি।

যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বীরেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, “যশোরে এবার পাটের ভাল ফলন হয়েছে। কৃষক তার ক্ষেতের পাট বিক্রি করা শুরু করেছেন। দাম ভালো পাওয়ায় তারা দারুণ খুশি। আশা করছি আগামীতে আবাদ বাড়বে।


   আরও সংবাদ